‘আইএনএস অরিহন্ত’-এর সাফল্য ব্যাখ্যায় নরেন্দ্র মোদী। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে। টুইটার
রাফাল নিয়ে ক্রমাগত নরেন্দ্র মোদী সরকারকে আক্রমণ করছেন রাহুল গাঁধী। তার মধ্যেই আজ ভারতে তৈরি নৌসেনার পরমাণু শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ ‘আইএনএস অরিহন্ত’-এর প্রথম টহলদারি অভিযান সম্পূর্ণ হওয়াকে ঘিরে প্রচার চালাল মোদী সরকার। রাজনীতিকদের দাবি, রাফাল নিয়ে অস্বস্তি কাটাতে মোদী সরকার বোঝাতে চেয়েছে, তারা দেশের নিরাপত্তার বিষয়ে কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
অগ্নি ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি ভারতের পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের তৃতীয় পথ হল ‘অরিহন্ত’-এর মতো ডুবোজাহাজ। পরমাণু শক্তিচালিত ডুবোজাহাজকে জ্বালানি ভরার জন্য বার বার বন্দরে থামতে হয় না। ফলে এগুলি দীর্ঘদিন সমুদ্রে নজরদারি এড়িয়ে সক্রিয় থাকতে পারে। তাই স্থল ও আকাশপথের পাশাপাশি জলপথে হামলা চালানোর এই পথকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে সামরিক বাহিনী।
পরমাণু শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্রে নজরদারি চালাতে পারলে তবেই তার কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়। আজ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করে প্রথম টহলদারি শেষ করায় ‘অরিহন্ত’-এর নাবিক, নৌসেনার অন্যান্য সদস্য ও বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানান। পরে নিজের বাসভবনে ‘অরিহন্ত’-এর নাবিকদের সম্মান জানান মোদী। নৌসেনাকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির মতো মোদী মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। মোদীর কথায়, ‘‘ধনতেরাসের আনন্দ আরও বেড়ে গেল। অরিহন্ত ১৩০ কোটি ভারতবাসীকে রক্ষা করবে।’’ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘অরিহন্তের সাফল্যের ফলে জল-স্থল-আকাশে পরমাণু হামলা চালানোর শক্তি হাতে এল ভারতের। কিছু শক্তি পরমাণু শক্তিকে হাতিয়ার করে ব্ল্যাকমেল চালাতে চায়। এই সাফল্য তাদের জন্য উপযুক্ত জবাব।’’ নাম না করে প্রধানমন্ত্রী চিন ও পাকিস্তানকে বিঁধেছেন বলে ধারণা কূটনীতিকদের।
‘অরিহন্ত’ নিয়ে প্রচারের পাশাপাশি রাফাল নিয়েও মুখ খুলেছে সরকার। সরকারের এক শীর্ষ মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘রাহুল গাঁধী রাফালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। কিন্তু যুদ্ধবিমানের দাম কেন বাড়ে তা কি তিনি খতিয়ে দেখেছেন? ক্ষেপণাস্ত্র-সহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জামের জন্যই দাম বেড়ে যায়।’’ সেইসঙ্গে সরকারি সূত্রে ফের দাবি করা হয়েছে, সিবিআই প্রধান অলোক বর্মা রাফাল নিয়ে কোনও তদন্তই শুরু করেননি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছ থেকে রাফাল সংক্রান্ত কোনও ফাইল চায়নি সিবিআই। সিবিআইয়ের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সময়ে কংগ্রেস দাবি করে, রাফাল নিয়ে তদন্ত শুরু করার ফলেই অলোক বর্মাকে সরানো হয়েছে।
তবে ‘অরিহন্ত’-এর সাফল্যের কৌশলগত তাৎপর্যও কম নয় বলে জানাচ্ছেন নৌসেনার অফিসাররা। আমেরিকা, রাশিয়া, চিন, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের পরে ভারতই পঞ্চম দেশ যাদের হাতে এমন ডুবোজাহাজ রয়েছে। ২০১৫ সালে ৯টি পরমাণু শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। তার মধ্যে ‘অরিহন্ত’-সহ তিনটি ডুবোজাহাজ থেকে পরমাণু অস্ত্র ছোড়া যায়।