প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
হিন্দুত্বের রাজনীতিতে ভর করেই যে তিনি উত্তরপ্রদেশে জিততে চান, দু’দিনের কাশী সফর শেষে তা কার্যত স্পষ্ট করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দিল্লি ফেরার আগে কাশীতে উপস্থিত বিজেপি-শাসিত সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের অযোধ্যায় অস্থায়ী রাম মন্দির প্রাঙ্গণে প্রার্থনা করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। লক্ষ্য, রাজ্য জুড়ে হিন্দুত্বের হাওয়াকে গতি দেওয়া।
গত কাল গঙ্গায় ডুব, পুজোপাঠ, বিশ্বনাথ করিডরের উদ্বোধনের পরে আজ সদগুরু সদাফলদেও বিহঙ্গম যোগ সংস্থানের ৯৮তম বার্ষিকী উদ্যাপনে যোগ দিতে ওই আশ্রমে যান মোদী। বক্তৃতায় তুলে ধরেন স্বাধীনতা সংগ্রামে সন্ন্যাসী, ধর্মগুরু, মহারাজদের ভূমিকার কথা।
রাজনীতির অনেকের মতে, গোটা উত্তরপ্রদেশ জুড়েই যোগী আদিত্যনাথ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভের হাওয়া স্পষ্ট। বিজেপির বিরুদ্ধে এসপি নেতা অখিলেশ যাদবের নেতৃত্বে ফের এককাট্টা হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে যাদব ও মুসলিম ভোট। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের জাঠেরাও অখিলেশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিতে বদ্ধপরিকর। দলের একাধিক অভ্যন্তরীণ সমীক্ষাও স্পষ্ট করে দিয়েছে, উত্তরপ্রদেশে কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে চলেছে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে দল ভালই বুঝতে পারছে, ব্রাহ্মণ, রাজপুত, দলিত ও জাটভ ভোটকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসতে না পারলে জেতা কঠিন।
বিভিন্ন শ্রেণির ভোটকে এক সুতোয় বাঁধতে তাই হিন্দুত্বের হাওয়া তুলতে চেয়েছেন মোদী। কাশীর মাটিতে দাঁড়িয়ে মুসলিম আগ্রাসনের ইতিহাস উস্কে দিয়ে বলেছেন, ভারতে ঔরঙ্গজেবকে রুখতে শিবাজির মতো নেতা জন্মেছেন। সালার মাসুদকে রুখতে অস্ত্র ধরেছেন উত্তরপ্রদেশের সুহেলদেবের মতো বীর যোদ্ধা। অনেকের মতে, মুসলিম আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাজা সুহেলদেবের বীরত্বের কথা বলে ওবিসি ভোটারদের মন জয় করতে চেয়েছেন মোদী।
বিজেপি শিবিরের একাংশ বলছেন, এ যাত্রায় পরিকল্পিত ভাবে বেনারসের উন্নয়নকে সামনে রেখেই প্রচারে নেমেছে দল। রামমন্দির তৈরি শুরু হয়ে যাওয়ায় ওই আন্দোলন ঘিরে অতীতে মানুষের যে আগ্রহ ছিল, তা আজ আর নেই। তা ছাড়া রাম মন্দির, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন, কিংবা কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের মতো বিষয়গুলি হিন্দুত্বের জিগিরকে জাগিয়ে তুললেও এ সবের সঙ্গে সংখ্যালঘুদের ক্ষোভ জড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু বিশ্বনাথ করিডর নির্মাণের সঙ্গে সেই অর্থে কোনও বিতর্ক জুড়ে নেই। সেই কারণে প্রচারের ক্ষেত্রে নিজের কেন্দ্র বারাণসীকেই তুরুপের তাস করে এগোনোর পরিকল্পনা নিয়েছেন মোদী।
আজ সকালে উত্তরপ্রদেশে দলের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে বৈঠকে বসেন মোদী। উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা ধর্মেন্দ্র প্রধান, রাজ্য সভাপতি স্বতন্ত্র দেও সিংহ। সূত্রের মতে, বৈঠকে উত্তরপ্রদেশ জয়ের উপরে বিশেষ ভাবে জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল অনেকাংশেই উত্তরপ্রদেশের আসন্ন নির্বাচনের উপরে নির্ভর করছে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি দলীয় নেতাদের সংগঠন মজবুত করার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে নির্দেশ দেন তিনি। রাজ্যওয়াড়ি নতুন কর্মীদের দলে যোগদান, বিশেষ করে বুথভিত্তিক কর্মী নিয়োগের কাজ কতটা এগিয়েছে, তা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিজেপি সূত্রের খবর, বৈঠকে স্থির হয়েছে, মূলত দু’টি বিষয়কে প্রচারে প্রাধান্য দেওয়া হবে। এক দিকে রাজ্যের উন্নয়নের ছবি তুলে ধরা হবে। অন্য দিকে সংখ্যাগুরু ভোটের মেরুকরণের উদ্দেশ্যে হিন্দুত্বের পালে হাওয়া তীব্র করা হবে।