উহানের রেশ মমল্লপুরমেও

বছর দেড়েক আগে প্রথম বার নতুন ধরনের একটি খোলামেলা আলোচনায় বসেছিলেন নরেন্দ্র মোদী এবং শি চিনফিং।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:১৮
Share:

মমল্লপুরমে নরেন্দ্র মোদী এবং শি চিনফিং। ছবি :এএফপি।

মধ্য চিনের মনোরম শহর উহান থেকে দক্ষিণ ভারতের ঐতিহাসিক মমল্লপুরমের ভৌগোলিক দূরত্ব অনেকটাই। কিন্তু মমল্লপুরমে ভারত-চিন ঘরোয়া শীর্ষ বৈঠকের প্রেক্ষাপটে অনিবার্য হয়ে উঠছে উহানে দেড় বছর আগের প্রথম ঘরোয়া বৈঠকটির প্রসঙ্গ।

Advertisement

বছর দেড়েক আগে প্রথম বার নতুন ধরনের একটি খোলামেলা আলোচনায় বসেছিলেন নরেন্দ্র মোদী এবং শি চিনফিং। তবে, কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সেই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতের সঙ্গে অনেকটাই তফাৎ রয়েছে মমল্লপুরমে এ বারের বৈঠকের। পাশাপাশি খাতা মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, ‘উহান স্পিরিট’ নামে যে নতুন কূটনৈতিক শব্দবন্ধের আমদানি হয়েছিল, আজ মমল্লপুরমে এসে তার অনেকটাই রয়ে গিয়েছে সেই তিমিরে। অনেক ক্ষেত্রেই

ফের ঘুরে ফিরে আসবে পুরনো

Advertisement

সেই দাবিদাওয়া।

উহান ছিল দু’দিনের নিরবচ্ছিন্ন আলোচনা। সেখানে চোখ জুড়নো নিসর্গের আবহে দু’জনে লাগাতার কথা বলে গিয়েছিলেন দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয় নিয়ে। মমল্লপুরমে নির্ধারিত সময় চব্বিশ ঘণ্টারও কম। তার বেশ কিছুটা সময় মোদীর গিয়েছে তামিলনাড়ুর প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন চিনা নেতাকে ঘুরিয়ে দেখাতে। মৈত্রীর প্রতীকী ছবি বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে বার বার ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন। অন্য দিকে শি-ও সম্প্রতি চূড়ান্ত ব্যস্ত রয়েছেন হংকংয়ের বিক্ষোভ মোকাবিলায়। সঙ্গে আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ, নিজেদের অর্থনীতিরও কোণঠাসা পরিস্থিতি সামলানো। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আধিপত্য কায়েম রাখতে প্রতিবেশী কূটনীতি ঢেলে সাজাতে চাইছেন তিনি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক সেরেই এসেছেন ভারতে। আগামী কালই উড়ে যাবেন নেপালে।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর দিক থেকেও পরিস্থিতি ভিন্ন। গত বছর চিনের সঙ্গে এই ধরনের বৈঠক নিঃসন্দেহে একটি চমক তৈরি করেছিল, যা ভোটের মুখে দাঁড়ানো বিজেপি সরকার কাজে লাগায়। টানা ৭২ দিনের ডোকলাম সংঘাতের পরিণাম মোদীর জাতীয়তাবাদের ব্র্যান্ডে কিছুটা হলেও ধাক্কা দিতে পারতো। উহানে চিনফিংয়ের সঙ্গে মোদীর নৌকাবিহারের ছবি সেই ক্ষত মেরামতিতে কাজে লেগেছিল। এ বারে লোকসভায় বিপুল জয়ে বলিয়ান মোদী নিঃসন্দেহে অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী। সে কথা মহাবলীপুরমের প্রাচীন সৌধ-পাড়ায় হাঁটাচলার সময়ে তাঁর অভিব্যক্তিতে স্পষ্ট। কিন্তু দেশের বেহাল অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চ্যালেঞ্জ এ বার প্রধানমন্ত্রীর সামনে। চিনের বাজার ভারতীয় পণ্যের জন্য উন্মুক্ত করে বাণিজ্য ঘাটতিতে সমতা আনার জন্য তাই অনেক বেশি জোর দিচ্ছেন তিনি মমল্লপুরমে, এমনটাই জানাচ্ছে কূটনৈতিক সূত্র।

দেড় বছর আগে উহানের ঘরোয়া আলোচনায় চিনের প্রেসিডেন্ট চিনফিংয়ের সঙ্গে ইতিবাচক তরঙ্গ তৈরি হওয়ার দাবি করেছিল দিল্লি। সীমান্তে শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখা থেকে শুরু করে আফগানিস্তানে চিনের সঙ্গে যৌথ অর্থনৈতিক প্রকল্প গড়ার প্রতিশ্রুতিও শি-এর কাছ থেকে আদায় করে নেওয়া সম্ভব হয়েছিল। কৃষিপণ্য এবং ওষুধ রফতানি বাড়িয়ে ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ঘাটতি কমানোর জন্য শি-কে অনুরোধ করেছিলেন মোদী। স্থির হয়েছিল, আস্থা বাড়াতে দু’দেশের মধ্যে এই গোত্রের ঘরোয়া বৈঠক ঘন ঘন করা হবে। মমল্লপুরমে পৌঁছে দেখা যাচ্ছে, তার কোনওটাই বাস্তবায়িত হয়নি। বরং ভারতকে বাদ দিয়ে চিন এবং পাকিস্তান, কাবুলের সঙ্গে আলোচনা প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ভারত চাল এবং চিনি রফতানি করছে ঠিকই, কিন্তু তা এমন কিছু নয় যাতে বাণিজ্য ঘাটতি সামান্যও কমে। এক কদমও এগোয়নি সীমান্ত আলোচনা। বরং লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ার সিদ্ধান্তের পর প্রকাশ্যেই ভারত-বিরোধিতা শুরু করেছে বেজিং।

আজ শি-কে পাশে নিয়ে ডাব খেতে খেতে, রাতের ভোজসভায় অথবা আগামী কাল প্রভাতের সমুদ্র সৈকতে আলোচনার পরে উহান থেকে কয়েক কদম এগিয়ে নতুন কিছু পায় কি না ভারত, সেটাই দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement