ইদ এবং রমজান কী ভাবে তাঁরা পালন করেছেন, সে বিষয়েও এর পরে বিস্তারিত ভাবে খোঁজ নেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, “মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করবেন। কোনও রকম সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন।”
ভারুচের উৎকর্ষ সমারোহতে মোদী। পিটিআই
তাঁর ছাপান্ন ইঞ্চি ছাতি নিয়ে প্রচার চলে ঠিকই, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে নরেন্দ্র মোদীকে আবেগরুদ্ধ হতে দেখা গিয়েছে বার বার। কখনও চোখ ভিজে গিয়েছে। আবেগের মুহূর্তে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। একটু সময় নিয়ে নিজেকে সংহত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার ভোটমুখী রাজ্য গুজরাতের ভারুচে সরকারি প্রকল্পের সুবিধাপ্রাপ্তদের সঙ্গে ভিডিয়ো সম্মেলনে, দৃষ্টিহীন এক মুসলমান আয়ুব পটেলের সঙ্গে কথা বলার সময়ে মোদীকে আবেগতাড়িত হতে দেখা গেল। আয়ুবের মেয়ে আলিয়া ডাক্তারি পড়তে চায় বাবার চোখের সমস্যার কারণে— এ কথা শোনার পরে স্তব্ধবাক মোদী।
বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, এগুলি তাঁর নাটকীয় প্রচার কৌশলেরই অঙ্গ। সবই আগে থেকে স্থির করা থাকে। সবই সঠিক সময় বুঝে করা হয়। রাজনৈতিক প্রচারের সঙ্গে মোদী সফল ভাবে মিশিয়ে দিতে জানেন আবেগ, যা সাধারণ মানুষকে ছুঁয়ে যায়। কিন্তু অভিযোগ যা-ই হোক, ভারতীয় রাজনীতিতে এত ঘন ঘন প্রকাশ্যে আবেগজব্দ হতে দেশের কোনও প্রধানমন্ত্রীকে দেখা গিয়েছে কি না, তা তর্কসাপেক্ষ। যাঁকে ‘দুর্বল প্রধানমন্ত্রী’ বলে সমালোচনা করতেন বিজেপি নেতারা, মোদীর পূর্বসূরি সেই মনমোহন সিংহ তাঁর দশ বছরের মেয়াদে আবেগকে কখনই প্রকাশ্যে আসতে দেননি। সর্বদাই থেকেছেন ভাবলেশহীন, যুক্তিনিষ্ঠ।
ভিডিয়ো মাধ্যমে আজ ভারুচের ‘উৎকর্ষ সমারোহ’-তে অংশ নেন মোদী। সেখানে দৃষ্টিহীন আয়ুব পটেল এবং তাঁর মেয়ের সংকল্পের কথা শুনেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তিনি। আলোচনা সভায় আয়ুবের সঙ্গে কথা বলার সময়ে মোদী তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি তাঁর মেয়েদের শিক্ষার জন্য কী ব্যবস্থা করছেন? জবাবে পটেল জানান, তাঁর তিন মেয়েই স্কুলে পড়াশোনা করছে এবং দু’জন ইতিমধ্যেই স্কলারশিপ পেয়েছে। পটেল আরও বলেন যে, তাঁর বড় মেয়ে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। সে ডাক্তার হতে চায়। মোদী এর পরে তাঁর মেয়ে আলিয়ার কাছে জানতে চান, কেন সে ডাক্তার হতে চায়? আলিয়া বলে, “আমার বাবা যে সমস্যায় ভুগছেন, তার জন্যই আমি ডাক্তার হতে চাই।” কেঁদে ফেলে সে।
আলিয়ার কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তাঁর গলা বুজে আসে। কিছু সময় লাগে নিজেকে সামলাতে। সেই সময়ে সমবেত জনতা করতালি দিয়ে মোদীর আবেগকে বন্দনাও জানায়। এর পরে মোদী ধরা গলায় বলেন, “এই সংবেদনাই তোমার শক্তি।” ইদ এবং রমজান কী ভাবে তাঁরা পালন করেছেন, সে বিষয়েও এর পরে বিস্তারিত ভাবে খোঁজ নেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, “মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করবেন। কোনও রকম সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন।”