জেফ বেজোস
অ্যামাজ়ন কম দামে পণ্য বেচে এ দেশের দোকানদার, ছোট ব্যবসায়ী থেকে শিল্পমহলকে পথে বসাচ্ছে বলে সঙ্ঘ পরিবার বারবারই নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাছে নালিশ জানাচ্ছিল। পাশাপাশি, জেফ বেজোসের মালিকানাধীন মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্টের সমালোচনাও মোদী সরকারের কর্তাব্যক্তিদের পছন্দ হয়নি। এই দুইয়ের জেরে অ্যামাজ়নের কর্ণধার জেফ বেজোসের সঙ্গে দেখাই করলেন না প্রধানমন্ত্রী মোদী। তাঁর সরকারের অন্য কোনও মন্ত্রীও বিশ্বের সবচেয়ে ধনী শিল্পপতির সঙ্গে বৈঠক করেননি। সরকারের একটি সূত্রের খবর, বেজোস প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সময় চাইলেও এক মাস আগেই তা নাকচ করে দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবারই কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল বলেছিলেন, অ্যামাজ়ন আগামী পাঁচ বছরে ১০০ কোটি ডলার লগ্নির কথা বলে ভারতকে কৃতার্থ করছে না। বাণিজ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে বিদেশি লগ্নিকারীদের কাছে ভুল বার্তা যাবে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। পীযূষের মন্তব্যে দেশের শিল্পমহলও খুশি হয়নি। কিন্তু পুরনো অবস্থানেই অনড় থেকে বাণিজ্যমন্ত্রী আজ মন্তব্য করেছেন, ‘‘আমরা সব রকম লগ্নিকে স্বাগত জানাই। কিন্তু আইন না মেনে লগ্নি করলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ তাঁর গতকালের কথাকে ‘অ্যামাজ়নের প্রতি নেতিবাচক’ মন্তব্য হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে বলে দাবি করেছেন পীযূষ। কিন্তু একই সঙ্গে বলেছেন, ‘‘ই-কমার্সের ক্ষেত্রে দেশে কিছু নিয়ম রয়েছে। নিয়ম মেনে লগ্নি করলে সকলেই স্বাগত।’’
পীযূষ গত কাল যুক্তি দিয়েছিলেন, প্রচুর ছাড় দিয়ে পণ্য বেচতে গিয়ে বিপুল ক্ষতি পুষিয়ে দিতেই অ্যামাজ়ন ১০০ কোটি ডলার লগ্নি করছে। আজ কার্যত তারই জবাবে অ্যামাজন কর্ণধার বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছেন, আগামী পাঁচ বছরে তাঁরা যে ১০০ কোটি ডলার লগ্নি করবেন, তাতে ১০ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান হবে। বিবৃতির শেষে বেজোসের মন্তব্য, ‘‘আজ তো সবে প্রথম দিন।’’ বেজোসের এই দাবি সত্ত্বেও পিছু হটছে না মোদী সরকার। বাণিজ্যমন্ত্রীর যুক্তি, অ্যামাজ়নের মতো বিদেশি সংস্থাকে শুধু নেট-বাজার বা কেনাবেচার প্ল্যাটফর্ম চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। খুচরো ব্যবসা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। নেট-বাজার চালাতে ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। যদি না অ্যামাজ়ন নিয়ম ভেঙে কম দামে পণ্য বেচার চেষ্টা করে। এই অভিযোগ তুলে বেজোসের সফরের সময় ব্যবসায়ীদের সর্বভারতীয় সংগঠন সিএআইটি দিল্লিতে বিক্ষোভও দেখিয়েছে।
মোদী সরকারের এই অবস্থানের পিছনে তাঁদের ভূমিকা স্পষ্ট করে দিয়ে স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের যুগ্ম-আহ্বায়ক অশ্বিনী মহাজন বলেন, ‘‘অ্যামাজ়নের লগ্নি শুধুমাত্র নিজেদের লোকসান পুষিয়ে নিতে। ওরা কম দামে পণ্য বেচছেন বলে এ দেশের দোকানদার, ছোট ব্যবসায়ীরা মার খাচ্ছেন। দেশের ই-কমার্স উদ্যোগপতিরা প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে পারছেন না। ছোটদের সঙ্গে বড় ব্যবসায়ী, কারখানার মালিকরাও মার খাচ্ছেন। কারণ এরা বিদেশি, বিশেষত সস্তার চিনা পণ্য বেচছেন।’’
শিল্পমহলের প্রশ্ন, কেউ আইন ভাঙলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। অ্যামাজ়নের বিরুদ্ধেই যেমন কম্পিটিশন কমিশন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কিন্তু নতুন লগ্নির ঘোষণাকে বাণিজ্যমন্ত্রী হেয় করলে ভুল বার্তা যাবে। চিদম্বরমের কটাক্ষ, ‘‘বাণিজ্যমন্ত্রীর তিরস্কার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ভালই হেডলাইন হবে। এই তিরস্কারের ফলে পাঁচ মাস ধরে যে আমদানি কমছে, আট মাস ধরে যে রফতানি কমছে, তা বাড়বে। অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিরস্কার করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। এ বার উনি আমদানি, রফতানি বাড়াতে আরও লোককে তিরস্কার করুন। ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতির লক্ষ্যে ওঁর উচিত সত্য নাদেল্লা, সুন্দর পিচাইকেও তিরস্কার করা।’’ অশ্বিনী পাল্টা বলেন, ‘‘বিদেশি লগ্নি এলেই কি দেশের মঙ্গল? না কি শ্রমিক, ব্যবসায়ী, শিল্পমহলের স্বার্থরক্ষায় দেশের মঙ্গল? কয়েক বিলিয়ন ডলারের লগ্নির জন্য আমাদের শিল্প বন্ধ হলে, শ্রমিক-দোকানদারের রুটিরুজি গেলে কী লাভ?’’ ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষাই বেজোসের প্রতি বিতৃষ্ণার একমাত্র কারণ নয়, তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন বিজেপির বিদেশ শাখার প্রধান বিজয় চৌথাইওয়ালে। বেজোসের মালিকানাধীন ওয়াশিংটন পোস্ট-এর সম্পাদকীয় নীতিকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি। ওয়াশিংটন পোস্টের নিবন্ধে অনুচ্ছেদ ৩৭০ রদ, সিএএ-র সমালোচনা হয়েছিল। চৌথাইওয়ালের মন্তব্য, ‘‘বেজোস ফিরে গিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টকে বলুন, ভারতে এসে তাঁর কী ধারণা হল।’’