মোদীর পাশাপাশি বিজেপির এক ঝাঁক নেতা এ দিন টুইটার-ফেসবুকে ঢালাও প্রচার করেন, উত্তর ভারতের অন্য তিন রাজ্যের বাসিন্দাদের পঞ্জাব থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন চন্নী।
ফাইল চিত্র।
বুধবার ঘোষণা করেছিলেন— “বিহার, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লির ‘ভাইয়া’-রা পঞ্জাব শাসন করতে চাইলে এখানকার মানুষ সেটা হতে দেবেন না। এই সব ‘ভাইয়া’দের পঞ্জাবে গেড়ে বসতেই দেওয়া হবে না!” এর পরে বৃহস্পতিবার সারা দিন ‘ভাইয়া’-দের পাল্টা আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত হলেন পঞ্জাবে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী এবং পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী-মুখ চরণজিৎ সিংহ চন্নী। সন্ধ্যায় তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন— বিহার, উত্তরপ্রদেশ বা দিল্লির সাধারণ মানুষকে পঞ্জাব থেকে বার করে দেওয়ার কথা আদৌ তিনি বলেননি। ‘ভাইয়া’-রা আম জনতা নন, তাঁরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষে পঞ্জাবে ভোট করতে আসা দুর্গেশ পাঠক, সঞ্জয় সিংহ, অরবিন্দ কেজরীওয়ালের মতো নেতারা। নির্বাচনের মুখে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে তাঁর বক্তব্য বিকৃত করা হচ্ছে বলে দাবি করেন চন্নী। কাল যখন এই মন্তব্য করেন, চন্নীর পাশে ছিলেন দিল্লি থেকে প্রচারে আসা প্রিয়ঙ্কা গান্ধী। তিনি হাসি মুখে হাততালি দিয়ে সমর্থন করেছেন চন্নীকে। চন্নী তখন বলেছিলেন, “প্রিয়ঙ্কা ভাইয়া-দের দলে পড়েন না। তিনি পঞ্জাবের ‘বহু’ (বধূ), পঞ্জাবিদেরও।”
অনেকে মনে করেছেন, আসন্ন নির্বাচনে যাতে ‘গো-বলয় (উত্তরপ্রদেশ-বিহার)-এর দল’ বিজেপি ও দিল্লিতে ক্ষমতায় থাকা অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দল আপ ওই রাজ্যে ক্ষমতা দখল করতে না-পারে, সে জন্যই ‘ভাইয়া’ বলে পঞ্জাবি জাত্যভিমান উস্কে দিতে চেয়েছিলেন চন্নী। কিন্তু ভোটের মুখে বিপক্ষই বা তাঁকে ছাড়বে কেন! প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন, আদতে উত্তরপ্রদেশ-বিহার-দিল্লির বাসিন্দাদেরই ‘অপমান’ করেছেন চন্নী, তাঁদের পঞ্জাব থেকে বার করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। আর সেই অপমানের কথা শুনে পাশে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়েছেন ‘দিল্লির একটি বিশেষ পরিবারের এক জন’, যিনি চন্নীর ‘মালিক’। অর্থাৎ, চন্নী নন ‘অপমান’-এর দায় আদতে প্রিয়ঙ্কার কাঁধেই চাপিয়ে মোদী ভোটে তার জবাব দিতে ডাক দিয়েছেন।
সুপরিকল্পিত ভাবেই ‘ভাইয়া’-র অর্থ আম জনতা বলে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন মোদী। তিনি বলেন, “গুরু গোবিন্দ সিংহের জন্মস্থান কোথায়? বিহারের পটনাসাহিব। আপনারা কি গুরু গোবিন্দ সিংহকে পঞ্জাব থেকে উৎখাত করবেন? যারা এই সব কথা বলেন, তাঁদের এক লহমার জন্যও সুযোগ দেওয়া উচিত নয়।” কাল সন্ত রবিদাস জয়ন্তীতে এই দলিত গুরুর মন্দিরে গিয়ে কপাল ঠুকেছেন মোদী। আজ বলেন, “সন্ত রবিদাসের জন্ম উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে। তাঁকেও পঞ্জাব থেকে বার করে দেওয়া হবে?” চন্নীর মন্তব্যকে ধরে মোদী এমন অভিযোগ করেন, বিজেপির জাতীয়তাবাদকে ঠেকাতে কংগ্রেস বিচ্ছিন্নতাবাদী ও প্রাদেশিকতার মনোভাবকে উস্কে তুলছে।
মোদীর পাশাপাশি বিজেপির এক ঝাঁক নেতা এ দিন টুইটার-ফেসবুকে ঢালাও প্রচার করেন, উত্তর ভারতের অন্য তিন রাজ্যের বাসিন্দাদের পঞ্জাব থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন চন্নী। সুতরাং এমন ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী ও প্রাদেশিক’ লোক ও তাঁর দলকে কিছুতেই পঞ্জাবে জয়ী হয়ে সরকার গড়তে দেওয়া যায় না। আম আদমি পার্টির নেতা তথা চন্নী বর্ণিত অন্যতম ‘ভাইয়া’ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরীওয়ালও এমন সুযোগ ছাড়েননি। তিনি বলেন, “কোনও নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে এমন অপমানজনক মন্তব্য করাটা খুবই নিন্দার। এদের লজ্জা হওয়া উচিত!” বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বলেন, “এ ধরনের মন্তব্য অনভিপ্রেত। পঞ্জাব গড়ার পিছনে বিহারের বাসিন্দাদের অবদান কম নয়। কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে এ ধরনের মন্তব্য করতে দেখে আমি অবাক হয়ে গিয়েছি।”