Narendra Modi

চাষিদের থেকে সরকার আর ধান-গম কিনবে না, এটা মনগড়া কাহিনি: মোদী

প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, কংগ্রেস নিজে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের ইস্তাহারে এই সব সংস্কারের কথা বলেছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:৪২
Share:

কৃষি সংক্রান্ত বিলের বিরুদ্ধে পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং শিরোমণি অকালি দলের নেতা প্রকাশ সিংহ বাদলের বাড়ির সামনে কৃষকদের বিক্ষোভ। শুক্রবার শ্রী মুক্তসর সাহিবে। ছবি: পিটিআই।

কৃষি ক্ষেত্রে সংস্কারের বিরোধিতা করে ইস্তফা দিয়েছেন তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী ‘অপপ্রচার’-এর অভিযোগ করলেন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে!

Advertisement

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অকালি দলের নেত্রী হরসিমরত কউর খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তার আগে থেকেই কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা ও কৃষক সংগঠনগুলি কৃষি ক্ষেত্রে তিনটি অধ্যাদেশের প্রতিবাদ করছিল। ঘরে-বাইরে এই আক্রমণের মুখে শুক্রবার নিজেই মুখ খুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। মাঠে নেমেই দাবি করেছেন, কংগ্রেস নিজে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের ইস্তাহারে এই সব সংস্কারের কথা বলেছিল। এখন মোদী সরকার চাষিদের মান্ডির বাইরে খুশিমতো ফসল বেচার ‘স্বাধীনতা’ দিচ্ছে দেখে তারা অপপ্রচারে নেমেছে। যার জবাবে কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, “অনবরত মিথ্যে বলে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীর মতো উচ্চপদে থাকা ব্যক্তির পক্ষে অশোভনীয় ও নিন্দনীয়।”

আজ বিহারে কোসি নদীর উপরে রেলসেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মোদী বলেন, “বৃহস্পতিবার বিশ্বকর্মা জয়ন্তীর দিনে লোকসভায় ঐতিহাসিক কৃষি সংস্কার বিল পাশ হয়েছে। স্বাধীনতার এত বছর পরে অন্নদাতা চাষিদের অনেক বন্ধন থেকে মুক্তি দেওয়ার কাজ হয়েছে। এতে মধ্যসত্ত্বভোগীদের থেকে চাষিদের বাঁচানোর রক্ষাকবচ মিলবে। চাষিদের সামনে ফসল বেচার আরও বিকল্প ও সুযোগ আসবে।”

Advertisement

কৃষি ক্ষেত্রে মোদী সরকারের তিন অধ্যাদেশ

১) অত্যাবশ্যক পণ্য আইনে সংশোধন
• চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, গম, ভোজ্যতেল তৈলবীজ যত ইচ্ছে মজুত করার ছাড়পত্র
• প্রয়োজনে কেন্দ্র বিধিনিষেধ জারি করতে পারে, রাজ্যের অধিকার থাকবে না বলে অভিযোগ
২) কৃষিপণ্য ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নয়নে অধ্যাদেশ
• কৃষিপণ্যের ব্যবসায়ী, রফতানিকারী ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংস্থাগুলি চুক্তির ভিত্তিতে চাষ করিয়ে নিয়ে সরাসরি চাষিদের থেকে ফসল কিনে নিতে পারবে। কৃষিপণ্য বাজার কমিটির নিয়ন্ত্রণে থাকা মান্ডিতে ফসল বেচার কোনও বাধ্যবাধকতা থাকবে না। ‘এক দেশ, এক কৃষি বাজার’ এর লক্ষ্য।
৩) কৃষকদের চুক্তি চাষে সুরক্ষা ও ফসলের মূল্য

নিশ্চিতকরণ অধ্যাদেশ
• বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চাষিদের চুক্তির মানদণ্ড ঠিক করে দেওয়া, যাতে চাষিরা ফসলের ঠিকমতো দাম পান, তাঁদের ঠকতে না হয়

যে সব বিষয়ে আশঙ্কা ও প্রশ্ন
• দেশের ৮৬ শতাংশ চাষির জমির পরিমাণ ২ হেক্টরের কম। তাঁরা তাদের অল্প ফসল বা আনাজ গ্রামের কাছে মান্ডিতে না বেচে বাইরে কোথাও বেচতে যাবেন না। তা হলে অধ্যাদেশ কাদের জন্য?
• ফসলের এমএসপি বা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য কি তুলে দেওয়া হবে?
• চাষিরা এমএসপি-র থেকে কম দামে ফসল বেচতে বাধ্য হবেন না, তার গ্যারান্টি কোথায়?
• কেন্দ্র কি এফসিআই বা নাফেড-এর মাধ্যমে ফসল কেনা বন্ধ করে দেবে?
• খাদ্যশস্য মজুতের দায় কি ঝেড়ে ফেলবে কেন্দ্র?
• ছোট চাষিরা কর্পোরেট সংস্থার সঙ্গে লেনদেন করতে গিয়ে কি ঠকে যাবেন না? তাঁরা কি কর্পোরেট সংস্থার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করতে পারবেন?
• বেসরকারি সংস্থাগুলিকে যত ইচ্ছে খাদ্যশস্য মজুত করতে দিলে কি কালোবাজারি, কৃত্রিম খাদ্যাভাব তৈরি হবে না?
• রেশনের মাধ্যমে খাদ্যবণ্টন কি বন্ধ হয়ে যাবে?

কেন এই সব আশঙ্কা?
• ২০১৫-য় মোদী সরকার নিযুক্ত শান্তা কুমার কমিটি সুপারিশ করেছিল, মাত্র ৬ শতাংশ চাষি এমএসপি-র সুবিধা পান। কাজেই তা তুলে দেওয়া হয়। এফসিআই ও নাফেড-এর মাধ্যমে ফসল কেনা বন্ধ হোক। রেশনে খাদ্যবণ্টন বন্ধ হোক। তিন অধ্যাদেশে শান্তা কুমার কমিটির সুপারিশই রূপায়ণ করছে মোদী সরকার।

পঞ্জাব-হরিয়ানায় কেন সবথেকে বেশি ক্ষোভ?
• এই দুই রাজ্যে পাইকারি ব্যবসায়ী বা কমিশন এজেন্টরা মান্ডিতে চাষিদের থেকে ফসল কেনার ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেন। তারা ২.৫% কমিশন পান। এঁরা মূলত ভূমিহীন জাঠ সম্প্রদায়ের মানুষ। শুধু পঞ্জাবে ১২ লক্ষ কৃষক পরিবারের পাশাপাশি ২৮ হাজার কমিশন এজেন্ট রয়েছেন। পঞ্জাব সরকারও এফসিআই-এর থেকে ৬% কমিশন আদায় করে।

প্রধানমন্ত্রীর এই যুক্তি শুনে হরসিমরতের মন্তব্য, “এক জন চাষি একটা উদাহরণ দিয়েছেন। যখন জিয়ো এসেছিল, বিনা পয়সায় ফোন দিয়েছিল। সবাই তাতে নির্ভরশীল হয়ে পড়ল। বাকি প্রতিযোগীরা সরে যেতে জিয়ো মাসুল বাড়িয়ে দিল। কর্পোরেটরাও সেটাই করবে।”

হরসিমরতের আক্রমণ নিয়ে অবশ্য মোদী সরকার তেমন চিন্তিত নয়। বিজেপি নেতাদের মতে, পঞ্জাবের কৃষক ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখেই অকালি দলকে বিরোধিতা করতে হচ্ছে। সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২৫০টি কৃষক সংগঠনের সমন্বয় সমিতি ২৫ সেপ্টেম্বর বন্‌ধ ও বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। কিন্তু লোকসভার পর শনি-রবিবারের মধ্যে রাজ্যসভাতেও বিল পাশ করিয়ে নিতে চাইছে সরকার।

আরও পড়ুন: দুই নরেনকে মিশিয়ে মাত্রা ছাড়াল স্তুতি

জুন মাসে জারি করা যে তিনটি অধ্যাদেশকে আইনের চেহারা দিতে সংসদে বিল পাশ করানো হচ্ছে, তাতে কৃষিপণ্য বাজার কমিটি আইন তুলে দিয়ে কর্পোরেট সংস্থার সামনে চাষিদের চুক্তিচাষ করিয়ে সরাসরি তাদের থেকে ফসল কিনে নেওয়ার রাস্তা খুলে দেওয়া হচ্ছে। মোদীর অভিযোগ, যারা দশকের পর দশক ধরে দেশে শাসন করেছে, তারা এখন চাষিদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। অথচ ভোটের সময় চাষিদের লোভ দেখানোর জন্য তাদের ইস্তাহারে এপিএমসি আইন বদলের কথা ছিল।

আরও পড়ুন: বিহারে শরিক প্রশংসায় মোদী

বিজেপির বক্তব্য, কংগ্রেস ইস্তাহারে বলেছিল, এপিএমসি আইন তুলে দিয়ে কৃষিপণ্য রফতানি ও আন্তঃরাজ্য ব্যবসার পথ খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু কংগ্রেসের ইস্তাহার তৈরির দায়িত্বে থাকা পি চিদম্বরমের দাবি, “আমরা ইস্তাহারে ছোট শহর ও বড় গ্রামে হাজার হাজার কৃষিবাজার তৈরির কথা বলেছিলাম। তা তৈরির পরে এপিএমসি আইন তুলে দেওয়া যেত।” কংগ্রেসের অভিযোগ, সরকার ফসলের এমএসপি ও সরকারি ফসল কেনা তুলে দিতে চাইছে। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য একেও কংগ্রেসের মিথ্যে প্রচার বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু চিদম্বরমের প্রশ্ন, ‘‘বিলে কোথায় লেখা রয়েছে যে এমএসপি-র থেকে কম দামে যাতে চাষিদের ফসল কিনতে না হয়, তা নিশ্চিত করা হবে?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement