জবাব দেবই, বার্তা নরেন্দ্র মোদীর

নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে আবার সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করতে বদ্ধপরিকর নরেন্দ্র মোদী। গত কাল মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে— প্রয়োজনে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে বেশ কিছু সেনা ঘাঁটি ও জঙ্গিদের লঞ্চিং প্যাড ধ্বংস করা দেওয়া হবে।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৭ ০৩:৫০
Share:

নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে আবার সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করতে বদ্ধপরিকর নরেন্দ্র মোদী। গত কাল মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে— প্রয়োজনে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে বেশ কিছু সেনা ঘাঁটি ও জঙ্গিদের লঞ্চিং প্যাড ধ্বংস করা দেওয়া হবে। সাউথ ব্লকে ওয়ার রুমে এ ব্যাপারে নীল-নকশা তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে সার্জিকাল স্ট্রাইকের মতো একটি গোপনীয় বিষয় কৌশলে প্রচার করার পেছনে নিছক রাজনীতিই দেখছেন বিরোধীরা।

Advertisement

হামলার আশঙ্কা করে ইতিমধ্যেই সীমান্তে সেনা বাড়িয়েছে পাকিস্তান। অনুপ্রবেশের জন্য তৈরি জঙ্গিরাও। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে অন্তত ৫০টি লঞ্চ প্যাড সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে কৃষ্ণ ঘাঁটি এলাকায় শ’দেড়েক ও কাশ্মীর ঘাঁটি এলাকায় শ’দুয়েক জঙ্গি অপেক্ষা রয়েছে। সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়তের কথায়, ‘‘সীমান্তে বরফ গলছে। ফি বছরের মতো এ বারও অনুপ্রবেশ শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’’

কৃষ্ণ ঘাঁটি এলাকায় ভারতের সম্ভাব্য হামলার তালিকায় রয়েছে বুটল ও তপ্তপানি। ১৬ কোরের নৌশেরা এলাকার উল্টো দিকে থাকা নিকয়াল, সেবকোট, আখনুরের উল্টো দিকে বরনালায় অবস্থিত লঞ্চ প্যাড ও বহাবলপুর ও মুজফ্ফরাবাদের জঙ্গি ক্যাম্প সীমান্তের কাছে থাকায় সেগুলিতেও হামলা করা হতে পারে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলছে, আগের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক থেকে শিক্ষা নিয়ে পাকিস্তান এখন নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার ভিতরে জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরগুলি সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। সে জন্য হামলা চালিয়ে এখন মূলত লঞ্চিং প্যাডগুলিই গুঁড়িয়ে দিতে চাইছে ভারত।

Advertisement

প্রশ্ন হল— কবে হবে এই হামলা? সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়ত আজ বলেন, ‘‘উপযুক্ত সময়েই হবে। আগে জানিয়ে এই ধরনের হামলা করা হয় না।’’ আর সরকারের এক শীর্ষ মন্ত্রীর কথায়, ‘‘পাকিস্তান এখন ভারতের পাল্টা হামলার আশঙ্কায় সতর্ক। আগে ওরা নজরদারিতে একটু ঢিলে দিক!’’

প্রশ্ন উঠেছে, সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মতো একটি গোপনীয় অভিযান নিয়ে আগাম বার্তা কেন দিচ্ছে কেন্দ্র? বিরোধীরা বলছেন— কংগ্রেস সরকারও সার্জিকাল স্ট্রাইক করে জঙ্গি নিকেশ করেছে, আর তা ঢাক-ঢোল না-বাজিয়েই। আসলে পাকিস্তানি হামলা ঠেকানোর ব্যর্থতা চাপা দিতেই সরকার প্রতিরক্ষা নীতির মতো গুরুতর বিষয় নিয়ে রাজনীতি করছেন। প্রশ্ন, এটা কতটা যুক্তিযুক্ত?

আরও পড়ুন: সঙ্ঘের কাছে পাঠ নিচ্ছেন রাষ্ট্রদূতরা

এটা ঠিক, সীমা পেরিয়ে পাক সেনারা ভারতীয় জওয়ানদের মাথা কেটে নিয়ে গিয়েছে— এ ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরে দেশ জুড়ে পাকিস্তান-বিরোধী জনমত তীব্র হয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় জবাব দেওয়ার কথাই বলতে হচ্ছে কেন্দ্রকে। না হলে বিরোধীরাই প্রশ্ন তুলবেন— কী করছে সরকার?

এ দিনই আবার কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে সে রাজ্যের ডিজি এস পি বৈদ্যের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। উপস্থিত ছিলেন বিএসএফ ও অন্য আধাসামরিক বাহিনীগুলির কর্তারাও। মেহবুবা মুফতির সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন, হুরিয়ত ও পাকিস্তানের সঙ্গে অন্তত ‘ট্র্যাক টু’ আলোচনা শুরু করা যেতে পারে। বিদেশ মন্ত্রকের একাংশের ধারণা, পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি সজ্জন জিন্দলের দেখা করাটা এই ‘ট্র্যাক টু’ আলোচনার অংশ বলেই মনে করছে পাকিস্তানের সেনা বাহিনী ও গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। সম্ভাব্য শান্তিপ্রক্রিয়া ভেস্তে দিতেই তারা নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ওই নৃশংস হামলা চালিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement