আচার: ইলাহাবাদের সঙ্গমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার। পিটিআই
রাফাল রায়ে সুপ্রিম কোর্টের ব্যাকরণের ‘ভুল’ ধরিয়েও বিড়ম্বনা কাটেনি। বরং সেই ‘ভুল’ নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন এবং দাবি তুলে সরকারের অস্বস্তিই বাড়াচ্ছে কংগ্রেস। বিরোধীরা সংসদে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিসও আনতে চলেছে। বিড়ম্বনার এমন বেড়াজালে আটকে চাপ কমাতে রাহুল গাঁধীকেই ফের নিশানা করলেন নরেন্দ্র মোদী।
আর সেটি করতে গিয়ে মোদী বেছে নিলেন গাঁধী পরিবারের দীর্ঘদিনের দুর্গ, সনিয়া গাঁধীর নির্বাচনী কেন্দ্র রায়বরেলীকে। সেখানে গিয়ে দাবি করলেন, কার্গিল যুদ্ধের পর থেকে বায়ুসেনা নতুন যুদ্ধবিমানের কথা বললেও কংগ্রেস দশ বছর তা ঝুলিয়ে রেখেছিল। কংগ্রেস আসলে সেনাকে দুর্বল করতে চায়। বফর্স প্রসঙ্গ তুলে মোদীর কটাক্ষ, বফর্সে ছিল কাত্রোচ্চি ‘মামা’! আর এক ‘আঙ্কেল’ ক্রিশ্চিয়ান মিশেলকে এখন ভারতে আনা হয়েছে। যাঁকে বাঁচাতে কংগ্রেস উকিল পাঠায়। মোদীর দাবি, এই অস্বস্তি থেকে বাঁচতেই এখন প্রতিরক্ষামন্ত্রী, বায়ুসেনা অফিসার, ফ্রান্সের সরকার মায় সুপ্রিম কোর্টকেও ‘মিথ্যেবাদী’ বলা হচ্ছে। ‘রামচরিতমানস’ উদ্ধৃত করে মোদী বকলমে রাহুলকেই ‘মিথ্যেবাদী’ বললেন।
কংগ্রেস বিষয়টি নিয়ে আসরে নামা ইস্তক মোদী ‘রাফাল’ শব্দটি উচ্চারণই করেন না! এ দিনও করেননি। রাহুলেরও নাম নেননি। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে গাঁধীদের গড়ে যে ভাবে রাহুলকে নিশানা করলেন, তাতেই স্পষ্ট, কংগ্রেস সভাপতি তাঁকে কতটা অস্বস্তিতে রেখেছেন।
আরও পড়ুন: কৃষিঋণ নিয়েও মোদীর নিশানায় কংগ্রেস
মোদীর অভিযোগের পরে কংগ্রেসের দিগ্বিজয় সিংহ বলেন, ‘‘মোদীর মতো বড় মিথ্যেবাদী আজ পর্যন্ত কেউ জন্মায়নি!’’ আর দিল্লিতে এআইসিসি দফতরে কংগ্রেস নেতা প্রমোদ তিওয়ারি বললেন, ‘‘আজ থেকে মোদীর নাম দিলাম ‘মিস্টার বিভ্রান্ত’! তিনি এত দিন যুবক, কৃষকদের বিভ্রান্ত করতেন। এখন সুপ্রিম কোর্টকেও বিভ্রান্ত করে উল্টে কংগ্রেসকে দোষী বানাচ্ছেন!’’
আরও পড়ুন: সনিয়ার প্রকল্পে গিয়ে দোষ তাঁকেই
আসলে সুপ্রিম কোর্টকে বিভ্রান্ত করার এই অভিযোগটাই কংগ্রেসের অস্ত্র, বিজেপির কাঁটা। মোদী বলেছেন, কংগ্রেস সুপ্রিম কোর্টকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে। কিন্তু সেই অভিযোগ ঠিক নয়। বরং সুপ্রিম কোর্টকে হলফনামা দিয়ে সরকার কী ভাবে বিভ্রান্ত করেছে, তা নিয়েই সরব রাহুলরা। যে কারণে আজ কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা বলেন, ‘‘রাফাল রায়ে বলা হচ্ছে, সিএজি রিপোর্ট পিএসি দেখছে। আর এখন সরকার বলছে, সুপ্রিম কোর্টের ইংরাজির ব্যাকরণ ভুল! সরকারের ভুল তথ্যের উপর দেওয়া রায় তা হলে এখনই প্রত্যাহার করে নেওয়া উচিত। ভুল সাক্ষ্যদানের জন্য সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিস জারি করা উচিত। সংসদের স্বাধিকার ভঙ্গের জন্য যা পদক্ষেপ জরুরি, তা বিরোধীরা করবে।’’ আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস দিচ্ছেন অ্যাটর্নি জেনারেলের বিরুদ্ধে।
আগামিকাল দেশের সত্তরটি জায়গায় দলের নেতা-মন্ত্রীদের আসরে নামিয়ে রাফাল রায়ে নিজেদের ‘জয়’ তুলে ধরে রাহুলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর প্রস্তুতি নিয়েছে বিজেপি। কিন্তু তার আগে রাহুল যে ভাবে রায়ের ‘গলদ’ তুলে ধরে সরব হয়েছেন, তাতে বিজেপির অস্বস্তিই বেড়েছে। সেটা কাটাতে আজ আসরে নেমে সরকারে মোদীর সেনাপতি অরুণ জেটলি একটি দীর্ঘ ব্লগ লিখে তার পরতে পরতে রাহুলকে আক্রমণ করেছেন। একেবারে মোদীর সুরেই। কিন্তু ঘটনা হল, রায়ের ‘গলদ’ নিয়ে এই প্রথম মোদী সরকারের কোনও মন্ত্রী মুখ খুললেন এবং তিনি দায়
চাপালেন শীর্ষ আদালতের ঘাড়েই! সেই সঙ্গেই রাহুলকে খোঁচা দিয়ে বললেন, ‘‘রায়ে কোনও অস্পষ্টতা থাকলে তা সংশোধনের জন্য যে কেউ আদালতে যেতে পারেন। তবে সিএজির পর্যালোচনার সঙ্গে রাফালের প্রক্রিয়া, দাম আর অফসেটে কোনও প্রভাব পড়বে না। কিন্তু ‘হেরো’রা কখনওই সত্যকে মেনে নিতে পারবেন না।’’
সরকারের অস্বস্তি আজ আরও বাড়িয়েছেন বিজেপিরই সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। তিনি বলেছেন, ‘‘অ্যাটর্নি জেনারেলও বলেছেন, তিনি হলফনামা তৈরি করেননি। তা হলে সেটি বানালেন কে? প্রধানমন্ত্রীর সেটা দেখা উচিত, কারণ এটি সরাসরি তাঁরই বিড়ম্বনা।’’