দশেরা: রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে ভাঙা ধনুক হাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নয়াদিল্লির প্যারেড গ্রাউন্ডে। ছবি: পিটিআই।
ধনুকে টঙ্কার দিয়ে অমোঘ নিশানায় উড়ে যাবে অগ্নিবাণ। জ্বলে ছারখার হবে দশানন। শুভশক্তির হাতে অশুভের পরাজয়। ফি-বছর বিজয়া দশমীর দিন এ ভাবেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হয় প্রতীকী রাবণ-বধ। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী হাত থেকে রাবণ-বধের সেই মৃত্যুবাণ তো বেরতেই চাইল না! প্রথম তিরটি ধনুক থেকে বেরোলই না। তার পরে ছিলা লাগাতে গিয়ে ধনুকটাই ভেঙে ফেললেন মোদী!
অগত্যা তিরটাকে জ্যাভেলিনের মতো করে ছুড়ে দিলেন দূরে দাঁড়ানো রাবণের কাঠামোর দিকে। সে তিরও অনুষ্ঠান মঞ্চ টপকেই মাটিতে আছড়ে পড়ল!
শনিবার দিল্লির লালকেল্লা ময়দানের ছবি এটা। উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডু, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তাঁদের সামনেই প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল ধনুক। মোদী বারবার ফস্কালেও ময়দানে দাঁড়ানো রাবণের মূর্তি অবশ্য জ্বলেছে নির্বিঘ্নেই।
তির ছুড়ে রাবণ-বধের এই রীতি নেহাতই প্রতীকী। কিন্তু মোদীর গত কালের অবস্থা দেখার পরে শুরু হয়েছে ঠাট্টা-মস্করা-সমালোচনার ঝড়। বিরোধীরা বলছেন, মোদীর হাতে তিরটার মতোই বেহাল অবস্থা দেশের উন্নতির। শুকনো মুখে বিজেপি নেতারা অবশ্য বোঝানোর চেষ্টা করছেন, একটি ‘ছোট্ট ঘটনা’ নিয়ে বিতর্ক অনুচিত। তা ছাড়া হরধনু তো রামই ভেঙেছিলেন। এই মন্তব্যেও উঠেছে ঝড়। সকলেই বলছেন, সেটা তো সীতাকে বিয়ে করার সময়। রাবণ বধের সময় তো আর রামের ধনু ভেঙে যায়নি, রাম লক্ষ্যভ্রষ্টও হননি। নাকি মোদীর ব্যর্থতা ঢাকতে গিয়ে বিজেপি নেতারা লিখে বসবেন নব-রামায়ণ!
আরও পড়ুন: বুলেট ট্রেনে কপালে ভাঁজ বিজেপির
রাবণ-বধ করতে গিয়ে মোদীর এমন দশা অবশ্য এই প্রথম নয়। গত বছর ভোটমুখী লখনউয়ে এ কাজ করতে গিয়ে বহু চেষ্টার পরে তিরটাকে মঞ্চেই ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। এ বার তো ধনুকটাই গেল ভেঙে!
কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘ঠিক যে ভাবে প্রধানমন্ত্রী আর্থিক বৃদ্ধি থেকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি— সব ক্ষেত্রেই ব্যর্থ, তেমনই রাবণকে নিশানা করতেও ব্যর্থ হলেন।’’ স্বরাজ ইন্ডিয়ার সভাপতি যোগেন্দ্র যাদব বলেন, ‘‘লালকেল্লা ময়দানে মোদী যাওয়ার আগেই তো রাবণের কাঠামোটা ঝড়ে পড়ে গিয়েছিল। তার পর তির ছুড়তে গিয়ে ওই দশা। এটি যদি মনমোহন সিংহের বেলায় হতো, তা হলে তো এই মোদীই ভগবানের ‘ইচ্ছা’র সঙ্গে এটি জুড়ে দিতেন!’’
সোশ্যাল মিডিয়াতেও চলছে হইহই, তুমুল মস্করা-বিদ্রুপ। প্রায় সকলেই দেশের অর্থনীতির বেহাল দশার সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন ধনুক ভেঙে যাওয়াকে। আরএসএসের সদর দফতর নাগপুরের বাসিন্দা এক চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট সঞ্জয় অগ্রবালের মতে, ‘‘তির এখানে সরকারের নীতি আর ধনুক অর্থনীতি। আর দেখুন, কার মুখে হাসি!’’ আর এক রসিক বাঙালির কথায়, ‘‘এত দিন জানতাম, ত্রেতা যুগে রামচন্দ্র হরধনু ভেঙেছিলেন। এ বারে দেখলাম, কলিযুগে সেই রামেরই ধনুক ভেঙে ফেললেন নরেন্দ্র মোদী!’’