কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির বক্তব্য, ‘‘ভাল কাজকে আমরা সব সময়েই সমর্থন করি। কিন্তু আপনি কি দাবি করতে পারেন যে জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে? সেখানে কি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার?’’
জম্মুর সাম্বা জেলার পালি গ্রামে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী। রবিবার। ছবি পিটিআই।
জম্মু-কাশ্মীরের তরুণ প্রজন্মকে আগের প্রজন্মের মতো কষ্টের মধ্যে পড়তে হবে না বলে প্রতিশ্রুতির দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর প্রতিশ্রুতি, ‘‘জম্মু-কাশ্মীরের তরুণ প্রজন্মের সদস্যেরা চাকরি পাবেন।’’
আজ জম্মুতে সাম্বার পালি গ্রামে ৩০ হাজার পঞ্চায়েত সদস্যের সামনে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘‘জাতীয় পঞ্চায়েতি রাজ দিবস যে জম্মু-কাশ্মীরে উদযাপন করা হচ্ছে, এটাই তাৎপর্যপূর্ণ। বোঝা যাচ্ছে গণতন্ত্র জম্মু-কাশ্মীরের তৃণমূল স্তরে পৌঁছে গিয়েছে। আমি এখান থেকেই ভারতের সব পঞ্চায়েতকে উদ্দেশ করে কথা বলছি। কারণ, জম্মু-কাশ্মীর দীর্ঘদিন ধরে পঞ্চায়েতি ব্যবস্থার সুফল থেকে বঞ্চিত ছিল।’’ মোদীর বক্তৃতা পালি থেকে দেশের সব পঞ্চায়েতে দেখানো হয়।
জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপের পরে সীমান্ত সফর বাদ দিলে এই প্রথম সেখানে পা রাখলেন মোদী। জাতীয় পঞ্চায়েতি রাজ দিবসকে বেছে নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে মোদী সরকার ও উপরাজ্যপালের প্রশাসনের সাফল্য তুলে ধরাই ছিল এই সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য। তাই প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার সব স্তরেই ছিল সেই বার্তা। মোদীর কথায়, ‘‘প্রথম বার জম্মু-কাশ্মীরে শান্তিপূর্ণ ভাবে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে। গত দু’বছরে হয়েছে বিপুল উন্নয়ন। ২০০ নতুন আইন জম্মু-কাশ্মীরে কার্যকর করেছে সরকার। তাতে বিশেষত দলিত, মহিলা, শিশু ও কাশ্মীরি সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের মানুষ উপকৃত হয়েছেন।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘বাল্মিকী সমাজের সদস্যদের অধিকার আজ ভারতের যে কোনও নাগরিকের মতোই সমান। আমি এ নিয়ে গর্বিত। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরে ওই সমাজের সদস্যেরা স্বাধীনতা পেয়েছেন।’’ ১৯৫৭ সালে জম্মু-কাশ্মীরের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বকশী গুলাম মহম্মদের ডাকে পঞ্জাব থেকে জম্মুতে সাফাইকর্মীর কাজ করতে আসেন বাল্মিকী সম্প্রদায়ের সদস্যেরা। কিন্তু ২০২০ সালে জম্মু-কাশ্মীর সরকার তাঁদের ডোমিসাইল শংসাপত্র দেওয়ার আগে ওই সম্প্রদায়ের সদস্যেরা অন্য নাগরিকদের মতো অধিকার পাননি।
আজ পালিতে ২০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন প্রধানমন্ত্রী। তার মধ্যে রয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরের সংযোগকারী বানিহাল-কাজ়িগুন্ড সুড়ঙ্গ ও রাতলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। মোদীর কথায়, ‘‘যোগাযোগকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। আর বিদ্যুৎ প্রকল্প জম্মু-কাশ্মীরকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।’’ সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে পশ্চিম এশিয়া থেকে আসা এক প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তাঁর দাবি, পশ্চিম এশিয়ার ওই প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা কাশ্মীরে লগ্নি করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সাত দশকে কাশ্মীরে বিনিয়োগ হয়েছিল ১৭ হাজার কোটি টাকা। গত দু’বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার কোটি টাকায়।’’ তাঁর আশা, স্বাধীনতার ‘অমৃত কাল’ অর্থাৎ আগামী ২৫ বছরে নয়া সাফল্যের ইতিহাস তৈরি করবে জম্মু-কাশ্মীর।
পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে তাঁর সরকার জম্মু-কাশ্মীরের পঞ্চায়েতগুলিকে ২২ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে বলে জানান মোদী। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, গণতন্ত্র ও দৃঢ়তার এক নয়া উদাহরণ তৈরি হচ্ছে জম্মু-কাশ্মীরে। তাঁর কথায়, ‘‘গ্লাসগোয় কার্বনমুক্ত পরিবেশ গড়া নিয়ে আলোচনা করেছেন পণ্ডিতেরা। ভারত সাম্বার পালি পঞ্চায়েতকে কার্বনমুক্ত করার পথে এগোচ্ছে।’’ রান্নার গ্যাসের সংযোগ থেকে জন ওষধি কার্ড, সব ক্ষেত্রেই জম্মু-কাশ্মীরকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে তাঁর সরকার।
সম্প্রতি জম্মুতেই জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন সিআইএসএফ অফিসার। এ দিনও সংঘর্ষে নিহত হয়েছে তিন জঙ্গি। ফলে সন্ত্রাস বন্ধ হওয়ার কোনও লক্ষণ আপাতত দেখা যাচ্ছে না। রাজনীতিকদের একাংশের অবশ্য দাবি, প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে কাশ্মীরে কোনও হরতাল হয়নি। সেটা তাৎপর্যপূর্ণ। কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির বক্তব্য, ‘‘ভাল কাজকে আমরা সব সময়েই সমর্থন করি। কিন্তু আপনি কি দাবি করতে পারেন যে জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে? সেখানে কি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার?’’