ছবি: পিটিআই।
নোট বাতিলের কার্যকারিতা নিয়ে আগেই প্রশ্ন উঠেছিল। প্রধানমন্ত্রীর আর্জিতে সেই প্রশ্ন ফের উঠল।
চার বছর আগে নোট বাতিলের ঘোষণা করে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, দেশ থেকে সব কালো টাকা দূর হয়ে যাবে। আজ প্রধানমন্ত্রী নিজেই হতাশা প্রকাশ করলেন এই বলে— দেশের ১৩০ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র দেড় কোটি মানুষ আয়কর মেটান। যাঁরা কর মেটাচ্ছেন না, তাঁদের স্বেচ্ছায় এগিয়ে কর মেটানোর জন্য আর্জি জানিয়েছেন তিনি। যা দেখে বিরোধী শিবির এবং অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেই মেনে নিলেন, অনেকেই কর মেটান না। অর্থাৎ দেশে এখনও অনেকেই কালো টাকার মালিক।
প্রধানমন্ত্রী আজ আত্মনির্ভর ভারতের জন্য কর মেটানোর কথা ভাবতে দেশের নাগরিকদের ‘আত্মসমীক্ষা’ করতে বলেছেন। অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের মতে, লকডাউনের জেরে রাজকোষের যা দশা, তাতে এই আহ্বান জানানো ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর উপায়ও নেই। কারণ অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসে কেন্দ্রীয় করে রাজ্যের ভাগ মিটিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের আয় হয়েছে মাত্র ১.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা। যা গত বছরের এপ্রিল-জুনের তুলনায় প্রায় ৪৭ শতাংশ কম। তিন মাসে কেন্দ্রের মোট আয় মাত্র ১.৫৪ লক্ষ কোটি টাকা। সারা বছরের আয়ের লক্ষ্যের ৭ শতাংশেরও কম।
আরও পড়ুন: গভীর কোমায় চলে গেলেন প্রণব, রয়েছেন ভেন্টিলেশনেই
আরও পড়ুন: স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কথা স্মরণ করে কর মেটানোর ডাক মোদীর
রাজকোষের এই টানাটানি দশাতেই আজ প্রধানমন্ত্রী নাগরিকদের স্বেচ্ছায় কর মেটানোর আর্জি জানিয়েছেন। অর্থনীতিবিদদের মতে, এ থেকে স্পষ্ট— অনেকে কর মেটাচ্ছেন না জেনেও সরকার কিছু করতে পারছে না। মোদী আজ নিজেই বলেছেন, “যাঁরা কর দিতে পারেন, কিন্তু আয়কর ব্যবস্থার আওতায় নেই, তাঁরা স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসুন।”
আয়করদাতার হিসেব
১৩০ কোটির বেশি জনসংখ্যার দেশে কত জন আয়কর জমা করেন মাত্র ১.৪৬ কোটি
• ১ কোটি মানুষ নিজেদের আয় ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকার মধ্যে দেখান
• ৪৬ লক্ষ নিজেদের আয় ১০ লক্ষ টাকার বেশি দেখান
• ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য আয়কর রিটার্ন ফাইল করেছিলেন ৫.৭৮ কোটি
• ১.০৩ কোটি বলেছেন, তাঁদের আয় ২.৫ লক্ষ
টাকার কম
• ৩.২৯ কোটি বলেছেন, তাঁদের আয় ২.৫ থেকে ৫ লক্ষ টাকার মধ্যে
• সব মিলিয়ে ৪.৩২ কোটি বলেছেন, তাঁদের আয় ৫ লক্ষ টাকার মধ্যে, ২০১৯-এর বাজেট অনুযায়ী এঁদের আয়কর দিতে হবে না
• ৩.১৬ লক্ষ নাগরিক জানিয়েছেন, তাদের আয় ৫০ লক্ষ টাকার বেশি
• ৮,৬০০ জন জানান, তাঁদের আয় ৫ কোটি টাকার বেশি
• ২,২০০ জন পেশাদার জানান, আয় ১ কোটি টাকার বেশি
প্রধানমন্ত্রীর যুক্তি, গত ছয় সাত বছরের চেষ্টায় আয়কর রিটার্ন ফাইলের সংখ্যা আড়াই কোটি বেড়েছে। এটা বড় রকমের উন্নতি। কিন্তু তা সত্ত্বেও করদাতাদের সংখ্যা যে খুবই কম, তা অস্বীকারের উপায় নেই। মোদী বলেন, “আমাদের আত্মসমীক্ষা করতে হবে। আত্মনির্ভর ভারতের জন্যই তা জরুরি। এটা শুধু আয়কর দফতরের দায়িত্ব নয়। সব ভারতীয়ের দায়িত্ব।”