সোমবার সংসদের বাইরে মোদী। ছবি: পিটিআই।
দেশের সব মানুষকে ‘বাহুবলী’ হওয়ার আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
জনপ্রিয় দক্ষিণের সিনেমার মূল চরিত্র বাহুবলী ছিলেন অমিত শক্তিধর। সেই নায়কের প্রসঙ্গ তুলে আজ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, “যাঁরা ইতিমধ্যেই বাহু বা হাতে করোনা প্রতিষেধকের টিকা নিয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই বাহুবলী হয়ে উঠেছেন। ইতিমধ্যেই ৪০ কোটি মানুষ টিকা নিয়ে বাহুবলী হয়েছেন। এটা আমাদের আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।” সরকারের ব্যাখ্যা, প্রধানমন্ত্রী চান, দেশের সব মানুষ দ্রুত প্রতিষেধক নেওয়ায় একশো কোটির বাহুবলীর দেশে পরিণত হোক ভারত। সরকারের লক্ষ্য করোনার তৃতীয় ধাক্কার আগে যত বেশি সম্ভব মানুষকে টিকাকরণের আওতায় আনা।
সেই উদ্দেশ্যেই আজ বাদল অধিবেশনের প্রথম দিন সকালে দেশবাসীকে টিকা নেওয়ার প্রশ্নে উৎসাহ জোগাতে বাহুবলী শব্দবন্ধের সাহায্য নেন তিনি। জনপ্রিয় সিনেমাটিকে মিলিয়ে দেন টিকাকরণের সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হতে সময় লাগেনি। এক নেট-নাগরিক লেখেন, ‘‘বাহুবলী সিনেমার যেমন দু’টি পর্ব ছিল। তেমনই এখানেও করোনা প্রতিষেধকের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ় রয়েছে।’’ আর এক জনের মন্তব্য, ‘‘করোনা ভাইরাস হল কাটাপ্পা। যা অতর্কিতে আক্রমণ করে থাকে। তবে বাস্তব জীবনে সিনেমার মতো গা-ছাড়া দিলে সমস্যার। কারণ বাস্তব জীবনে কোনও সিক্যুয়েল থাকে না।’’
প্রধানমন্ত্রী টিকাকরণে জোর দেওয়ার কথা বললেও, সরকারের টিকাকরণ কর্মসূচি নিয়ে গোড়া থেকেই প্রশ্ন উঠেছে। গত সাত মাসে অন্তত ছ’বার টিকাকরণ নীতিতে পরিবর্তন করেছে সরকার। ফলে বিভ্রান্ত মানুষ। এখনও যথেষ্ট প্রতিষেধকের অভাবে ভুগছে কম-বেশি সব রাজ্যই। বিরোধীদের অভিযোগ, সরকারের দূরদৃষ্টির অভাবে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম টিকা উৎপাদন হচ্ছে দেশে। নীতিগত স্বচ্ছতার কারণে বিদেশি সংস্থাগুলিও এ দেশে টিকা বিক্রিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। যার ফলে টিকাকরণ কর্মসূচি গতি হারাচ্ছে। জোগান কমায় কমে গিয়েছে টিকাকরণের হারও। এই হারে টিকাকরণ হলে, সরকারের এ বছরের মধ্যে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে থাকা সব মানুষকে টিকার দুই ডোজ় দেওয়া যে সম্ভব হবে না তা বুঝতে পারছেন স্বাস্থ্য কর্তারাও।
বাদল অধিবেশনে বিরোধীরা টিকাকরণ প্রশ্নে সরকারকে আক্রমণ শানানোর প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বুঝে আজ নিজেই টিকাকরণ পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে আলোচনার প্রস্তাব দেন মোদী। সকালে বাদল অধিবেশন শুরুর আগে প্রথা মাফিক সাংবাদিকদের প্রধানমন্ত্রী জানান, “সরকার সংসদে ও সংসদের বাইরে রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছুক। সংসদে আমি সব দলের সাংসদদের টিকাকরণ নিয়ে সরকারকে কঠিন ও কড়া প্রশ্ন করতে বলছি, যাতে সরকারের নীতির খামতিগুলি চিহ্নিত করা যায়।”
প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিলেও, আজ দিনভর টিকাকরণ নিয়ে সংসদের উভয় কক্ষে আলোচনার দাবিতে সরব হওয়া বিরোধীদের কোনও আশ্বাস দিতে দেখা যায়নি সরকার পক্ষকে। পরিবর্তে বিকেলে কেন্দ্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছ’টার সময়ে সব দলের নেতাদের সঙ্গে কোভিড পরিস্থিতি ও টিকাকরণ নিয়ে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে বিস্তারিত ভাবে সরকারের কাজের খতিয়ান ও টিকাকরণ কর্মসূচির সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরা হবে। যা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। সংসদ চলাকালীন এ ধরনের পৃথক বৈঠকের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, “অধিবেশন চলাকালীন সংসদের বাইরে এ নিয়ে আলোচনার কোনও প্রয়োজন নেই। কারণ সংসদ হল সর্বোচ্চ। শোনা যাচ্ছে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নীরব থাকবেন। তাঁর উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব বক্তব্য রাখবেন। পরিবর্তে আমরা চাই, প্রধানমন্ত্রী টিকাকরণ প্রশ্নে সংসদে বক্তব্য রাখুন।”