নরেন্দ্র মোদী ও শিনফিং। —ফাইল চিত্র।
ড্রাগন ও হাতির একসঙ্গে নাচ! দেশ ও দেশবাসীর স্বার্থে এটাই চিন ও ভারতের কাছে একমাত্র নির্ভুল বিকল্প। মমল্লপুরমের বৈঠক শেষে এই প্রস্তাবই দিলেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি শিনফিং।
বৈঠকের ঠিক এক দিন আগে কাশ্মীর ঘিরে সংঘাতপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছেছিল দুই দেশ। ‘চেন্নাই কানেক্ট’ এনে দিল সাময়িক স্বস্তি। গত কাল এবং আজ মিলিয়ে মোট ছ’ঘণ্টা শি-র সঙ্গে একান্ত আলোচনার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘‘আমরা প্রতিজ্ঞা করেছি, নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ বাড়িয়ে তাকে গোটা বিশ্বের আলোচ্য করে তুলব না। ‘উহান স্পিরিট’ আমাদের সম্পর্ককে নতুন গতিবেগ দিয়েছিল। ‘চেন্নাই কানেক্ট’ নতুন যুগের সূচনা করল।’’ একই সুরে চিনা প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘‘আমরা বন্ধু হিসেবেই হৃদয় খুলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে স্পষ্ট আলোচনা করেছি। গভীর এবং ভাল আলোচনা হয়েছে।’’
বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ভারতের ঘাটতি কমানোর একটি নতুন বন্দোবস্ত (ভারতের অর্থমন্ত্রী এবং চিনের উপপ্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে) তৈরির সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে দিল্লির বড় পাওনা। বিশেষজ্ঞদের মতে, মমল্লপুরমে অন্তত প্রকাশ্যে এক বারের জন্যও কাশ্মীরের ছায়া না-পড়ার বিষয়টি সাউথ ব্লককে কিছুটা চাপমুক্ত করেছে। বিদেশসচিব বিজয় গোখলে জানিয়েছেন, জম্মু ও কাশ্মীরের বিষয়টি আলোচনায় ওঠেনি। তবে ভারতের অবস্থান সর্বজনবিদিত। তা হল, এটি সম্পূর্ণ ভাবে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
খতিয়ান মমল্লপুরম পাওয়া গেল • বাণিজ্য ঘাটতি মেটাতে নতুন বন্দোবস্ত • প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে উন্নততর যোগাযোগ • সীমান্তে নতুন আস্থাবর্ধক পদক্ষেপের আশ্বাস • সন্ত্রাস ও মৌলবাদ রুখতে সহযোগিতা • নাগরিকদের যোগাযোগ বাড়াতে কর্মসূচি পাওয়া গেল না • পাকিস্তানের নাম করে সীমান্তপারের ভারত-বিরোধী সন্ত্রাসের নিন্দা • এনএসজি-তে ঢোকার ছাড়পত্রের প্রতিশ্রুতি • চিন-পাকিস্তান আর্থিক করিডর বন্ধের আশ্বাস • বিসিআইএম করিডর দ্রুত শুরুর আশ্বাস • এফএটিএফ-এর কালো তালিকায় পাকিস্তানকে তোলার প্রতিশ্রুতি সংশয় • বিদেশসচিব বলেছেন, কাশ্মীর নিয়ে কথা হয়নি। কিন্তু ইমরান খানের চিন সফর নিয়ে কথা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন, ইমরান প্রসঙ্গ এল কী করে?
যদিও এর কিছু পরেই গোখলে বলেছেন, ‘‘পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাম্প্রতিক চিন সফরের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন শি।’’ ইমরানের চিন সফরের অন্যতম আলোচ্যই ছিল কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ এবং তার তীব্র বিরোধিতা। চিন-পাক যৌথ বিবৃতিতেও কড়া ভাবে কাশ্মীরের উল্লেখ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে কাশ্মীরকে আলোচনায় অচ্ছুত রেখে ইমরানের সফরের কোন দিকটি নিয়ে কথা বললেন মোদী এবং শি— তা নিয়ে কৌতূহলী কূটনৈতিক শিবির।
৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের জেরেই অগস্টে স্থগিত হয়ে গিয়েছিল ভারত ও চিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। দু’দেশের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি— ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র সেই বৈঠকে বসার কথা ছিল। বিদেশ মন্ত্রক জানাচ্ছে, খুব শীঘ্রই বৈঠকটি হবে বলে ঐকমত্য হয়েছে মমল্লপুরমে।
দিল্লির কর্তাদের মতে, অতীতে বৈঠকের পরেও চিনের ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু আজ চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যমে শি-র সফর সংক্রান্ত প্রতিবেদনে কাশ্মীরের কোনও উল্লেখ নেই। বরং তাতে বলা হয়েছে, ‘‘সীমান্ত-সমস্যার ক্ষেত্রে দু’পক্ষের কাছেই গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজতে হবে। পরস্পরের মূল বিষয়গুলি নিয়ে এগোতে হবে সতর্ক ভাবে। যে সমস্যাগুলির এক বারে সমাধান সম্ভব নয়, সেগুলিকে যথাযথ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’’ দিল্লির মতে, এ সবই মমল্লপুরমের বিশেষ প্রাপ্তি।