বিজেপি সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পর্যবেক্ষক হিসেবে নরেন্দ্র সিংহ তোমর সোমবার পানাজি পৌঁছবেন। তাঁর উপস্থিতিতে সাওয়ন্তকেই বিধায়ক দলের নেতা হিসেবে নির্বাচিত করা হবে।
ফাইল চিত্র।
জিতেও শান্তিতে নেই বিজেপি।
গোয়া, মণিপুরে মুখ্যমন্ত্রী পদের একাধিক দাবিদার। একজনকে মুখ্যমন্ত্রী করা হলে অন্য দাবিদারেরা কী করবেন, তা নিয়ে আশঙ্কা। তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়ে সন্তুষ্ট রাখতে হবে। উত্তরাখণ্ডে আবার যাঁর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কথা ছিল, তিনি নিজেই ভোটে হেরে বসে রয়েছেন। উত্তরপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু উপমুখ্যমন্ত্রী ভোটে হেরে যাওয়ায় তাঁকে ফের ওই পদে ফেরানো নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।
এই জট কাটাতে শনিবার মাঝরাত পর্যন্ত বৈঠক করে রবিবার সকালে ফের বৈঠকে বসতে হয়েছিল অমিত শাহকে। সন্ধ্যায় খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে উত্তরপ্রদেশ, গোয়া, উত্তরাখণ্ডে সরকার গঠন নিয়ে বৈঠকে বসতে হল। যোগী আদিত্যনাথ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ২৫ মার্চ দ্বিতীয় বার শপথ নিতে চলেছেন। আজ এন বীরেন সিংহই দ্বিতীয় বার মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী হবেন বলেও ঠিক হয়েছে। কিন্তু উত্তরাখণ্ড ও গোয়ায় কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন, তা নিয়ে শনিবার ও রবিবার অমিত শাহকে ধারাবাহিক বৈঠকে বসতে হয়। এর পরে রবিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে মোদী নিজেই অমিত শাহ, রাজনাথ, জে পি নড্ডা, রাজনাথ সিংহ, বি এল সন্তোষের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।
উত্তরাখণ্ডে বিদায়ী সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামি নিজের কেন্দ্রে হেরে যাওয়ায় তাঁকে ফের মুখ্যমন্ত্রী করা উচিত হবে কি না, তা নিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব চিন্তায় পড়েছিলেন। রবিবার সকালে অমিত শাহ এ নিয়ে ধামি, রাজ্যের নেতা মদন কৌশিক ও রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্কের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। দলের সভাপতি নড্ডা, রাজনাথ সিংহ, সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত নেতা সন্তোষ ও উত্তরাখণ্ডের প্রবীণ নেতা সতপাল মহারাজও সেখানে হাজির হন। ধামি মুখ্যমন্ত্রী না হলে সতপালের নাম নিয়ে আলোচনা চলছিল। প্রথমে ঠিক ছিল, রবিবার সন্ধ্যাতেই দেহরাদূনে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পর্যবেক্ষক রাজনাথ সিংহ, মিনাক্ষী লেখির উপস্থিতিতে বিধায়ক দলের বৈঠক হবে। তা পিছিয়ে গিয়ে সোমবার হবে বলে ঠিক হয়েছে।
বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, ২০১৭-য় হিমাচলে বিজেপি ভোটে জিতে ক্ষমতায় ফিরলেও বিদায়ী সরকারের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম কুমার ধূমল ভোটে হেরে যান। তাঁর বদলে জয়রাম ঠাকুরকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়। উত্তরাখণ্ডেও একই রীতি মানা যেত। কিন্তু গত পাঁচ বছরে উত্তরাখণ্ডে দু’বার মুখ্যমন্ত্রী বদলের পরে ধামি সবে মাত্র গত জুলাইয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। কেউই আবার নতুন মুখ চাইছেন না। একাধিক বিধায়ক ধামিকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সমর্থন জানিয়েছেন। অন্তত ছয় জন বিজেপি বিধায়ক ধামির জন্য নিজের জেতা আসন ছেড়ে দিতেও সম্মত হয়েছেন।
রবিবার মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী পদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে শনিবার রাতে দিল্লিতে বীরেন ও বিশ্বজিৎকে ডেকে পাঠানো হয়। অমিত শাহের বাড়িতে দীর্ঘ বৈঠক হয়। তার পরে আজ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পর্যবেক্ষক হিসেবে নির্মলা সীতারামন, কিরেণ রিজিজুদের উপস্থিতিতে বীরেনের নাম আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী পদের অন্য দাবিদার বিশ্বজিৎ সিংহকে কী ভাবে সামলানো হবে, তা নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বের চিন্তা রয়েছে।
একই ভাবে গোয়ায় ফের প্রমোদ সাওয়ন্তকেই মুখ্যমন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে বিজেপি। সেখানেও আরেক বিশ্বজিৎ, বিশ্বজিৎ রাণে মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার হয়ে উঠেছেন। কারণ গোয়ায় বিজেপির আসন বৃদ্ধিতে রাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। পাঁচ বছর আগে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সময় তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। শনিবার রাতে অমিত শাহ তাঁর বাড়িতে সাওয়ন্ত ও রাণেকে নিয়ে বৈঠক করেন। মাঝরাতে অমিত শাহের বাড়ি থেকে বেরিয়েই সাওয়ন্ত সোজা গোয়ার বিমান ধরেন। বিজেপি সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পর্যবেক্ষক হিসেবে নরেন্দ্র সিংহ তোমর সোমবার পানাজি পৌঁছবেন। তাঁর উপস্থিতিতে সাওয়ন্তকেই বিধায়ক দলের নেতা হিসেবে নির্বাচিত করা হবে।