নরেন্দ্র দাভোলকর
মাথার পিছনে গুলিটা লাগতেই মাটিতে পড়ে গিয়েছিলেন প্রাতর্ভ্রমণে যাওয়া ৬৭ বছরের বৃদ্ধ। দ্বিতীয় গুলিটা আটকে গেল। তাড়াতাড়ি সেটাকে বের করে ফের গুলি। এ বারে ডান চোখের উপরে। সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ খুনের মূল অভিযুক্তের মুখে যুক্তিবাদী নরেন্দ্র দাভোলকরকে হত্যার এমন স্বীকারোক্তিতে স্তম্ভিত গোয়েন্দারা। কর্নাটক পুলিশের কাছে দেওয়া চোদ্দ পাতার স্বীকারোক্তিতে শরদ কালাসকর জানিয়েছে, গৌরী লঙ্কেশ ছাড়াও দাভোলকর এবং সিপিআই নেতা গোবিন্দ পানসারে খুনে যুক্ত ছিল সে। যদিও দাভোলকর খুন নিয়ে শরদের এই স্বীকারোক্তি তার বিরুদ্ধে কতটা ব্যবহার করা যাবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে আইনজ্ঞ মহলে। তবে এই স্বীকারোক্তি গোটা ষড়যন্ত্রের স্বরূপ তুলে ধরতে সাহায্য করবে বলেই মত তাঁদের।
গত বছর অক্টোবরে ধৃত শরদ তার জবানবন্দিতে জানিয়েছে, উগ্র হিন্দুত্ববাদী একটি সংগঠনের কিছু সদস্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। এই সব খুনের মূল ষড়যন্ত্রী বীরেন্দ্রসিন তাওড়ে তাকে বোঝায়, হিন্দুধর্মের বিরুদ্ধে বলছে, এমন কিছু খারাপ লোককে সরিয়ে দিতে হবে। তার পরেই শুরু হয় অস্ত্র প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য ছক সাজানো। এই তাওড়েকে সিবিআই গ্রেফতার করেছে। শরদের দাবি, তাওড়ে তাকে বলেছিল, দাভোলকরের মাথায় গুলি করতে যাতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। সেই নির্দেশ মেনেই সে মাথায় গুলি করে খুন করে প্রবীণ যুক্তিবাদী নেতাকে। পরে এই তাওড়ের সূত্রেই শরদের আলাপ হয় গৌরী লঙ্কেশ খুনের আর এক অভিযুক্ত অমোল কালের সঙ্গে। জবানবন্দিতে শরদ জানিয়েছে, বম্বে হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বি জি কোলসে পাটিলকেও খুনের লক্ষ্য ছিল তাদের।
শরদের মুখে তাঁর খুনের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি জেনে মোটেই অবাক হননি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি পাটিল। কুসংস্কার-বিরোধী বিলটি নিয়ে তিনি দাভোলকরের সঙ্গেই কাজ করছিলেন। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জানিয়েছেন, তাঁকে বহু বার নানা ভাবে খুনের হুমকি দেওয়া হয়। পুনালেকর নামে একজন টিভি সম্প্রচার চলাকালীনই তাঁকে হুমকি দেয়। হুমকি দিয়ে চিঠিও পাঠানো হত। তিনি সে সবই পুলিশের হাতে তুলে দিলেও তাঁর নিাপত্তার জন্য কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়।নি। এ নিয়ে একাধিক বার অ্যাসোসিয়েশন বিক্ষোভ দেখায়। গত তিন-চার মাস ধরে অবশ্য তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে।