মূলত পুরুষতান্ত্রিক রাজ্য নাগাল্যান্ড। সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রায় কোনও ক্ষমতাই মহিলাদের নেই এখানে। তাঁদের যা করতে বলা হয়, তাঁরা সেটুকুই পালন করেন মাত্র। কিন্তু সেই নাগাল্যান্ডের মহিলারাই এ বার পথ দেখালেন গোটা রাজ্যকে, পরিবর্তনশীল প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়ে।
বৃষ্টিপাতের বড় অভাব নাগাল্যান্ডের বেশির ভাগ অঞ্চলে। তার উপর আবহাওয়ার যত পরিবর্তন হচ্ছে, বৃষ্টিপাতের পরিমাণও তত কমছে। ফলে চাষাবাদে খুব বড় প্রভাব পড়তে শুরু করে।
নাগাল্যান্ডের চিজামি গ্রামের জীবনধারণের মূল উপায় হল কৃষিকাজ। কিন্তু বৃষ্টিপাত না হলে মাঠে ভাল ফসল ফলে না। রোজগারের জন্য তাই একে একে পরিবারের সব পুরুষেরাই কৃষিকাজ থেকে মুখ ঘোরাতে শুরু করেন।
কেউ রাজমিস্ত্রির কাজ শুরু করেন, তো কেউ কাছাকাছি কোনও কারখানায় যোগ দেন। শেষ কয়েক বছরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এতটাই কমে গিয়েছে যে, খাল-বিল প্রচুর শুকিয়ে গিয়েছে। জমিতে কীটের উপদ্রব বেড়ে গিয়েছে। ফসলও নষ্ট হয়ে যায়।
এই অবস্থায় চিজামির মহিলারা এগিয়ে আসেন। বদলে চলা প্রকৃতির সঙ্গে লড়ার কৌশল বাতলে দেন তাঁরা। পুরুষতান্ত্রিক এই রাজ্যে এখন মহিলাদের দেখানো পথে চলেই ফের মাঠে ফিরেছেন পুরুষেরা। কী ভাবে?
এই কাজে সাহায্য করেছে নর্থ ইস্ট নেটওয়ার্ক নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ২১ বছর ধরে নাগাল্যান্ডে মহিলাদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে চলেছে এই সংস্থাটি। চিজামির ওই গ্রামে এসে তাঁরা মহিলাদের নিয়ে একটি কর্মশালা করে।
কর্মশালার বিষয়বস্তু ছিল চাষাবাদ সম্বন্ধীয়। কোন আবহাওয়ায়, কোন পরিস্থিতিতে কী চাষ করা যায়, কী ভাবে চাষ করলে ফসল ভাল ফলানো যায় এই নিয়ে পাঠ দেওয়া হয় গ্রামের মহিলাদের।
এর পাশাপাশি সিড ব্যাঙ্কের ভূমিকাও মহিলাদের বোঝায় ওই সংস্থা। সব শিখে ২০১৮ সালে চিজামির মহিলারা মিলে সিড ব্যাঙ্ক তৈরি করেন। তাতে ২২৬টিরও বেশি প্রজাতির বীজ তাঁরা সংগ্রহ করে রাখেন।
গ্রামের চাষিরা যাঁরা চাষাবাদ ছেড়ে অন্য কাজে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের প্রয়োজন মতো বিনা পয়সায় বীজ বিতরণ শুরু করেন তাঁরা। তবে একটা শর্ত ছিল, যত পরিমাণ বীজ চাষের জন্য একজন নিয়েছেন, পরের বছর তাঁকে দ্বিগুণ বীজ জমা করতে হবে এই ব্যাঙ্কে।
এতে একদিকে যেমন চাষ শুরু করার জন্য নগদ অর্থ লাগল না চাষিদের, তেমন ব্যাঙ্কে বীজের ঘাটতির পথও বন্ধ হল। কে কতটা বীজ ধার নিয়েছেন, তার একটা হিসাবের খাতাও বানিয়ে ফেলেন মহিলারা।
পাশাপাশি শুষ্ক আবহাওয়ায় কী চাষ করা উচিত, ফসলের যত্ন কী ভাবে নেওয়া উচিত, তাও হাতে ধরে চাষিদের শিখিয়ে দেন মহিলারা। যেমন হায়দরাবাদ থেকে এক জাতীয় ভুট্টার বীজ চাষ করা হয়েছে চিজামিতে। যার ফলনও খুব ভাল হয়েছে। ফলে বৃষ্টি না হওয়ায় এতদিন যে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হত চাষিদের, তা অনেকটাই কমে গিয়েছে।
এখন মেঘালয় এবং তেলঙ্গানার সঙ্গেও সিড ব্যাঙ্কের বীজ আদানপ্রদান করেন তাঁরা। চিজামিতে জীবনধারণ আমূল বদলে দিয়েছেন মহিলারা।
মহিলাদের কাজে এতটাই মুগ্ধ গোটা গ্রাম যে, ৬ সদস্যের গ্রামসভায় দু’জন মহিলা সদস্যও নির্বাচিত হয়েছেন চলতি বছর। চিজামির ইতিহাসে এটা প্রথম ঘটল।