আপৎকালীন জানলার কাচ ভেঙে কামরায় ঢোকার চেষ্টা ট্রেনের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকদের। ছবি: ইউটিউব।
আবারও উত্তরপ্রদেশ। জুনেইদ খুনের ঘটনার রেশ এখনও দগদগে। এরই মধ্যে ফের সেখানে ট্রেনের ভিতর আক্রান্ত হল এক মুসলিম পরিবার। এ বার ফারুকাবাদ থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।
গত বুধবারের ঘটনা। আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে শিকোহাবাদ-কাসগঞ্জ প্যাসেঞ্জার ট্রেনে ফিরছিল ওই মুসলিম পরিবারটি। সব মিলিয়ে জনা দশেক হবে। তাঁদের বাড়ি ফারুকাবাদ জেলায়। বিয়েবাড়ি থেকে সেখানেই ফিরছিলেন তাঁরা। অভিযোগ, ট্রেনের ভিতরেই তাঁদের উপর চড়াও হয় ৩০-৩৫ জনের একটি দল। লোহার রড, লাঠি নিয়ে হামলা চালানো হয়। বেধড়ক মারধর করা হয় সকলকে। ছিনিয়ে নেওয়া হয় গয়না, মোবাইল-সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র। এমনকী, মহিলাদের শ্লীলতাহানি করা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁদের সকলকে ফারুকাবাদের রামমোহন লোহিয়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎকরা জানিয়েছেন, সকলের মাথায় এবং পেটে গুরুতর আঘাত লেগেছে। হামলাকারীদের হাত থেকে পরিবারটিকে বাঁচাতে আহত হয়েছেন ট্রেনের বেশ কয়েক জন সহযাত্রীও।ওই পরিবারের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, তাদের সঙ্গে ছিলেন থাকা বছর সতেরোর শারীরিক ও মানসিক ভাবে ভারসাম্যহানী তরুণকেও ছাড় দেওয়া হয়নি।
মোবাইল কেড়ে নেওয়া থেকেই ওই গণ্ডগোলের সূত্রপাত বলে জানিয়েছে পুলিশ। এর পরেই দুষ্কৃতীরা পাশের কামরা থেকে সঙ্গীদের ডেকে আনে। তার পর, চেন টেনে নিবকারোরি স্টেশনের কাছে ট্রেন থামায়। সেই সময় ভয় পেয়ে যাত্রীরা কামরার সব দরজা-জানলা বন্ধ করে দেন। তখনই কামরার বাইরে থেকে শুরু হয় পাথর বৃষ্টি। হঠাৎই আপৎকালীন জানলার কাচ ভেঙে কামরায় ঢোকে ট্রেনের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কয়েক জন যুবক। এর পরই শুরু হয় মারধর। তবে, অন্য একটি সূত্রের মতে এক মহিলার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা থেকেই ঘটনার সূত্রপাত।
ঘটনায় হাত ভেঙেছে পরিবাবের প্রধান বছর পঞ্চাশের মহম্মদ শাকিরের। তার মাথাতেও জোর চোট লেগেছে। পরে শাকির বলেছেন, ‘‘ওরা আমাদের উপরে রড নিয়ে চড়াও হয়, মহিলাদের শ্লীলতাহানি করে। ছাড় দেয়নি আমাদের প্রতিবন্ধী ছেলেকেও। হামলার সময়ে ওরা বলছিল, এরা মুসলিম। এদের মার।’’
তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শনিবার।— পিটিআই
শাকিরের ছেলে আরসান বলেছেন, ‘‘ওরা আমার মা ও বোনের জামাকাপড় ছিঁড়ে দিয়েছিল। সোনার গয়না ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছে। এর পরেই ওরা পালিয়ে যায়।’’ কামরার অন্য যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, ১০০ নম্বরে ডায়াল করেও কোনও লাভ হয়নি। প্রতি বারই ফোন কেটে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ যাত্রীদের।
ফারুকাবাদের রেল পুলিশ সুপার ও পি সিংহ বলেন, “ওই পরিবারের চার জনের মাথায় আঘাত লেগেছে। এবং পরিবারের প্রত্যেকেই পেটে চোট পেয়েছেন। প্রাথমিক ভাবে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৯৫ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরে আরও ধারা যোগ করা হবে।” উত্তর প্রদেশ সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, আইন আইনের পথেই চলবে।
আরও পড়ুন: জুনেইদকে খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত গ্রেফতার
গত ২২ জুন ট্রেনের ভিতরই দুষ্কৃতীদের হামলার শিকার হয়েছিল ১৭ বছরের জুনেইদ ও তার পরিবারের চার সদস্য। জুনেইদকে ছুরি মেরে খুন করে দুষ্কৃতীরা। ঘটনার দিন ইদের বাজার করে দিল্লি থেকে বাড়ি ফিরছিল তারা। হামলার আগে তাদের ‘দেশ বিরোধী’, ‘গরুর মাংস খায়’ ইত্যাদি বলে গালিও দিয়েছিল হামলাকারীরা।
গো রক্ষার নামে মুসলিমদের উপর হামলার ঘটলায় প্রবল সমালোচনায় মুখে উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথের সরকার। চাপে পড়ে এহেন ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী। এমনকী, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদীও বলেছিলেন, ‘‘গোরক্ষার নামে মানুষ খুন বরদাস্ত করা যায় না। কেউই নিজের হাতে আইন তুলে নিতে পারে না।’’ কিন্তু, হামলা থামেনি তাতেও।
গত বুধবারের ঘটনা ফের প্রমাণ করল প্রধানমন্ত্রীর বার্তা সমাজের সব স্তরে পৌঁছচ্ছে না।