গণপিটুনি অজমেরে —প্রতীকী চিত্র।
নরেন্দ্র মোদীর রাজত্বে মুসলিমদের গণপিটুনির শিকার হওয়া নতুন কোনও ঘটনা নয়। যে কোনও অছিলায় মুসলিমদের উপরে হিন্দুত্ববাদীদের চড়াও হওয়ার ঘটনা হামেশাই ঘটছে। এ বার সেই তালিকায় যুক্ত হল রাজস্থানের অজমেরে ‘চুরির অপরাধে’ এক ভিক্ষাজীবীকে মারধরের ঘটনা।
ঘটনার ভিডিয়ো ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। তাতে শোনা গিয়েছে, ওই মুসলিম ভিক্ষাজীবীকে ‘পাকিস্তানে যাও’ বলে হুমকি দিচ্ছে অভিযুক্তেরা। মূল অভিযুক্ত ললিত শর্মা-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের সন্দেহ, ললিত সম্ভবত বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্য। তার সম্পর্কে খোঁজখবর করা হচ্ছে।
গত রবিবার মধ্যপ্রদেশেও সংখ্যালঘু নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে। এক মুসলিম চুড়ি বিক্রেতাকের মারধরের ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই নিগ্রহের ঘটনা নিয়ে কংগ্রেসের অভিযোগ, যে সব রাজ্যে আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন সেখানে ধর্মীয় মেরুকরণের লক্ষ্যে এই ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।
সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োটিতে দেখা গিয়েছে, অভিযুক্তেরা এক ভিক্ষাজীবীকে মারধর করছে। তাঁর সঙ্গে থাকা দুই সন্তানও নিগ্রহ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। তাদের মারতে মারতে অভিযুক্তদের বলতে শোনা গিয়েছে, ‘উত্তরপ্রদেশ থেকে এখানে এসেছো কেন’? ‘এখানে কোনও মসজিদ দেখতে পেয়েছো’? এর সঙ্গে চলছে মারধর। এক অভিযুক্তকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘আমি দেখেছি এরা সোনার গয়না চুরি করেছে। তুমি এক কাজ করো… পাকিস্তানে চলে যাও। তোমরা ভিক্ষা করো, দেখি তোমার পকেটে কী আছে’। এর পরে রাস্তার ধারে দাঁড় করিয়ে ওই ভিক্ষাজীবীর সমস্ত টাকা অভিযুক্তেরা কেড়ে নেয়।
অজমের পুলিশের এক অফিসার জানিয়েছেন, ওই নিগ্রহের ঘটনাটি ঘটেছে গত ২০ অগস্ট। ওই ঘটনায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি।’’ তিনি জানান, তদন্তে নেমে ওই দিনই ললিতকে গ্রেফতার করা হয়। পরের দিন বাকি চার জনকে। অভিযুক্তদের দাবি, ওই পরিচয় গোপন করতেই নিগৃহীত ব্যক্তি নিজেকে ভিক্ষাজীবী বলে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি অপরাধমূলক কাজকর্মে যুক্ত বলেই ললিতেরা তাঁকে মারধর করেছিল। পরে আদালত থেকে জামিন পান পাঁচ অভিযুক্তই।
মধ্যপ্রদেশের ইনদওরের গোবিন্দ নগর এলাকায় গত রবিরাব বিকেলে চুড়ি বিক্রি করার সময় গণপ্রহারের শিকার হন বছর পঁচিশের তসলিম আলি। ওই ঘটনার কড়া নিন্দা করে কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম আজ বলেছেন, ‘‘আগামী বছর যে সব রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন সেখানে পরিকল্পিত ভাবে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ, হিংসা ও মেরুকরণের চেষ্টা করা হচ্ছে।’’ প্রসঙ্গত, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন। কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার টুইট, ‘‘চুরি বিক্রেতাকে মারধর করে ওই দুষ্কৃতীরা হিন্দু সংস্কৃতির অসম্মান করেছে।’’ মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র গত কাল পরোক্ষে প্রহৃত চুড়ি বিক্রেতার দিকেই আঙুল তুলেছিলেন। এ প্রসঙ্গে চিদম্বরমের প্রশ্ন, ‘‘রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই যদি গণপিটুনিকে সমর্থন করেন, তা হলে তিনি ওই পদে রয়েছেন কেন?’’