বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গার।
উন্নাওয়ে ধর্ষিতার গাড়ি ‘দুর্ঘটনা’য় পড়ার ঘটনায় বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারের বিরুদ্ধে সরাসরি ৩০২ (খুন), ৩০৭ (খুনের চেষ্টা) এবং ৫০৬ (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) ধারায় মামলা দায়ের হল। কুলদীপের ভাই মনোজ সেঙ্গার-সহ আরও ৮ জনের নাম রয়েছে এফআইআরে। ধর্ষিতার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ-কর্মীরাই যে কুলদীপকে ধর্ষিতা ও তার পরিবারের গতিবিধির ব্যাপারে তথ্য দিতেন, সে কথাও এফআইআরে রয়েছে। রাতে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যসচিব জানান, এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তেরই সুপারিশ করা হচ্ছে। ধর্ষণের মামলা আগেই সিবিআইয়ে গিেয়ছে।
রবিবার উত্তরপ্রদেশে উন্নাও থেকে রায়বরেলী যাওয়ার পথে একটি ট্রাক ধাক্কা মারে ধর্ষিতার গাড়িতে। প্রথমে পুলিশ জানিয়েছিল, ধর্ষিতার মা এবং ওঁদের আইনজীবী মহেন্দ্র সিংহ মারা গিয়েছেন। পরে জানা গিয়েছে, ধর্ষিতার মা গাড়িতে ছিলেন না। মারা গিয়েছেন ধর্ষিতার কাকিমা এবং তাঁর বোন। ধর্ষিতা নিজে এবং আইনজীবী মহেন্দ্র গুরুতর জখম হয়ে লখনউয়ের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ধর্ষিতার পরিবার সিবিআই তদন্তের দাবি তুলে কালই অভিযোগ করে, হত্যার চক্রান্ত করেই গাড়িতে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ কিন্তু এ দিনও বলছিল, বৃষ্টির মধ্যে অত্যধিক জোরে চালাতে গিয়েই হয়তো দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে সিবিআই তদন্তে আপত্তি নেই বলে জানিয়ে দেন লখনউয়ের ডিজিপি ও পি সিংহ। দিনভর প্রায় সমস্ত বিরোধী দলই বিষয়টি নিয়ে সুর চড়াতে থাকে। সকলেই দাবি করতে থাকেন, ‘এটা দুর্ঘটনা নয়, খুন’। দেখা যায়, সেই ট্রাকটির নম্বরপ্লেট গ্রিজ় দিয়ে কালো করা রয়েছে। শেষ অবধি খুনের মামলা রুজু হল, আতসকাচের তলায় এল পুলিশের ভূমিকাও। ধর্ষিতার সঙ্গে পুলিশ প্রহরা ছিল না কেন, সে প্রশ্নও উঠেছে। পুলিশের একটি সূত্র দাবি করেছে, ধর্ষিতা এবং তার পরিবারই সঙ্গে পুলিশ নিতে অস্বীকার করেছিল। ধর্ষিতার কাকা, যিনি অন্য মামলায় রায়বরেলী জেলে বন্দি, তিনি অভিযোগ করেন যে, পুলিশের কাছ থেকেই সব খবর জেলে বসে পেয়ে যেতেন কুলদীপ। তাঁর অঙ্গুলিহেলনেই রবিবারের ‘অপারেশন’ হয়েছে।
গ্রিজ় দিয়ে কালো করা সেই ট্রাকের নম্বরপ্লেট।
উন্নাও মামলায় গোড়া থেকেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পরে পুলিশ এফআইআরে কুলদীপের নাম রাখতে চায়নি বলে অভিযোগ। ধর্ষিতার বাবাকে কুলদীপের লোকজন মারধর করার পরে পুলিশ হেফাজতেই তাঁর মৃত্যু হয়। অভিযোগ, পুরনো মামলা খুঁচিয়ে তুলেই ধর্ষিতার কাকাকেও জেলে পোরা হয়েছে।
আরও পড়ুন: গ্রামে রাত কাটাতে নির্দেশ, ‘দিদিকে বলো’ দাওয়াই মমতার
এ দিন ধর্ষিতার মা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘পুরো পরিবারটাকে শেষ করে দিচ্ছে ওরা। কুলদীপের লোকজন, নবীন সিংহ-বিনোদ মিশ্ররা রোজ শাসায়। বলে মামলা তুলে না নিলে জানে মেরে দেবে। তা-ই তো হল!’’ নবীন ও বিনোদের নাম এফআইআরে রয়েছে। ধর্ষিতার বাবার হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় যে পুলিশ অফিসার গ্রেফতার হন, তিনি সম্প্রতি জামিন পাওয়ার পরে হুমকি বেড়েছে বলে অভিযোগ।