পুরকর্মীদের ধর্মঘটে জমেছে জঞ্জালের পাহাড়। বৃহস্পতিবার শিলচরে। ছবি: হিমাংশু দে।
রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভায় কর্মীদের বেতন ১৬ মাস ধরে বাকি পড়ে রয়েছে। শিলচর পুরসভা কর্তৃপক্ষ অবশ্য সরকারি বরাদ্দের ভরসায় না থেকে পুরসভা নিজস্ব আয় থেকেই কর্মীদের বেতন মিটিয়ে দিচ্ছেন। রয়েছে তিন মাসের বকেয়া। কিন্তু স্রেফ পুর-কর্মী সংগঠনের নেতাদের ‘ইচ্ছা’-য় ভুগতে হচ্ছে শিলচরবাসীকে। ইউনিয়ন নেতাদের বক্তব্য, ‘‘এটা পুর-কর্মী সংহতির প্রশ্ন।’’ সুতরাং শিলতর পুর এলাকাকে ছাড় দেওয়ার প্রশ্ন নেই।
গত কাল থেকে তিন দিনের এই ধর্মঘট শুরু করেছে ‘সারা অসম পুর কর্মচারী ফেডারেশন’। ফলে জল সরবরাহ ও এনআরসি-র নথি পরীক্ষা ছাড়া পুরসভার সমস্ত ধরনের কাজকর্ম বন্ধ। চতুর্দিকে জঞ্জাল জমছে। মোড়ে মোড়ে আবর্জনার স্তূপ। দুর্গন্ধে নাকে রুমাল দিয়েও হাঁটাচলা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী কাল অবস্থার কতটা অবনতি ঘটবে, তা ভেবেই দুশ্চিন্তায় সাধারণ শিলচরবাসী। ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, দুর্গন্ধময় পরিবেশ ব্যবসাতেও প্রভাব ফেলবে। ছড়াতে পারে রোগ। এ ছাড়া, স্বচ্ছ সর্বৈক্ষণ প্রতিযোগিতায় কী হবে, তা নিয়েও চিন্তায় কেউ কেউ।
ফেডারেশনের বরাক উপত্যকা আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক ননী ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘দেওয়ালে পিঠ ঠেকতেই এই রাস্তায় যেতে হল। ১৬ মাস ধরে বেতন নেই। সরকারের কোনও হেলদোল নেই।’’ সংগঠনের রাজ্য কমিটির সদস্য অমল দাসের অভিযোগ, মন্ত্রী অতুল বরা ও কেশব মহন্ত বৈঠকে বসে পৌষ সংক্রান্তি-বিহুর আগে সমস্ত বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। নিরুপায় হয়েই তাঁদের আন্দোলনে নামতে হয়েছে।
শিলচরের পুর-প্রধান নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর বলেন, ‘‘সরকার টাকা দিচ্ছে না বলে সব পুরসভায় ১৬ মাস ধরে কর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না। কিন্তু শিলচরে বকেয়া মাত্র ৩ মাসের। এখানে নিজস্ব তহবিল থেকে কর্মচারীদের বেতন মিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সে কারণেই ফেডারেশনকে জঞ্জাল নিষ্কাশনের কাজটা চালিয়ে যেতে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু ওঁরা তাতে রাজি হননি।’’ শহরের জঞ্জাল সাফাইয়ে আগে থেকেই ঠিকাদারদের দায়িত্ব দেওয়া হলেও শর্ত মতো সাফাই কর্মীর জোগান দেয় পুরসভাই। তাই ঠিকাদাররাও হাত গুটিয়ে বসে।
ননী ভট্টাচার্য, অমল দাস-দের বক্তব্য: শিলচরে কত মাসের বকেয়া, সেটা এখানে বিচার্য নয়। সরকার ১৬ মাস ধরে রাজ্যের পুরকর্মীদের বেতন দিচ্ছে না, এর বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি। তাই শিলচরকে ধর্মঘট থেকে ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
এই ধর্মঘটে প্রভাব পড়ছে স্বচ্ছ সর্বৈক্ষণ প্রতিযোগিতায়ও। দেশের ৫০০ শহরের মধ্যে অসমের চারটি শহরকে বাছাই করা হয়েছিল। গত সপ্তাহে ওই তালিকায় একেবারে নীচে রয়েছে শিলচর। দেশের তালিকায় ৮৩ নম্বরে। ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে স্বচ্ছতার পরীক্ষা। পুরকর্মীদের ধর্মঘটের দরুন আর উপরে ওঠার সম্ভাবনা দেখছেন না জেলা প্রশাসন। প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত প্রোজেক্ট অফিসার শামিম আহমদ বলেন, ঠিকাদারদের সঙ্গে শুধু বাড়ি থেকে জঞ্জাল সংগ্রহের চুক্তি। সেই জঞ্জাল ট্রেঞ্চিং গ্রাউন্ডে ফেলার দায়িত্ব পুরসভার। ফলে ঠিকাদারদের দিয়েও কাজ হচ্ছে না।