তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। আজ অনুষ্ঠানে এসেছেন। মঞ্চেও বসেছেন। কিন্তু ‘কন্যা সুরক্ষা স্মারক’ উদ্বোধনের কথা বলতেই বেঁকে বসেন। উপস্থিত সবাইকে বিস্মিত করে জানিয়ে দেন, ‘‘উদ্বোধন আমি করতে পারব না। এরা পুরসভার অনুমতি না নিয়েই পুর এলাকায় এটি তৈরি করেছে।’’
তিনি শিলচরের পুরপ্রধান নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর। অনুষ্ঠানে আয়োজকদের পক্ষে জয় বরদিয়া স্বাগত ভাষণ দিচ্ছিলেন। নীহারবাবুকে সম্বোধন করেছিলেন প্রধান অতিথি ও উদ্বোধক হিসেবে। তাঁর ভাষণের মধ্যেই আপত্তি জানান তিনি। পরে অবশ্য প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জগদীশ দাসের সঙ্গে পুরো অনুষ্ঠানই মঞ্চে থাকেন। সংক্ষিপ্ত বক্তৃতাও করেন। কিন্তু সবাই উদ্বোধন-স্থলের দিকে রওনা হতেই নীহারবাবু স্থান ত্যাগ করেন।
শ্রীজৈন শ্বেতাম্বর অখিল ভারতীয় তেরাপন্থ মহিলা মণ্ডল শিলচর শহরের বুকে জাতীয় সড়কের উপর ‘আচার্য মহাশ্রমণ কন্যা সুরক্ষা সার্কল’ তৈরি করে। মহিলা মণ্ডলের কাছাড় জেলা সভাপতি বিজয়শ্রী গঙ ও সম্পাদক প্রেম সুরানা বলেন, ‘‘কন্যাভ্রূণ হত্যার বিরোধিতা এবং কন্যাসন্তানদের আদরযত্নে মানুষ করে তোলার আহ্বান জানিয়ে এই স্মারক তৈরি করা হয়েছে। এই পথ ধরে যাঁরাই যাবেন, সেই বার্তা তাঁরা নিয়ে যাবেন।’’ তিনি জানান, সারা দেশে ৪১৫টি এই ধরনের স্মারক বা সার্কল তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শিলচর-সহ ৪৬টি সম্পন্ন হল। সভা শেষে নীহারবাবুর মন্তব্যের সমালোচনা করেন তাঁরা। মূলচাঁদ বৈদ, জয় বরদিয়া সহ মহিলা মণ্ডলের কর্মকর্তারা জানান, জেলাশাসকের কাছ থেকে অনুমতি আদায় করা হয়েছে। জাতীয় সড়কের উপর নির্মাণ করা হয়েছে বলে তাঁদেরও অনুমোদনের প্রয়োজন পড়ে। ভারত সরকার নকশা তৈরি করে দেয়। কিন্তু কেউ কখনও পুরসভার অনুমতি নিতে বলেনি। তাঁদের কথায়, ‘‘এত দিন ধরে শহরের বুকে নির্মাণকাজ হল, তিনি কখনও আপত্তি জানালেন না। এমনকী, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার সম্মতি জানাতে গিয়েও কিছু বলেননি। অনুষ্ঠান মঞ্চে বসে এমনভাবে বলাটা আপত্তিকর।’’
নীহারবাবু উদ্বোধন না করে চলে গেলেও শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন এলাকার বিজেপি পুরসদস্য বিজয়েন্দ্র সিংহ। তিনি পুরপ্রধানের মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া প্রকাশে রাজি হননি। তবে পরে বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে বলতে পারি, অনুমতি না নেওয়ার জন্য মহিলা মণ্ডলকে দায়ী করা যায় না।’’ তিনি জানান, আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল, পুর এলাকার যাবতীয় কাজকর্ম পুরসভাকে জানানো হবে। যে সব জায়গায় বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়হীনতার দরুন নাগরিকদের ভোগান্তি হয়, পুরসভা সেখানে সংযোজকের ভূমিকা নেবে। জেলা প্রশাসন যখন স্মারক তৈরির অনুমতি দিয়েছে, তখন সেই সিদ্ধান্ত অনুসারে পুরসভাকে তাঁদেরই জানানো উচিত ছিল।