মুম্বইয়ের ওই অটোচালক দেশরাজ।
এক বৃদ্ধ অটোচালককে তাঁর নাতনির উচ্চশিক্ষার খরচ মেটাতে ২৪ লক্ষ টাকা তুলে দিলেন নেটাগরিকরা। মুম্বইয়ের ওই অটোচালকের কথা সম্প্রতিই ভাইরাল হয় নেটমাধ্যমে। নাতনির উচ্চশিক্ষা ইচ্ছে পূরণ করতে তাঁর একমাত্র সম্বল বাড়ি বিক্রি করে দেওয়ার কাহিনি মন ছুঁয়ে যায় নেটাগরিকদের। ইন্টারনেটে ওই বৃদ্ধের জন্য সাহায্য চেয়ে অনুদানের আবেদন করা হয়। সেই আবেদনেই সাড়া দিয়ে জমা পড়ে ২৪ লক্ষ টাকা। যা তুলে দেওয়া হল মুম্বইয়ের ওই বৃদ্ধ অটোচালক দেশরাজ জোরসিং বিয়াদুর হাতে।
দেশরাজের কথা অবশ্য প্রথম প্রকাশ্যে আনে মুম্বইয়ের একটি সংবাদমাধ্যম। বৃদ্ধ অটোচালকের বয়স ৬০-এর কোঠায়। যদিও বয়সের পরোয়া না করেই দিন রাত মুম্বইয়ের রাস্তায় অটো চালান দেশরাজ। কারণ না চালিয়ে উপায় নেই। বাড়িতে চারটি মুখের অন্ন সংস্থানের দায়িত্ব তার কাঁধেই। দুই ছেলে ছিল। তারা মারা গিয়েছে। একজন ছ’বছর আগে। অন্যজন চার বছর আগে আত্মহত্যা করেছে। ছেলেরা না থাকলেও তাঁদের পরিবার আছে। দুই বউমা, দুই নাতনিকে সামলান এখন একা দেশরাজই। দু’বেলা অটো চালিয়ে পরিবারের অন্ন সংস্থান করে পালন করেন নাতনিদের পড়াশোনা শেখানোর দায়িত্বও। সর্বস্ব শেষ হয়ে যায় তাতে। সাক্ষাৎকারে দেশরাজকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমার একটাই শান্তি, এত খরচ করে পড়াচ্ছি যাদের, তারাও চেষ্টার ত্রুটি রাখে না।’’ ৮০ শতাংশ নম্বর পেয়ে দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন দেশরাজের বড় নাতনি। ইচ্ছে হয়েছিল দিল্লিতে গিয়ে বিএড পড়ার। নাতনির ইচ্ছে পূরণের তীব্র ইচ্ছে দেশরাজেরও। তাই পড়াশোনার খরচ চালাতে বাড়িটাই বেচে দেন তিনি।
দেশরাজের এই আত্মত্যাগে আশ্চর্য হয়ে যান নেটাগরিকরা। মুম্বইয়ের একটি সংবাদমাধ্যম দেশরাজের কাহিনি সামনে আনতেই তা ভাইরাল হয়ে যায় নেটমাধ্যমে। মুম্বইবাসী তো বটেই তাঁর কাহিনি নেটমাধ্যমে শেয়ার করেন মিলিন্দ দেওরা, অর্চনা ডালমিয়ার মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও। পরে গুঞ্জন রাত্তি নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ইন্টারনেটে দেশরাজের জন্য সাহায্যের আবেদন করে আর্থিক অনুদান সংগ্রহের ডাক দেন। তাতেই বিপুল সাড়া মেলে। ২০ লক্ষ টাকার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে নেটাগরিকদের মন খোলা সাহায্যে সেই লক্ষ্য পার করে ২৪ লক্ষ টাকা জমা পড়ে। সম্প্রতি সেই সাহায্য একটি চেকের মাধ্যমে তুলে দেওয়া হয় মুম্বইয়ের ওই অটোচালক দেশরাজের হাতে।