মুহাম্মদ ইউনূস। —ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পরে এই প্রথম কোনও বহুপাক্ষিক সম্মেলনে যোগ দিলেন মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তৃতীয় ‘ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিট’-এ যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ইউনূসকে। আজ ওই ভার্চুয়াল সম্মেলনে ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশে সবাইকে নিয়ে চলার মতো একটি বহুত্ববাদী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং অবাধ, স্বচ্ছ ভোট হাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাঁর কথায়, “এখন আমাদের কাজ হল দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন, মিডিয়া, অর্থনীতি ও শিক্ষায় জরুরি সংস্কার করা।”
ছাত্রদের নেতৃত্বে হওয়া প্রবল আন্দোলনের মুখে বাধ্য হয়ে ক্ষমতা ত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়েছেন গত ৫ অগস্ট। ৮ অগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন ইউনূস। বক্তৃতায় তিনি বলেন, গ্লোবাল সাউথের দেশগুলির মোট জনসংখ্যার বড় অংশই যুবসম্প্রদায় ও ছাত্রছাত্রী। তাঁদেরই কৌশলগত পরিসরের কেন্দ্রে রাখার জন্য সওয়াল করেন ইউনূস। তাঁর মতে, যুবসম্প্রদায় উদ্যোগমুখী। তারা শুধু চাকরির মাধ্যমেই রোজগার চায়, এমনটা নয়। বরং আর কোনও সুযোগ নেই বলেই চাকরি চায়। ইউনূস বলেন, “আমাদের সবার শিক্ষাব্যবস্থাই ওদের চাকরির জন্য প্রস্তুত হওয়ার মতো করে গড়েছে। ভুলে যাওয়া হয়েছে ওদের সমবেত ক্ষমতার কথা।”
সম্পদে সবার, বিশেষত মহিলা ও যুবসম্প্রদায়ের অংশীদারি নিশ্চিত হয় যাতে, সে জন্য গ্লোবাল সাউথের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানো দরকার বলে মত ইউনূসের। সম্মেলনে তিনি বলেছেন, “এটা সফল ভাবে কী করে করা যায়, আমরা একে অন্যের থেকে তা শিখতে পারি।” শূন্য কার্বণ নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ-কেন্দ্রীকরণ এবং শূন্য বেকারত্বের লক্ষ্যে তিনি ‘সোশাল বিজনেস’ বা শুধুমাত্র সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যার সমাধানের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায় গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন। এই ব্যাপারে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলিকে এগিয়ে আসতে আহ্বান করে ইউনূস বলেন, “আমরা যদি সবাই একসঙ্গে কাজ করি, সেই শক্তি হবে বিপুল।”
২০২৩ সালের গোড়া থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে ‘ভয়েস অব গ্লোবাল সামিট’-এর আয়োজন করে আসছে ভারত। এটি তৃতীয় সম্মেলন। আজ উদ্বোধনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গ্লোবাল সাউথের দেশগুলিকে খাদ্য-সুরক্ষা এবং শক্তি-সুরক্ষার সঙ্কট, সন্ত্রাসবাদের সমস্যা আর পরিবেশ সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা থেকে উঠে আসা বিভিন্ন প্রতিকূলতার
মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। গ্লোবাল সাউথে সর্বজনীন ডিজিটাল পরিকাঠামো তৈরিতে ভারত প্রাথমিক ভাবে ২.৫ কোটি আমেরিকান ডলার (ভারতীয় টাকায় ২০৯ কোটির বেশি) সাহায্য করবে বলে জানান তিনি। মানবজাতির দুই-তৃতীয়াংশ হিসাবে একত্রিত হওয়ার জন্য তিনি গ্লোবাল সাউথের দেশগুলিকে আহ্বান জানান। মোদীর মতে, গত শতাব্দীতে বিশ্বব্যাপী গড়ে ওঠা শাসন পরিচালনা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি এই শতাব্দীর বিভিন্ন প্রতিকূলতার সঙ্গে যুঝতে ব্যর্থ হচ্ছে।