মহম্মদ আলি জিন্না। প্রতীকী ছবি।
‘মহম্মদ আলি জিন্নাকে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী করা হলে দেশভাগ এড়ানো যেত।’
উত্তরপ্রদেশের ভোটে হঠাৎই তুমুল প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠলেন মহম্মদ আলি জিন্না। এর সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব জিন্নার প্রশংসা করে মুসলিম মন জয়ের চেষ্টা করতে গিয়ে গেরুয়া শিবিরের হিন্দুত্ববাদী পালে হাওয়া দিয়েছিলেন। এ বার অখিলেশের জোটসঙ্গী সুহেলদেব ভারতীয় সমাজ পার্টি-র নেতা ওম প্রকাশ রাজভড়ও জিন্নার সম্পর্কে এমন মন্তব্য করে বিতর্ক তৈরি করলেন। সেই সঙ্গে স্পষ্ট হয়ে গেল, বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকে সামাল দিতে মরিয়া হয়ে মেরুকরণ তীব্র করার সুপরিকল্পিত নীতি নিয়েছে এসপি এবং তার সঙ্গীসাথীরা।
রাজভড়ের বক্তব্য, স্বাধীন ভারতে প্রথমেই জিন্নাকে প্রধানমন্ত্রী করে দিলে দেশভাগের প্রয়োজন হত না। ভারত বৃহৎ রাষ্ট্র হিসাবেই থাকত। ফলে আজ দেশভাগজনিত যত সমস্যা, সেগুলি তৈরিই হত না। তাঁর কথায়, ‘অটলবিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আডবাণী, গোবিন্দ বল্লভ পন্থের মতো নেতারা জিন্নার প্রশংসা করেছেন স্বাধীনতার পিছনে তাঁর অবদানের জন্য।’ সম্প্রতি অখিলেশও সর্দার পটেল, নেহরু, গাঁধীর সঙ্গে জিন্নাকে একই বন্ধনীতে রেখে তাঁর প্রশংসা করেছিলেন। বলেছিলেন, এঁরা স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে পিছু হঠেননি, দেশকে মুক্ত করেছিলেন। আজ অখিলেশের বক্তব্যকে সমর্থন করে রাজভড় বলেন, “আডবাণীজির এ ব্যাপারে মতামত পড়ুন। অটলজি কী বলেছিলেন, দেখুন। দেশের অন্যান্য শুভার্থীদের দেখুন, যাঁরা জিন্নার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ব্যাপারে সায় দিয়েছিলেন। কেন তাঁরা জিন্নার প্রশংসা করেছিলেন, সেটা ভাবুন।”
উত্তরপ্রদেশে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ছে অনেকগুলি দল। কংগ্রেস লড়ছে তার মুষ্টিমেয় ভোটব্যাঙ্ককে বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে। বিএসপি নেত্রী মায়াবতী যত না আক্রমণ করছেন বিজেপিকে, তার থেকে বেশি অখিলেশের এসপিকে। অন্য দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেকগুলি ছোট ছোট দল, যাদের এক মঞ্চে আনার মরিয়া চেষ্টা করছেন অখিলেশ। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, বিজেপি-বিরোধী সমস্ত দলগুলিতেই সংখ্যালঘু ভোট ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বিজেপি নেতা তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ খোলাখুলি ভাবেই তালিবান তত্ত্বের আমদানি করে হিন্দু ভোটের মেরুকরণ করতে চাইছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। অন্য দিকে পাল্টা মেরুকরণ করে তাঁর বাবার মুসলমান-মসিহার (‘মওলা মুলায়ম’) ভাবমূর্তিকে আত্মস্থ করতে চাইছেন অখিলেশ। পাশাপাশি অন্য বিরোধী দলগুলিকেও তিনি বার্তা দিতে চাইছেন জোট গড়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ার। আজ অখিলেশ বলেছেন, “আমরা ২০১৯-এ বিএসপি, আরএলডি-র সঙ্গে জোট করেছিলাম। সেই জোট তো আনুষ্ঠানিক ভাবে ভাঙেনি। আমরা সবাইকে আহ্বান করছি, বিজেপিকে হারাতে এক সঙ্গে আসুন।” সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা বঢরার সঙ্গে তাঁর বিমানে দেখা এবং কথা হয়। ভোটে নিজেদের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে কংগ্রেস। আজ অখিলেশের বার্তা, “যাঁরা সাচ্চা কংগ্রেস, তাঁরা ভোট ভাগ হতে দেবেন না। বিজেপিকে হারানোর জন্য রাজনৈতিকভাবে যা যা করা সম্ভব, সবই করবেন।”