ইলাহাবাদ হাই কোর্টকে ভর্ৎসনা সুপ্রিম কোর্টের। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ইলাহাবাদ হাই কোর্ট সম্প্রতি এক ধর্ষণ মামলায় রায় দেওয়ার সময় মন্তব্য করে, নির্যাতিতা নিজেই বিপদ ডেকে এনেছেন। দায় তাঁরই! সেই মন্তব্যের জন্য ইলাহাবাদের উচ্চ আদালতকে ভর্ৎসনা করল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের বক্তব্য, এই ধরনের মন্তব্য করা উচিত হয়নি। হাই কোর্ট যা বলেছে তা ‘অত্যন্ত অসংবেদশীল’ বলেও মনে করে সুপ্রিম কোর্ট।
দিন কয়েক আগেই এক ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্তের জামিন মঞ্জুর করে ইলাহাবাদ হাই কোর্ট। রায় দেওয়ার সময় বিচারপতি সঞ্জয়কুমার সিংহের বেঞ্চ মন্তব্য করে, ‘‘নির্যাতিতার অভিযোগকে যদি সত্য বলে মেনে নেওয়া হয়, তা-ও এটি বলা যেতে পারে পারে যে তিনি নিজেই নিজের বিপদকে ডেকে এনেছিলেন। এর জন্য দায়ী তিনিই।” সেই মন্তব্য নিয়ে আপত্তি জানাল সুপ্রিম কোর্ট।
বিচারপতি বিআর গবই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহের বেঞ্চ ওই রায়ের কথা উল্লেখ করে বলে, ‘‘জামিন মঞ্জুর করা যেতেই পারে। কিন্তু নির্যাতিতা নিজেই বিপদ ডেকে এনেছেন, এ ধরনের আলোচনার অর্থ কী? এমন কথা বলার সময় সতর্ক থাকতে হবে।’’
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উত্তরপ্রদেশের নয়ডার এক নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তিন বান্ধবীর সঙ্গে দিল্লির হাউজ় খাস এলাকায় একটি পানশালায় গিয়েছিলেন। সেখানে পূর্বপরিচিত কয়েক জন পুরুষের সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়। তরুণীর দাবি, পানশালায় তিনি মত্ত অবস্থায় ছিলেন। রাত ৩টে পর্যন্ত তাঁরা পানশালায় ছিলেন। অভিযোগ, সেখানে ওই পুরুষদের মধ্যে এক জন তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেন। তরুণীর আরও দাবি, পানশালা থেকে ফেরার পথে অভিযুক্ত তাঁকে অনবরত খারাপ ভাবে স্পর্শ করতে থাকেন এবং নিজের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার বদলে গুরুগ্রামে এক আত্মীয়ের ফ্ল্যাটে নিয়ে যান। অভিযোগ, সেখানেই তাঁকে ধর্ষণ করেন ওই ব্যক্তি। ঘটনার পরে নয়ডার এক থানায় অভিযোগ জানান নির্যাতিতা এবং গত বছরের ১১ ডিসেম্বর অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যদিও অভিযুক্তের দাবি, ধর্ষণ নয়, তরুণীর সম্মতিতেই তাঁরা ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন। সেই মামলাতেই অভিযুক্তের জামিন মঞ্জুর করে ইলাহাবাদ হাই কোর্ট। পাশাপাশি, নির্যাতিতাকেই দায়ী করে।
সম্প্রতি ইলাহাবাদ হাই কোর্ট অন্য একটি মামলায় ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য করে। কিশোরীর বুকে হাত দিলে বা তার পাজামার দড়ি খোলার চেষ্টা করলে তা ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টা নয় বলে রায় দিয়েছিল ইলাহাবাদ উচ্চ আদালত। তা নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করে সুপ্রিম কোর্ট। সে বারও হাই কোর্টের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছিল বিচারপতি গবইয়ের বেঞ্চ। তারা জানায়, হাই কোর্টের নির্দেশে তারা ব্যথিত। এতে ‘সম্পূর্ণ ভাবে সংবেদশীলতার অভাব’ রয়েছে। কেন্দ্র এবং উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে এই বিষয়ে জবাবও তলব করেছিল শীর্ষ আদালত।