নির্বিচারে লাঠি চালাচ্ছে পুলিশ। ছবি ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।
পুলিশ ও রাজস্ব বিভাগের কর্মীরা নষ্ট করছিল খেতের ফসল। তা দেখে নিজেদের ছোট ছেলে-মেয়ে ও পুলিশের সামনেই কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করল এক দলিত দম্পতি। মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটেছে মধ্যপ্রদেশের গুনা জেলাতে। এই ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে। তারপরই স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনায় মুখর সে রাজ্যের বিরোধীরা। বৃহস্পতিবার ওই ঘটনার ভিডিয়ো শেয়ার করে মধ্যপ্রদেশ সরকারের সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘‘এই মানসিকতা ও অবিচারের বিরুদ্ধেই আমাদের লড়াই।’’
জানা গিয়েছে, বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করা এই দম্পতি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁদের অবস্থা এখন স্থিতিশীল।
রামকুমার আহিয়ার (৩৮) ও সাবিত্রী দেবী (৩৫) নামের এই দলিত দম্পতির দাবি, বছরের পর বছর ধরে ওই জমিতে চাষ করে আসছেন তাঁরা। প্রশাসনের বক্তব্য, ওই জমি সরকারি। ২০১৮-তে ওই জমির উপর সরকারি কলেজ গড়া হবে বলে ঠিক করা হয়। সে জন্যই দখল করে থাকা জমি উদ্ধারের জন্য গিয়েছিল পুলিশ ও রাজস্ব বিভাগ। সাবিত্রী দেবী বলেছেন,‘‘আমরা জানি না জমি কার। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আমরা চাষ করি ওই জমিতে। পুলিশ যখন আমাদের ফসল নষ্ট করে দিচ্ছে, তখন আত্মহত্যা করা ছাড়া আমাদের কোনও উপায় ছিল না।’’ জমিতে চাষ করতে গিয়ে তাঁদের তিন লক্ষ টাকা ধার হয়েছে বলেও জানিয়েছেন সাবিত্রী দেবী। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কে শোধ করবে ওই টাকা? সরকার?’’
১৪ জুলাই, মঙ্গলবার সে রাজ্যের রাজস্ব দফতরের কর্মী পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন সেখানে। ওই জমি দখলমুক্ত করে সীমান্ত পাঁচিল দেওয়ার জন্য গিয়েছিলেন তাঁরা। তা আটকানোর চেষ্টা করেন ওই দম্পতি। ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ নির্বিচারে লাঠি চালাচ্ছে ওই দম্পতির উপর। দূরে দাঁড়িয়ে তাঁদের ছেলে মেয়েরা কাঁদছে। তখনই কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে ওই দম্পতি। অভিযোগ ঘটনার সময় ওই দম্পতির বাচ্চারা সেখানে গেলে, তাঁদের প্রতিও অশালীন ভাষা প্রয়োগ করে পুলিশ। সে সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন গুনা শহরের তহসিলদার নির্মল রাঠৌর। তিনি বলেছেন, ‘‘মাপঝোক করে আমরা জমি দখলমুক্ত করছিলাম। তখনই কীটনাশক খায় ওই দম্পতি।’’
যদিও এই ঘটনার পর পুলিশের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। ওই দম্পতি ও সেখানে উপস্থিত স্থানীয়দের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। যদিও গুনার জেলাশাসক এস বিশ্বনাথের দাবি, ‘‘আমরা ভিডিয়ো ফুটেছে দেখেছি। বিষ খাওয়ার পর পুলিশই দ্রুত দম্পতিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমাদের দল কাজ না করলে তাঁদের মৃত্যু হতে পারত।’’ ভিডিয়োতে পুলিশ নির্বিচারে লাঠি চালাচ্ছে দেখা গেলেও সেই দাবি অস্বীকার করেছেন গ্বালিয়ারের আইজি। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘ভিডিয়োতে পুলিশ মারছে তা কেটে দেখানো হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘কীটনাশক খেয়ে অচৈতন্য দম্পতিকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ। সে সময় স্থানীয়রা বাধা দিলে লাঠি চালায় পুলিশ।’’
কিন্তু এই সব বক্তব্য বিতর্ক থামাতে পারেনি। দলিত দম্পতির প্রতি এই আচরণে নেটাগরিকরাও ক্ষুব্ধ। পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ ও সে রাজ্যের কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ সে রাজ্যে ‘জঙ্গল রাজ’ চলছে বলে তোপ দেগেছেন। দম্পতির উপর লাঠি চালানোর ঘটনার ভিডিয়ো শেয়ার করেছেন দিগ্বিজয় সিংহ। কমল নাথ টুইটে লিখেছেন, ‘‘এক দলিত দম্পতিকে নিষ্ঠুরভাবে মারছে পুলিশ। এটা কোন ধরনের জঙ্গল রাজ? সরকারি জমির সমস্যা আইনি উপায়ে মেটানো যেতে পারে। কিন্তু বাচ্চাদের সামনে এ ভাবে পেটানো হল কোন যুক্তিতে?’’ ঘটনায় জন্য দায়ী কর্মীদের বিরদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন তিনি।
ঘটনার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতেই মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে ৩২ হাজার! দেশে মোট আক্রান্ত ন’লক্ষ ৬৮ হাজার