উচ্চ মাধ্যমিকে সফল দুই চাকুরে ছেলের মা

ত্রিপুরার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল বৃহস্পতিবার ঘোষণা হয়েছে। রাজ্যের মফস্বল শহর, ধর্মনগরের নোয়াপাড়া স্কুল থেকে কলা বিভাগে পাশ করেছেন কবিতা। পাশ তো কতজনই করেছেন।

Advertisement

বাপি রায়চৌধুরী

আগরতলা শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৯ ০১:৫৪
Share:

বইয়ে চোখ কবিতা দেবনাথের। নিজস্ব চিত্র

সব সফল পুরুষের পিছনে একজন নারী থাকেন। কবিতা দেবনাথের সাফল্যের পিছনে রয়েছেন একাধিক পুরুষ। তাঁরা তাঁর স্বামী ও ছেলেরা।

Advertisement

ত্রিপুরার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল বৃহস্পতিবার ঘোষণা হয়েছে। রাজ্যের মফস্বল শহর, ধর্মনগরের নোয়াপাড়া স্কুল থেকে কলা বিভাগে পাশ করেছেন কবিতা। পাশ তো কতজনই করেছেন। তিনি তো মেধা তালিকাতেও নেই। তবে তাঁর কৃতিত্ব কোথায়!

পঞ্চাশের প্রায় কাছাকাছি তাঁর বয়স। প্রথম দিন হলে যাওয়ার পর পরীক্ষা শুরু আগে দিদিমণিরা তাঁকে অভিভাবক ভেবে হল বাইরে বেরিয়ে যেতে বলেছিলেন। পরে তিনিই পরীক্ষার্থী জানতে পেরে সাদরে তাঁকে ডেকে বসিয়েছেন।

Advertisement

সেই কবিতাদেবীর তিরিশ বছর আগে, বিয়ের পরেই পড়াশোনায় ইতি পড়ে। স্বামী, পরিবার, সংসারেই জড়িয়ে পড়েন তিনি। ধীরে ধীরে দুই সন্তানের জননী। তাঁদের বড় করা। তাঁদের পড়াশোনা শেখানো। এমএসসি পাশ করে দু’জনেই এখন কর্মরত। কবিতার কথায়, ‘‘ছেলেরা বড় হওয়ার পর থেকেই আমার স্বামী ও সন্তানরা নতুন করে পড়াশোনা শুরু করার জন্য আমাকে বার বার বলেছে। কিন্তু সংসারের কোনও না কোনও কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। তবে মনের কোণের ইচ্ছেটা উস্কে দিয়েছিল ওরা।’’

এর মধ্যেই পঞ্চায়েত ও নগরপালিকায় এক-তৃতীয়াংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিল সরকার। স্বাভাবিক ভাবেই সব দলেরই প্রার্থী নিয়ে টানাটানি। কেউ জোগাড় করতে পারছেন তো কেউ পারছেন না। সেই সময়েই, ২০১০ সালে ধর্মনগর পুর নির্বাচনে বামপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান কবিতাদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘২০১৫ সালে মেয়াদ শেষ হতেই হাতে দেখলাম প্রচুর সময়। শুরু করলাম পড়াশোনা।’’ ২০১৭ সালে মাধ্যমিক পাশ করলেন।

এরপরেই উচ্চ মাধ্যমিকের ভাবনা। নোয়াপাড়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক সজল চক্রবর্তীর সঙ্গে দেখা করেন কবিতাদেবী। তাঁর অনমনীয় মনোভাব দেখে সজলবাবুও উদ্যোগী হন। সজলবাবু তাঁকে বলেন, ‘‘সামাজিক দিশা দেখানোর কাজ করছেন।’’ তিনিই বোর্ডের সঙ্গে কথাবার্তা বলে কবিতাদেবীর পরীক্ষায় বসার ব্যবস্থা করে দেন।

গতকাল ফল প্রকাশের পর থেকে কবিতাদেবীর প্রতিবেশীদের কেউ কেউ নিজেরাই মিষ্টি বিলি করেছেন। কবিতাদেবীর বক্তব্য, ‘‘আমি এখন সর্বতোভাবেই খুশি। ভুলেই গিয়েছি আমি একজন বয়স্ক মা!’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement