ছবি: রয়টার্স।
লোকসভা ভোটে রাহুল গাঁধীর ‘ন্যায়’ অস্ত্রকে ভোঁতা করতে ‘প্রধানমন্ত্রী কিষান প্রকল্পে’র মাধ্যমে কৃষকদের বছরে তিন কিস্তিতে ৬ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। অন্তর্বর্তী বাজেটে এর জন্য অর্থ বরাদ্দ করে দ্রুত সেই টাকা দেওয়া শুরুও হয়। বেশ কিছু কৃষক ইতিমধ্যেই তিন কিস্তির টাকা হাতে পেয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এখনও অবধি একটা বিরাট অংশের কৃষকের কাছে এই প্রকল্পের সুফল পৌঁছয়নি। সরকারের চিন্তা, এর ফলে প্রকল্পের জন্য ঘোষিত অর্থের একটা বড় অংশ চলতি অর্থ বছরে খরচ হবে না। অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার নামতে নামতে ৪.৫ শতাংশে ঠেকেছে। বাজারে, বিশেষ করে গ্রামের বাজারে কেনাকাটা কমেছে ব্যাপক ভাবে। এই অবস্থায় এই প্রকল্পের টাকা কৃষকেরা হাতে পেলে তাঁরা তা খরচ করতে পারতেন। ফলে বাজার চাঙ্গা হওয়ার সুযোগ পেত।
ভোটের আগে সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল, ‘পিএম কিষাণ প্রকল্প’-এর আওতায় দেশের ১২.৫ কোটি ছোট ও মাঝারি চাষি এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। তার জন্য অন্তর্বর্তী বাজেটে ৭৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পরে বিজেপির ইস্তেহার মেনে বড় চাষিদের জন্যও এই অর্থ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মোদী সরকার। আনুমানিক খরচ আরও প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বেড়ে হয় ৮৭ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রক সূত্রের আশঙ্কা, বাড়তি ১২ হাজার কোটি তো দূর, চলতি অর্থ বছরে আদতে বরাদ্দ ৭৫ হাজার কোটি টাকার এক-তৃতীয়াংশই হয়তো খরচ হবে না। কারণ, ১৪.৫ কোটি চাষিকে ‘পিএম-কিষাণ’-এর আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত ৮.১১ কোটি চাষিকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা গিয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ৩.৭ কোটি কৃষক তিন কিস্তির টাকা পেয়ে গিয়েছেন। কিন্তু অনেকে প্রথম কিস্তির ২ হাজার টাকার পরে আর পাননি। কেন? দেশের অন্য একাধিক সরকারি প্রকল্পের মতো এই প্রকল্পটির ক্ষেত্রেও সরকারি শিথিলতা কাজ করেছে। সরকারি সূত্রের খবর, চাষের জমির মালিকানার রেকর্ডের ভিত্তিতেই চাষিদের নাম নথিভুক্ত করা হচ্ছে। তাতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। কারণ অনেক রাজ্যেই চাষের জমির রেকর্ড ঠিক মতো নেই। পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করতে গিয়েও ভুলত্রুটি হচ্ছে। যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশেই ১.৩ কোটি চাষির টাকা আটকে গিয়েছে। অর্থ মন্ত্রক সূত্র বলছে, তা ছাড়া, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার সংযোগ করাননি বহু কৃষক।
আরও পড়ুন: নেতাজিই তাস, আবেকে ইম্ফল নিয়ে যাবেন মোদী
এই পরিস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন নিজে টাকা বিলির গতি বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন। ডিজিটাল ইন্ডিয়া প্রকল্পে চালু হওয়া ‘কমন সার্ভিস সেন্টার’-এর মাধ্যমে চাষিদের নাম নথিভুক্ত করার কাজও শুরু হয়েছে। কিন্তু সরকারের উদ্বেগ, এত করেও বছরের শেষে খুব বেশি হলে ১০ কোটি চাষিকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা যাবে। প্রায় ৪.৫ কোটি কৃষক এ বছর প্রকল্পটির সুবিধা থেকে বঞ্চিতই থাকবেন। এবং এই অর্থবর্ষে এই প্রকল্পে বাজেটে বরাদ্দের ৮৭ হাজার কোটি টাকার মধ্যে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে না।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপিকা জয়তী ঘোষের মতে, ‘‘এই সময় গ্রামের মানুষের হাতে টাকা থাকলে ফায়দা হত। বাজারে কেনাকাটা বাড়ত। যেমনটা ইউপিএ জমানায় একশো দিনের কাজের প্রকল্পে গ্রামের মানুষের হাতে টাকা আসার ফলে সুবিধা মিলেছিল। কর্পোরেট কর কমালে গ্রামের মানুষের হাতে টাকা পৌঁছবে না। বাজারেও বিক্রি বাড়বে না।’’
শুধু পিএম-কিষাণ নয়। কংগ্রেসের দাবি, গ্রামের মানুষের হাতে টাকা তুলে দিনে একশো দিনের কাজের প্রকল্প বা ‘এমজিএনআরইজিএ’ প্রকল্পেও খরচ বাড়ানো হোক। কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা বলেন, ‘‘মোদী সরকারের এখনই উচিত, মনরেগা-তে বছরে ১৫০ দিনের কাজ দেওয়া। দৈনিক মজুরি বাড়িয়ে ৪০০ টাকা করা দরকার।’’ কিন্তু তা কি হবে? সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির মন্তব্য, ‘‘সরকার তো উল্টে মনরেগা-তে কাজ চাওয়া ১৩ কোটি মানুষের মধ্যে ২ কোটিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন!’’