কোনও রেল স্টেশনের নির্মাণকার্য মুগ্ধ করে, কোনওটা আবার স্থান পেয়েছে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায়। আমাদের দেশেই রয়েছে এমন কিছু রেল স্টেশন যা যুগ যুগ ধরে ভারতের ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করছে। গ্যালারির পাতায় দেখে নিন এমনই কিছু অবাক করা রেল স্টেশনের নাম।
ঘুম স্টেশন: দার্জিলিং হিমালয়ের কোলে ছবির মতো সুন্দর রেল স্টেশন ঘুম। ১৮৮১ সালে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭,৪০৭ ফুট উচ্চতায় স্টেশনটি তৈরি হয়। উচ্চতার নিরিখে ঘুম দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ও বিশ্বে ১৪তম স্থানে রয়েছে। দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং, মংপু-সহ একাধিক সড়কপথ ও মনাস্ট্রি এই স্টেশনকে সংযুক্ত করে।
দুধসাগর রেল স্টেশন: গোয়া এবং কর্নাটকের সীমান্তে অবস্থিত দেশের সবচেয়ে ছোট্ট রেল স্টেশন দুধসাগর। স্টেশনটিতে রয়েছে একটিই প্ল্যাটফর্ম। রেল স্টেশনের প্রায় গায়ে লেগে বয়ে গিয়েছে দুধসাগর জলপ্রপাত। চারদিকে জঙ্গলে ঘেরা স্টেশনটির পরিকাঠামো তেমন উন্নত না হলেও ভ্রমণপিপাসুরা প্রায়ই এখানে ভিড় জমান।
রোয়াপুরম রেল স্টেশন: দক্ষিণ ভারতের রেল স্টেশনগুলির মধ্যে প্রাচীনতম স্টেশন রোয়াপুরম। ১৮৫৬ সালে স্টেশনটি চালু হয়। প্রথমে স্টেশনটির একটি দিক সেনাদের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহৃত হত। বাকি অংশ ছিল নিত্যযাত্রীদের জন্য। তবে, বর্তমানে নতুন করে স্টেশনটিকে ঢেলে সাজানো হয়েছে।
মানওয়াল স্টেশন: জম্মু-কাশ্মীরের উধমপুরে দেশের মধ্যে প্রথম ‘গ্রিন স্টেশন’ হিসেবে গড়ে ওঠে মানওয়াল। বিদ্যুতে রাশ টানতে এই স্টেশনে প্রথম সৌর বিদ্যুতকে কাজে লাগানোর কথা ভাবেন রেল কর্তৃপক্ষ। ২০১১ সালে স্টেশনটি চালু হয়। ২৮টিরও বেশি সৌর প্যানেল বসানো হয়েছে মানওয়ালে।
সারনাথ রেল স্টেশন: দেশের আশ্চর্যতম রেল স্টেশনগুলির মধ্যে একটি সারনাথ স্টেশন। এই স্টেশনের নির্মাণ শৈলী মুগ্ধ করে। পুরোপুরি সাঁচী স্তূপের আদলে এই স্টেশনটিকে গড়ে তলা হয়েছে। এটি দৈর্ঘ্যেও খুব বেশি বড় নয়। সারনাথ ও বারাণসীকে সংযুক্ত করেছে এই রেল স্টেশনটি।
কটক স্টেশন: এই স্টেশনের বিশেষত্ব তার নির্মাণকার্যে। সুপ্রাচীন বারাবাতি দুর্গের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে ওডিশার কটক স্টেশনটিকে। শুধু তাই নয়, দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম রেল স্টেশনের মধ্যে একটি কটক রেল স্টেশন।
ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস: ইতালীয় গথিক স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস। দেশের অন্যতম ব্যস্ত এই রেল স্টেশনটি চালু হয় ১৮৮৭-৮৮ সালে। প্রথমে নাম ছিল ‘ভিক্টোরিয়া টার্মিনাস’। পরে নাম পরিবর্তিত হয়ে ছত্রপতি শিবাজি রাখা হয়। ২০০৪ সালে ইউনেস্কো স্টেশনটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তকমা দেয়।
রশিদপুরা খোরি স্টেশন: জানেন কি, রাজস্থানের এই প্রান্তিক রেল স্টেশনটিতে কোনও স্টেশন মাস্টার বা টিটি নেই? গোটা স্টেশনটির পরিচালনা করেন গ্রামবাসীরাই। টিকিট বিক্রির জন্য আলাদা করে কর্মী নিয়োগ করে না রেল। চুক্তির ভিত্তিতে স্থানীয়দেরই সেই দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হয়।
গোরক্ষপুর রেল স্টেশন: খড়্গপুরকে পিছনে ফেলে বিশ্বের দীর্ঘতম প্ল্যাটফর্মের শিরোপা জিতে নিয়েছে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর রেল স্টেশন। এই স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য ১.৩৫ কিলোমিটার।
ধনুষ্কোডি স্টেশন: রামেশ্বরমে অবস্থিত ‘ভৌতিক স্টেশন’ ধনুষ্কোডি। ১৯৬৪ সালে সাইক্লোনের প্রকোপে ধনুষ্কোডি শহর তছনছ হয়ে যায়। যাঁরা বেঁচে যান তাঁদের অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে ভগ্নপ্রায় পরিত্যক্ত স্টেশন হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে ধনুষ্কোডি।