একটা মরুদ্যান খুঁজে পেলাম।
গত কয়েক দিন ধরে মনে হচ্ছে বার বার, মনুষ্যত্ব আর সভ্যতার মরুভূমিতে বদলে গিয়েছে পৃথিবী। তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে কাঠ। দিকে দিকে মানুষ মরছে। তুরস্কে, আফগানিস্তানে, বাংলাদেশে, ইরাকে, সৌদি আরবে-- গত কয়েক দিনে বহু প্রাণ চলে গেল। মনুষ্যত্বের খরা, হিংস্রতার বালি-ঝড়, নৃশংস অসহিষ্ণুতার প্রখর তাপ এই মরুভূমির প্রান্তে প্রান্তে প্রাণ নিচ্ছে।
মরুদ্যানটা খুঁজে পেলাম এই ভারতে। বরেলিতে। বাবরি মসজিদের রাজ্য, মুজফ্ফরনগরের রাজ্য, দাদরির রাজ্য, কইরানার রাজ্য। সেই উত্তরপ্রদেশেই এই বরেলি। সেই বরেলিতেই এই বুধওয়ালি মসজিদ, যেখানে কয়েক পুরুষ ধরে সকাল-সন্ধে বাতি দিয়ে আসছে এক হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবার। পণ্ডিত রাজেন্দ্র শর্মার পূর্বসূরিরা বরেলির এই মসজিদের দেখভাল করে গিয়েছেন। এখন রাজেন্দ্র নিজে দায়িত্বে রয়েছেন। উত্তরসূরিরাও রোজ নিয়ম করে মসজিদে প্রদীপ জ্বালাতে আসছেন। অদূর ভবিষ্যতে দায়িত্ব তো তাঁদের উপরেই বর্তাবে।
হিংসা, হানাহানি, রক্তপাত আর মনুষ্যত্বের চূড়ান্ত অসম্মান ঘটিয়ে পারস্পরিক অবিশ্বাস ঘিরে ফেলছে আমাদের। গত কয়েক দিনে সেই সঙ্কট আরও প্রগাঢ়। মরুতে রূপান্তরিত পৃথিবীটা যেন প্রচণ্ড তাপে ফেটে দু’ভাগ হয়ে যেতে বসেছে। তার মধ্যেই বরেলির বুধওয়ালি মরুদ্যানের খবর এল। গোটা পৃথিবী মনুষ্যত্বের খরায় হাহাকার করলেও বরেলির নয়াটোলা কিন্তু শান্ত, সুশীতল, ছায়া সুনিবিড়।
এই মরুদ্যানটা দৃষ্টান্ত হোক। ধর্মের নামে মানবতার উপর রোজ যে আক্রমণ নামিয়ে আনা হচ্ছে, তার লক্ষ্য যেন কিছুতেই পূরণ না হয়। পরস্পরের উপর থেকে মানুষ বিশ্বাস যেন কিছুতেই না হারায়। মরুদ্যানটা একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হয়ে থাকলে চলবে না। তার দেওয়ালে অদৃশ্য ভাবে যে বার্তা উৎকীর্ণ হচ্ছে রোজ, দিকে দিকে তার রটনা হোক। মরুবালুরাশির সঙ্কোচন হোক।