গত কয়েক মাস টানা সমালোচনার মুখে কোণঠাসা ছিলেন জেটলি। শুক্রবার সুযোগ পেয়েই তীব্র কটাক্ষে বিঁধেছেন সমালোচকদের। ছবি: রয়টার্স।
উচ্ছ্বসিত অরুণ জেটলি। আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষক মুডি’জ ইনভেস্টরস সার্ভিস শুক্রবার ভারতের রেটিং যে ভাবে বাড়িয়েছে, তাতে প্রমাণ হয়ে গেল, গত কয়েক বছর ধরে সঠিক পথেই এগচ্ছিল ভারত সরকার। মন্তব্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর। ১৩ বছর পর মুডি’জ র্যাঙ্কিং-এ ভারতের যে উত্থান, তাকে এ দিন সোৎসাহে স্বাগত জানিয়েছেন জেটলি। গত কয়েক মাসে বিরোধী শিবির থেকে এবং অর্থনীতিবিদদের একাংশের কাছ থেকে যে প্রবল সমালোচনা সহ্য করতে হচ্ছিল কেন্দ্রীয় সরকারকে। নোটবন্দি এবং জিএসটি নিয়েই মূলত সমালোচনার মুখে পড়ছিল সরকার। মুডি’জ র্যাঙ্কিং তুলে ধরে সমালোচকদের প্রতি জেটলির পাল্টা কটাক্ষ— দেশের অর্থনীতি নিয়ে যাঁদের মনে সংশয় ছিল, তাঁদের এ বার আত্মবিশ্লেষণ করা জরুরি।
মুডি’জ র্যাঙ্কিং-এ শেষ বার ভারতের উত্থান হয়েছিল ২০০৪ সালে। সে বছর ভারতীয় অর্থনীতিকে ‘বিএএ৩’ স্তরে তুলে এনেছিল আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থাটি। ১৩ বছর পরে আরও এক ধাপ উঠল ভারত। মুডি’জ ভারতকে এ বার ‘বিএএ২’ স্তরে তুলে আনল। সংস্থাটির তরফে জানানো হয়েছে, জিএসটি, নোটবন্দি-সহ বেশ কিছু আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের কারণে ভারতের অর্থনীতি এখন বেশ মজবুত। আর্থিক পরিকাঠামোর উন্নয়নে আধারের মতো বায়োমেট্রিক পদ্ধতির প্রচলন, সরকারি সুযোগ-সুবিধা নাগরিকের কাছে সরাসরি পৌঁছে দেওয়ার মতো যে সব নীতি ভারত নিয়েছে, সেগুলির প্রশংসা করে মুডি’জ জানিয়েছে, ভারত সরকার যদি এ ধরনের সংস্কার বজায় রাখতে পারে, তা হলে আগামী দিনে দেশের আর্থিক বৃদ্ধি একটা বিশেষ উচ্চতায় পৌঁছবে।
স্বাভাবিক ভাবেই দীর্ঘ দিন পরে বিরোধীদের কোণঠাসা করার সুযোগ পেয়েছেন জেটলি। নোটবন্দিতে কোনও লাভ হয়নি, বরং প্রবল ধাক্কা খেয়েছে দেশের অর্থনীতি। অভিযোগ করেছিল কংগ্রেস-সহ সব বিরোধী দল। জিএসটি ব্যবস্থা যে প্রক্রিয়ায় চালু করা হয়েছে, তাতে ব্যবসায়ীরা তো বটেই, সাধারণ মানুষও নাজেহাল। বিরোধীরা এমন অভিযোগও করেছিলেন। শুধু রাজনৈতিক শিবির নয়, অনেক অর্থনীতিবিদও নোটবন্দি এবং জিএসটি নিয়ে মোদী সরকারের তীব্র সমালোচনা করছিলেন। কিন্তু মুডি’জ র্যাঙ্কিং প্রকাশিত হওয়ার পর স্বাভাবিক ভাবেই বিরোধী কণ্ঠস্বরগুলি কিছুটা ব্যাকফুটে। মোদী সরকারের সংস্কারমুখী পদক্ষেপগুলিতে ভারতীয় অর্থনীতি যে ধাক্কা খায়নি, বরং আরও মজবুত হয়েছে, আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিং-এর মাধ্যমেই তা প্রমাণিত হয়ে গেল বলে জেটলি দাবি করেছেন।
আরও পড়ুন: মোদীতে আস্থা রেখে ১৩ বছর পর ভারতের রেটিং বাড়াল মুডি’জ
‘‘ভারতের সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে যাঁদের সংশয় ছিল এখন তাঁদেরকে খুব গুরুত্ব দিয়ে আত্মবিশ্লেষণ করতে হবে।’’ মুডি’জ রেটিং-এ ভারতের উত্থানের পর এ ভাবেই সমালোচকদের কটাক্ষ করেছেন জেটলি। শুক্রবার তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা একে স্বাগত জানাচ্ছি, গত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে তোলার জন্য যে সব ইতিবাচক পদক্ষেপগুলি হয়েছে, এই রেটিং হল তার বিলম্বিত স্বীকৃতি।’’
মুডি’জ র্যাঙ্কিং-এ ভারতের উত্থানের খবরে স্টক মার্কেটও চাঙ্গা হয়েছে দ্রুত। বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক সেনসেক্স এ দিন ০.৭১ শতাংশ উঠে ৩৩,৩৪২.৮০-তে থেমেছে। আর জাতীয় স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক নিফটি ০.৬৭ শতাংশ উঠে দিনের কারবারের শেষে থেমেছে ১০,২৮৩.৬০ পয়েন্টে।
আরও পড়ুন: মধ্যবিত্তদের সুবিধা আবাস যোজনায়
এ দিন বেড়ে গিয়েছে ভারতীয় মুদ্রার মানও। এক ধাক্কায় ডলার প্রতি ৬৯ পয়সা দাম বেড়েছে টাকার।
মুডি’জ রেটিং এবং তার জেরে ভারতীয় অর্থনীতিতে ফের চাঙ্গা ভাব নিঃসন্দেহে স্বস্তি দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে তথা বিজেপিকে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাত এখন ভোটমুখী। নোটবন্দি এবং জিএসটি-র জেরে দেশের অর্থনীতি মারাত্মক ধাক্কা খেয়েছে বলে বিরোধীরা জোরদার প্রচার শুরু করেছে গুজরাতে। কিন্তু মুডি’জ-এর দেওয়া রেটিং বিরোধীদের সেই প্রচারকে অনেকটাই ভোঁতা করে দিল।