শহিদের বেদি ভেঙে রামমন্দিরের ভিত

জনজাতির জন্য জমির অধিকারের লড়াইয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন মোহিনী ত্রিপুরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৮ ০১:৩৬
Share:

ছিল শহিদ বেদি (উপরে)। পরে সেই বেদি ভেঙে তৈরি করা হয়েছে রামমন্দিরের ভিত (নীচে)। নিজস্ব চিত্র

ছিল শহিদ বেদি। হয়ে গেল রামমন্দিরের ভিত! নতুন বিতর্ক বাধল বিজেপি-শাসিত ত্রিপুরায়।

Advertisement

জনজাতির জন্য জমির অধিকারের লড়াইয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন মোহিনী ত্রিপুরা। দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার জনজাতি এলাকায় শহিদ মোহিনীর নামে গ্রাম, স্কুল, কমিউনিটি হল সবই আছে। চার দিন আগে সেই ‘মা মোহিনী শহিদ বেদি’র জায়গাতেই রামমন্দিরের ভিত্তি স্থাপন করেছে বিজেপি এবং বিশ্ব সনাতন সেনা নামে একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। উপস্থিত ছিলেন বিজেপির সহ-সভাপতি সুবল ভৌমিক।

মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তরে তাঁর নামও রয়েছে। জমির লড়াইয়ের ‘শহিদ মা’র বেদির ভিত ভেঙে মন্দিরের পাথর বসানোয় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে জনজাতি মহলে। বিজেপির দাবি, ওই জমি সিপিএম দখল করেছিল। দাবি উড়িয়ে জেলাশাসকের কাছে পাল্টা অভিযোগ করেছেন সিপিএম নেতৃত্ব।

Advertisement

আরও পড়ুন: লাইনে দাঁড়িয়েই রাবণ পোড়ানো দেখছিল জনতা, পিষে দিল ট্রেন, অমৃতসরে মৃত অন্তত ৬০

উত্তর-পূর্বে পাহাড়ের ঢালে ঝুম চাষ জনজাতিদের বেঁচে থাকার দীর্ঘ দিনের পথ। পাঁচ দশক আগে সেই ঝুম চাষে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় প্রতিবাদে নেমেছিলেন টাক্কাতুলসি পাহাড় সংলগ্ন এলাকার জনজাতি মানুষ। তাঁরা চাষ করতে গেলে বাধা দেয় প্রশাসন। প্রতিরোধ করেন স্থানীয় মানুষও। তারই জেরে ১৯৬৭ সালের ১৭ মার্চ গুলি চালিয়েছিল তৎকালীন বিহার মিলিটারি পুলিশ (বিএমপি)। গুলিতে মৃত্যু হয় মোহিনী ত্রিপুরার। সেই ঘটনার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ বিলোনিয়ার মতাই গ্রামে মোহিনী ত্রিপুরার নামে স্মারকবেদির ভিত স্থাপন করেছিলেন ত্রিপুরার তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। সিপিএমের বিলোনিয়া মহকুমা কমিটির সম্পাদক তাপস দত্তের অভিযোগ, গত ৫ অক্টোবর প্রথমে শহিদ বেদির ভিত ভেঙে দেওয়া হয়। তার পরে দুর্গাপুজোর পঞ্চমীর দিন সেখানে রামমন্দিরের ভিত্তিফলক বসিয়ে দেওয়া হয়। জেলা পুলিশ সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, এমন ঘটনার কথা তাদের জানা নেই।

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বিধায়ক বাদল চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘বিজেপি ও সঙ্ঘের চেষ্টাই হচ্ছে ইতিহাস মুছে দেওয়ার। পঞ্চাশ বছর আগের ওই আন্দোলন শুধু ত্রিপুরায় নয়, গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জনজাতিদের বনের জমিতে চাষ ও পাট্টা পাওয়ার পথ প্রশস্ত করেছিল।’’ ত্রিপুরায় বাম আমলেই ২০০৬ সালে তৈরি হয়েছিল বনাঞ্চল আইন। বিজেপি নেতা সুবলবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘সিপিএম ওই জমি দখল করে রেখেছিল। সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ ছিল। রামমন্দিরের ভিত প্রতিষ্ঠায় সাধারণ মানুষ সহযোগিতা করেছেন।’’

তাপসবাবু যদিও পাল্টা জানাচ্ছেন, বিলোনিয়ায় কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন সুশীল বৈদ্য। তাঁরই ছেলে হারাধন বৈদ্য স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জমি দান করেছিলেন সিপিএমকে। তাপসবাবুর বক্তব্য, ‘‘রামমন্দির অন্য কোথাও করা যেত না? জোর করে লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস মুছে দিতে চাইছে বিজেপি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement