আখাউড়া সীমান্ত ফাঁড়ি। ত্রিপুরায়। ছবি: দেবাশিস রায়।
সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে অগস্টে ফের পশ্চিমবঙ্গে আসতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের সীমান্ত আখাউড়ায় বসে এমনটাই জানালেন ‘ল্যান্ড পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়া’র অন্যতম শীর্ষ কর্তা অনিল বাম্বা। তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোলে স্থলবন্দরে বাণিজ্য বাড়াতে প্রায় ৮০ একর জমির উপরে ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট (আইসিপি) তৈরি করা হচ্ছে। এটিই হবে এশিয়ার সব চেয়ে বড় আইসিপি। আমরা চাই, প্রধানমন্ত্রীই এটির উদ্বোধন করুন। ইতিমধ্যেই তার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে।’’
প্রস্তুতি শুধু ভারতের নয়, কলকাতা-ঢাকা-আগরতলার প্রথম বাসযাত্রা নির্বিঘ্নে হওয়ার পরে দু’দেশের এই উষ্ণ সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও। শনিবার ঢাকা থেকে আমাদের বাসে আগরতলা পর্যন্ত এসেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ নিগমের কর্তা কাজি গোলাম তৌসিফ। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাজ শুরু হল। দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সব চেয়ে বড় প্রয়োজন যোগাযোগ পরিকাঠামো আরও বাড়ানো। সেটাই এ বার করতে হবে।’’ হরিপদ বসাক, পিন্টু চৌধুরীর মতো ত্রিপুরাবাসী এই বাসযাত্রা নিয়ে খুবই আশাবাদী। বললেন, ‘‘আমাদের ছেলেমেয়েরা ভিন্রাজ্যে পড়তে গেলে যোগাযোগ নিয়ে খুব সমস্যায় পড়ি। এ বার তার সুরাহা হবে।’’ চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যেতে সুবিধা হবে বলেও মনে করছেন হরিপদবাবুরা।
এ বারের মোদী-হাসিনা আলোচনায় এর মধ্যে বেশ কয়েকটি সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছে। বাসে আসতে আসতে সে কথাই বলছিলেন তৌসিফ। ঢাকা থেকে আগরতলা আসার পথে পড়েছে ভৈরব নদের উপরে আশুগঞ্জ নদী বন্দর। এই আশুগঞ্জকে কেন্দ্র করে দুই দেশের বাণিজ্য আরও বাড়াতে চাইছে বাংলাদেশে। সেই লক্ষে প্রথমেই আশুগঞ্জ থেকে আগরতলা চার লেনের রাস্তা করতে চায় তারা। ইতিমধ্যেই এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের সহায়তায় ওই সড়ক চওড়া করার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তৌসিফ বলেন, ‘‘আশুগঞ্জ বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হলে শিলং, গুয়াহাটির সঙ্গে শ্রীহট্ট হয়ে আশুগঞ্জের যোগাযোগও আরও বাড়বে।’’ শ্রীহট্টে রয়েছে প্রচুর তামাবিল বা হাওড় (বড় ধরনের জলাশয়)। এগুলি একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত। এই হাওড় ধরে চলে আসা যায় ভৈরবে। তার পরে সড়কপথে চলে যাওয়া যাবে ঢাকা কিংবা আগরতলা। সম্প্রতি ত্রিপুরার পালটানা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আশুগঞ্জ হয়ে এ ভাবেই টার্বাইন এসেছে। শুধু আশুগঞ্জই নয়, বাণিজ্যিক যোগাযোগ বাড়াতে মংলা বন্দরের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত রেললাইন তৈরির কাজও দ্রুত সম্পন্ন করতে চায় বাংলাদেশ।
শনিবার ঢাকা থেকে রওনা হয়ে আমরা একে একে পেরোলাম নরসিংদি, আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং আখাউড়া। রাস্তায় পড়েছিল নরসিংদি জেলার উয়াড়ি বটেশ্বর। সম্প্রতি এখানেই জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক দল খনন করে পেয়েছে হাজার বছরের পুরনো শহরের নিদর্শন। ওই শহরের জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা, আবাসন ও অন্য পরিষেবা ব্যবস্থা অবাক করে দিয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিকদের।
আখাউড়া সীমান্তে ভারতের ল্যান্ড পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়ার তৈরি বিশাল আইসিপি দেখে চোখ কপালে ওঠার অবস্থা। প্রায় বিমানবন্দরের মতো এই আইসিপি। সেখানে এক ছাতার তলায় রয়েছে প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল, কার্গো টার্মিনাল, আমদানি ও রফতানির মাল রাখার জন্য ওয়্যারহাউসও। অনিল বাম্বা জানান, ভারতে পাকিস্তান সীমান্তে আটারির পরে আখাউড়াতেই দ্বিতীয় আইসিপি। এর পরে পেট্রাপোলে। একই রকম আইসিপি তৈরি হচ্ছে নেপাল সীমান্তে রক্সৌল, যোগবনি, মেঘালয়-বাংলাদেশ সীমান্তে ডাউকি এবং মণিপুর-মায়ানমার সীমান্তের মোরে-তে। বাম্বার কথায়, ‘‘আইসিপি তৈরির পর ত্রিপুরা-বাংলাদেশের বাণিজ্য এক লাফে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।’’ তিনি জানান, মাসখানেক আগে পেট্রাপোলে এসে আইসিপি তৈরির কাজকর্ম দেখে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। এ বার উদ্বোধন করতে আসার কথা প্রধানমন্ত্রীর।