শক্ত ভিতে মোদী কি এ বার সাহসী সংস্কারে

কথা শুরু ওএনজিসির শেয়ার বিক্রি করা নিয়ে

নয় নয় করে পাঁচ মাস পূর্ণ হয়ে যাবে আগামী ২৬ অক্টোবর। বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার পরে আরও দু’টি রাজ্য দখল সারা। এ বার কি সংস্কারে সাহসী হবেন নরেন্দ্র মোদী? কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক অন্তত তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। মন্ত্রক সূত্রের খবর, মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানা বিজয়ের পর আত্মবিশ্বাসী মোদী এ বার সংস্কারের পথে সাহসী পদক্ষেপ ফেলতে চান। এগোতে চান ওএনজিসি-র মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০৮
Share:

নয় নয় করে পাঁচ মাস পূর্ণ হয়ে যাবে আগামী ২৬ অক্টোবর। বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার পরে আরও দু’টি রাজ্য দখল সারা। এ বার কি সংস্কারে সাহসী হবেন নরেন্দ্র মোদী? কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক অন্তত তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। মন্ত্রক সূত্রের খবর, মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানা বিজয়ের পর আত্মবিশ্বাসী মোদী এ বার সংস্কারের পথে সাহসী পদক্ষেপ ফেলতে চান। এগোতে চান ওএনজিসি-র মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণে। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে বিমা বিল পাশ করানো ও পণ্য-পরিষেবা কর সংক্রান্ত বিল পেশও লক্ষ্য সরকারের।

Advertisement

ক্ষমতায় এসে ইস্তক দেশের আমলাতন্ত্র ও সামগ্রিক ভাবে প্রশাসনকে স্বচ্ছ ও গতিশীল করার দিকে জোর দিচ্ছেন মোদী। তাঁর যুক্তি, ব্যবসা করার অনুকূল পরিবেশটা তৈরি করতে পারলে তবেই আস্থা ফিরবে লগ্নিকারীদের। সেই লক্ষ্যেই প্রশাসনে ইন্টারনেট ও অন্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। লাইসেন্স-রাজ থেকে শিল্পকে মুক্ত করা, সরকারি দফতরকে সাফসতরো রাখার মতো কাজকর্মেও জোর দেওয়া হচ্ছে।

আবার মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় ভোটের ফল বেরোনোর আগেই ডিজেলের দামের উপরে সরকারি নিয়ন্ত্রণ তুলে নিয়ে মোদী লগ্নিকারীদের এই বার্তা দিতে চেয়েছেন যে, তাঁর সরকার সংস্কারের লক্ষ্যে সাহসী পদক্ষেপ করতে পিছপা নয়। অর্থিক ভাবে এগিয়ে থাকা দুই রাজ্য বিজেপির দখলে আসার পরপরই শেয়ার বাজারও চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। সংস্কারের রথ ছোটানোর পক্ষে এটাই সব চেয়ে ভাল সময়, বলছেন অর্থ মন্ত্রকের কর্তারাও।

Advertisement

কিন্তু সমস্যা হল লোকসভায় বিপুল শক্তি থাকলেও রাজ্যসভায় এখন গরিষ্ঠতা নেই সরকারের। মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানা বিধানসভায় শক্তি অনেক গুণ বেড়ে যাওয়ায় আগামী দিনে রাজ্যসভাতেও বিজেপির আসন বাড়বে ওই দু’টি রাজ্য থেকে। প্রয়োজনে সমর্থন মিলবে এনসিপি-রও। তা ছাড়া, জম্মু-কাশ্মীর, ঝাড়খণ্ড ও দিল্লি ছাড়া অদূর ভবিষ্যতে কোনও বিধানসভা নির্বাচনও নেই। ফলে রাজনৈতিক লাভক্ষতির অঙ্ক মেপে চলার আশু দায়ও থাকছে না। ফলে সংস্কারের পথে সাহসী পা ফেলতে আর কোনও বাধাও নেই এখন মোদীর সামনে।

এই অবস্থায় আজ থেকেই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ওএনজিসি-র বিলগ্নিকরণ নিয়ে ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা মনে করছেন, ওএনজিসি-সহ কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শেয়ার বিক্রি করে এখন সরকারি কোষাগারে যথেষ্ট অর্থ তুলে নেওয়া সম্ভব। এরই পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, “বিমা বিলে বিদেশি লগ্নির পরিমাণ ৪৯ শতাংশে নিয়ে যাওয়া গেলে অন্তত ২৫ হাজার কোটি টাকার বিদেশি পুঁজি ভারতে আসবে। অর্থনীতিতে যার সরাসরি সুফল মিলবে।”

মোদী সরকারের কাছে শিল্প মহলের দাবি, পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) দ্রুত চালু করা হোক। এ সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী বিলটিও শীতকালীন অধিবেশনেই পেশ করা হবে বলে অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর। তবে এই কর চালু করার ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির মত গুরুত্বপূর্ণ। গুজরাত, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশের পাশাপাশি মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানা বিজেপি হাতে আসায় দেশের বড় রাজ্যগুলির অধিকাংশই একই সুরে কথা বলবে। তাই জিএসটি চালু করার ক্ষেত্রেও সরকার আগের চেয়ে সুবিধেজনক জায়গায় রয়েছে। একশো দিনের কাজ প্রকল্পটিকেও ঢেলে সাজতে চায় সরকার। ইউপিএ আমলের জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন আইনটিকে সংশোধন করে আরও শিল্পের অনুকূল করে তুলতে চায় সরকার। তার জন্যও অবশ্য রাজ্যগুলির সহযোগিতা প্রয়োজন।

অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, ডিজেলের দাম বিনিয়ন্ত্রণের পরে জ্বালানির মধ্যে শুধু রান্নার গ্যাস ও কেরোসিনে ভর্তুকি দিতে হবে সরকারকে। রান্নার গ্যাসের ক্ষেত্রে তা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দেওয়া হবে এ বার। নানা খাতে ভর্তুকির বহর আরও কী ভাবে কমানো যায়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রকে সাম্প্রতিক কিছু রদবদলও ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, সরকার সাহসী হতে চাইছে। অরবিন্দ মায়ারামকে সরিয়ে অর্থসচিব করা হচ্ছে রাজস্থানের মুখ্যসচিব রাজীব মেহরিশিকে। যিনি রাজস্থানে একের পর এক সাহসী সংস্কারের রূপরেখা তৈরি করেছেন। মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টার পদে নিয়ে আসা হয়েছে আর্থিক বৃদ্ধির তত্ত্বের প্রবক্তা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যমকে। কিন্তু শুধু ইঙ্গিতেই যে চিড়ে ভিজবে সেটাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন অর্থ মন্ত্রকের কর্তারাই। স্বচ্ছ ভারত, সবার জন্য শৌচালয় নিয়ে যতই সক্রিয় হোন প্রধানমন্ত্রী, লগ্নিকে ভারতমুখী করতে বা অর্থনীতির মুখ ঘোরাতে হলে সংস্কারের আসল কাজগুলি করতেই হবে। অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা এর ব্যাখ্যায় বললেন, “এপ্রিল থেকে জুন মাসে বৃদ্ধির হার ৫.৭ শতাংশে পৌঁছেছে। কিন্তু শিল্পের ছবিটা এখনও উজ্জ্বল নয়। জুলাই-অগস্টেও শিল্পে বৃদ্ধির হার ০.৪ শতাংশেই ছিল। সংস্কারের পথে সাহসী সিদ্ধান্ত না নিয়ে তাই উপায়ও নেই সরকারের।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement