প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
লোকসভায় উল্লেখযোগ্য শক্তিহ্রাসের পর কি কেন্দ্রের বেসরকারিকরণ নীতিতে রাশ টানতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী? তেমনই ইঙ্গিত সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের রিপোর্টে। রিপোর্ট অনুযায়ী, আগামী দিনে ২০০-রও বেশি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে আরও লাভজনক করে তোলার প্রচেষ্টা নিতে চলেছে ভারত সরকার। সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা জানাচ্ছে, ওই সংস্থাগুলির জন্য আগামী ৫ বছরের লক্ষ্যমাত্রাও স্থির করা হয়েছে। সব ঠিকঠাক চললে, নির্ধারিত সময়ের আগেই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির লভ্যাংশ প্রায় ৪৮,৪৪১ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে সরকারি বিশেষজ্ঞদের অনুমান।
অতীতে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা নামমাত্র দামে তুলে দেওয়া হয়েছে বেসরকারি পুঁজিপতিদের হাতে। এর আগে রাজকোষকে শক্তিশালী করতে করোনাকালে বিলগ্নিকরণ নীতির পথ নিয়েছিল কেন্দ্র। ২০২১ সালেও রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের ৫০ লক্ষ ১০ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা বেসরকারি খাতে লগ্নির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে এ বারের লোকসভা ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর সুর পাল্টাতে পারে মোদী সরকার, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
২০২১ সালে যে সব রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রির ঘোষণা করা হয়েছিল, তার মধ্যে ছিল একটি বিমা সংস্থা এবং দু’টি ব্যাঙ্ক। এ ছাড়া ছিল ইস্পাত ও ওষুধ-প্রস্তুতকারী সংস্থাও। অথচ বহু চেষ্টার পরেও ভারত এত বছরে কেবল ঋণে জর্জরিত এয়ার ইণ্ডিয়াকে টাটা গ্রুপের কাছে বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছে। বিক্রি হয়েছে এলআইসি-র মাত্র ৩.৫ শতাংশ শেয়ার। অন্য দিকে, বেসরকারিকরণের চোখরাঙানি সত্ত্বেও সংস্কারের আশায় গত এক বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির সামগ্রিক বাজারমূল্য বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।
আপাতত চলতি অর্থবর্ষে দু’লক্ষ কোটি টাকার কিছু বেশি সংগ্রহের লক্ষ্যে রয়েছে ভারত। রয়টার্সের রিপোর্ট বলছে, এই অর্থ সরকারি ক্ষেত্রগুলিতে পুনর্বিনিয়োগ করা হবে। স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার বদলে প্রতিটি রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে আগামী পাঁচ বছরের জন্য উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হতে চলেছে।
২৩ জুলাই সংসদে চলতি অর্থবর্ষের পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করতে চলেছেন নির্মলা সীতারমন। এ নিয়ে টানা সাত বার সংসদে বাজেট পেশ করবেন তিনি। চলতি বছরে লোকসভা নির্বাচনের কারণে গত ১ ফেব্রুয়ারি সংসদে অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট পেশ করা হয়েছিল। নরেন্দ্র মোদী তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করতে চলেছেন নির্মলা। গত শনিবার সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু সমাজমাধ্যমে ঘোষণা করেন, আগামী ২২ জুলাই থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত সংসদে বাজেট অধিবেশন চলবে।
রয়টার্স বলছে, সম্ভবত বাজেটের দিনই নির্দিষ্ট করা শ’দুয়েক সংস্থার মালিকানাধীন অব্যবহৃত জমি এবং অন্যান্য অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়ের পরিকল্পনা নিতে চলেছে রাষ্ট্র। এই সম্পত্তি বিক্রি সংস্থার উন্নতির স্বার্থেই ব্যবহৃত হবে বলে রিপোর্ট। যদিও এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রক এখনও কোনও মন্তব্য করেনি।
প্রসঙ্গত, মোদী সরকারের আগের দুই দফায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল বিজেপির। এ বার তা আর নেই। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে শরিক দলের হাত ধরে ক্ষমতায় এসেছে নরেন্দ্র মোদীর দল। বাজেটেও সেই শরিকি রাজনীতির প্রভাব থাকতে পারে বলে মনে করছেন রাজনীতিকদের একাংশ। বেসরকারিকরণ নীতিতে জোর কমিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার উন্নতিতে জোর কি সেই চাপেরই ফল? পূর্ণাঙ্গ উত্তর মিলবে বাজেট পেশ হলেই।