বৈঠক বাতিল হয়েছে গত কাল। আজও পাকিস্তানের প্রতি ক়ড়া মনোভাবই বজায় রাখল নরেন্দ্র মোদী সরকার। সীমান্তের ওপার থেকেও তোপ দেগে জানিয়ে দেওয়া হল, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) পর্যায়ের বৈঠক বাতিলের জন্য একগুঁয়ে ভারতই দায়ী। এই পরিস্থিতিতে আলোচনার ক্ষেত্রে দু’দেশকেই নতুন ভাবে পথ খুঁজতে হবে বলে মনে করছে কূটনৈতিক শিবির।
দীর্ঘ টালবাহানার শেষে গত কাল রাতে এনএসএ পর্যায়ের বৈঠক বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান। বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়ত কনফারেন্স নেতাদের অংশীদার করে কাশ্মীর নিয়ে এনএসএ বৈঠকে কোনও আলোচনা সম্ভব নয়, এই অবস্থানে অনড় ছিল দিল্লি। স্নায়ুযুদ্ধের শেষে ইসলামাবাদ জানিয়ে দেয়, তাদের পক্ষে এমন ‘পূর্বশর্ত’ মেনে আলোচনায় যোগ দেওয়া সম্ভব নয়। আজও নরেন্দ্র মোদী সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, উফা বৈঠকের পরের বিবৃতিতে এনএসএ স্তরের বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হবে তা স্পষ্ট বলা ছিল। পাকিস্তান বৈঠক বাতিল করতে চেয়েছে বলেই কাশ্মীর নিয়ে সরব হয়েছে। গত কাল বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সুরেই আজ পাকিস্তানকে একহাত নেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘উফায় দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে কাশ্মীর নিয়ে কেন চুপ ছিল পাকিস্তান। তখনই ঠিক হয়েছিল এনএসএ বৈঠকে কেবল সন্ত্রাস নিয়েই আলোচনা হবে।’’
ভারতের তোপের জবাব দিয়েছে পাকিস্তানও। ‘একগুঁয়ে’ ভারতই ছক কষে বৈঠক বাতিল করেছে বলে দাবি পাক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা মুহম্মদ আসিফের। সে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সরতাজ আজিজের মতে, ‘‘উফা বিবৃতির ব্যাখ্যা দু’দেশ দু’ভাবে করেছে। কাশ্মীর নিয়ে কী ভাবে আলোচনা হতে পারে তা আমরা এনএসএ বৈঠকে স্থির করতে চেয়েছিলাম। উত্তেজনা কমাতে কাশ্মীর নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন। সন্ত্রাস নিয়ে নয়।’
তবে পাকিস্তানের এই পদক্ষেপে আখেরে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় রাজনীতিতে ভারতের ফায়দা হবে বলেই মনে করছে মোদী শিবির। তাই গুরদাসপুর ও উধমপুরে হামলা ও তাতে ধৃত লস্কর জঙ্গি নাভেদের স্বীকারোক্তি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার প্রমাণ হিসাবে আন্তর্জাতিক মঞ্চের সামনে তুলে ধরবে বিদেশ মন্ত্রক। তার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হবে সন্ত্রাস নিয়ে আলোচনায় পাকিস্তানের অনিচ্ছাকে। আবার ঘরোয়া রাজনীতিতে বিষয়টিকে মোদী সরকারের ‘‘শক্ত কূটনীতি’-র ফল হিসেবে দেখিয়ে জাতীয়তাবাদের হাওয়া তুলতে চাইবে বিজেপি।
বিজেপির ছক আঁচ করেই সক্রিয় হয়েছে কংগ্রেস। তাদের মতে, জয় নয়, কূটনীতিতে চূড়ান্ত ভাবে ব্যর্থ মোদী সরকার। প্রথমে বিদেশসচিব, পরে এনএসএ- এক বছরে ভারত ও পাকিস্তানের দু’টি শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক বাতিল হয়েছে। কংগ্রেসের মতে, সেটা দিল্লির কূটনীতির পক্ষে অস্বস্তিকর বিষয়। দলীয় মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি বলেন, ‘‘পাকিস্তান প্রথম যে দিন বৈঠক প্রসঙ্গে দোলাচল দেখায়, সে দিনই ওই বৈঠক বাতিল করে ইসলামাবাদকে কড়া বার্তা দেওয়া উচিত ছিল দিল্লির। এ ভাবে কূটনীতি হয় না।’’
দক্ষিণ এশিয়ায় আপাতত আমেরিকা কোনও অস্থিরতাই চায় না বলে ধারণা কূটনীতিকদের। ভারত-পাক বৈঠক বাতিল হওয়ায় আজ হতাশাই জানিয়েছে ওয়াশিংটন। ওবামা প্রশাসনের মতে, উফায় দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক আশা জাগিয়েছিল। কিন্তু, এনএসএ বৈঠক বাতিল হয়ে যাওয়া যথেষ্ট হতাশজনক। তবে কিছু দিনের মধ্যেই ফের দু’দেশ আলোচনার টেবিলে ফিরবে বলে আশা প্রকাশ করেছে মার্কিন প্রশাসন।
বৈঠক বাতিল হওয়ায় হতাশ জম্মু-কাশ্মীরের রাজনৈতিক শিবিরের বড় অংশই। হুরিয়তের কট্টরপন্থী নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানি ও তাঁর অনুগামীরা অবশ্য দাবি করেছেন, এটা পাকিস্তান ও তাঁদের কূটনৈতিক জয়। কারণ, গোটা বিশ্ব বুঝতে পারল কাশ্মীর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে জমি নিয়ে বিবাদ নয়। এই সমস্যার মুখ্য পক্ষ হচ্ছেন জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ।
কিন্তু কবে ফের আলোচনা হবে?
সরতাজ আজিজ জানিয়েছেন, উফা বিবৃতি অনুযায়ী এর পরে দু’দেশের সেনার ডিজিএমও-র বৈঠক হওয়ার কথা। দু’দেশের মধ্যে সেই বৈঠক যথারীতি হবে। তবে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সম্মেলনের সময়ে কোনও বৈঠকের প্রস্তাব দেবে না পাকিস্তান। সে উদ্যোগ ভারতকেই নিতে হবে। আর রাজনাথ সিংহ বল ঠেলে দিয়েছেন ইসলামাবাদের কোর্টে। রাজনাথের কথায়, ‘‘আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে যাওয়ার চেষ্টা করে যাব। বাকিটা পাকিস্তানের হাতে রয়েছে।’’