সময় যত গড়াচ্ছে, বাড়ছে মন্ত্রিসভার জল্পনা। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে কে কে শপথ নেবেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তুমুল উত্তেজনা। ইতিমধ্যেই অমিত শাহ ফোন করে সাংসদদের ডাকতে শুরু করেছেন। বাংলার বিপুল সাফল্যের সৌজন্যে পূর্ণ ও রাষ্ট্রমন্ত্রী মিলিয়ে মন্ত্রী হতে পারেন পাঁচ জন। আর বাংলার যাঁরা শপথ নেবেন, তাঁদের বাংলায় শপথ নিতে বলা হয়েছে।
ছিলেন দলের সভাপতি। এ বার মন্ত্রিসভায় আসছেন অমিত শাহ। নিশ্চিত করলেন গুজরাতের বিজেপ সভাপতি জিতু ভাগানি। স্বরাষ্ট্র বা অর্থ, যে কোনও একটি মন্ত্রক পাচ্ছেন অমিত।
আগের জমানায় বিদেশমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর কাজে বিজেপি নেতৃত্ব খুশি হলেও বাধ সাধতে পারে তাঁর বয়স এবং স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা। যদিও শেষ পর্যন্ত তাঁকে বিদেশমন্ত্রী হিসেবেই রাখা হতে পারে বলেই বিজেপি সূত্রের খবর।
আগের মন্ত্রিসভায় ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ বারও রাজনাথ সিংহের মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া কার্যত নিশ্চিত। উত্তরপ্রদেশের লখনউ থেকে নির্বাচিত সাংসদ রাজনাথের মন্ত্রক পরিবর্তন হতে পারে বলে জল্পনা রাজনৈতিক মহলে।
সড়ক পরিবহণ, হাইওয়ে, জাহাজ, জলসম্পদ, নদী উন্নয়ন ও গঙ্গা সংস্কারের মতো দফতর সামলেছেন নিতিন গডকড়ী। মোদী জমানার পাশাপাশি বাজপেয়ী সরকারেও তিনি মন্ত্রী ছিলেন। আরএসএস ঘনিষ্ঠ নাগপুরের সাংসদ এ বারও থাকছেন মন্ত্রিসভায়। দফতর নিয়ে জল্পনা রয়েছে।
ভোটের আগে অন্তর্বর্তী বাজেটের সময় শারীরিক অসুস্থতায় বিদেশে ছিলেন বিদায়ী অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। বাজেট পেশ করেছিলেন পীযূষ গয়াল। মোদীর প্রথম মন্ত্রিসভায় ছিলেন রেল এবং কয়লা মন্ত্রকের গুরুদায়িত্বে। জেটলি অসুস্থতার জন্য মন্ত্রিসভায় থাকছেন না। ফলে এ বার জেটলির চেয়ারে দেখা যেতে পারে চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট গয়ালকে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে নির্মলা সীতারমণের ভূমিকায় খুশি বিজেপি নেতৃত্ব এবং প্রধানমন্ত্রী। রাফাল বিতর্ক যে ভাবে সামলেছেন বাগ্মী সীতারমণ, তাতে তাঁর পদোন্নতিও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিদেশমন্ত্রকের গুরুদায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। মহারাষ্ট্রের রাজাপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ সুরেশ প্রভু গত মন্ত্রিসভায় ছিলেন শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রক এবং অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের দায়িত্বে। তবে প্রথম দিকে রেল মন্ত্রকও সামলেছেন। তিনিও মন্ত্রিসভায় নিশ্চিত। কোন দফতর পাবেন, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে।
বিজেপির বিপুল জয়ের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বড় নক্ষত্র স্মৃতি ইরানি। কংগ্রেসের দুর্গ অমেঠীতে বিরোধী শিবিরের কাণ্ডারী কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীকে হারিয়েছেন। ফলে বস্ত্রমন্ত্রী থেকে তাঁর পদোন্নতি নিশ্চিত। এমনকি, বিদেশ মন্ত্রকও পেতে পারেন বলে একটি সূত্রে খবর।
মহারাষ্ট্রের রাজাপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ সুরেশ প্রভু গত মন্ত্রিসভায় ছিলেন শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রক এবং অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের দায়িত্বে। তবে প্রথম দিকে রেল মন্ত্রকও সামলেছেন। তিনিও মন্ত্রিসভায় নিশ্চিত। কোন দফতর পাবেন, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে।
প্রকাশ জাভড়েকর। মোদী ওয়ান সরকারে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন দক্ষ হাতে। এবারও তাঁর মন্ত্রিত্ব কার্যত পাকা। তবে দফতর নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলেই খবর।
পটনা সাহিব কেন্দ্র থেকে বিক্ষুব্ধ বিজেপি সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহাকে হারিয়েছেন। আগের বার আইনমন্ত্রক এবং তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী ছিলেন পেশায় আইনজীবী রবিশঙ্কর প্রসাদ। মন্ত্রিসভায় তাঁর আসন পাকা।
উত্তর-পূর্বে বিজেপির বিপুল সাফল্য এ বারও। তা ছাড়া পরিকাঠামো-সহ উত্তর-পূর্বের সামগ্রিক উন্নয়নের কথা মাথায় রেখেই আগের মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছিল কিরেণ রিজিজুকে। এ বার তাঁর পদোন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রাক্তন সেনা অফিসার ভি কে সিংহও মন্ত্রিসভায় জায়গা পাচ্ছেন। আগের বার তিনি ছিলেন বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী।
এনডিএ-র শরিক হিসেবে গতবারও মন্ত্রিত্বে ছিলেন রামবিলাস পাসোয়ান। এলজেপি সুপ্রিমোর এবারও মন্ত্রিসভার চেয়ার পাকা। তবে ছেলে চিরাগ পাসোয়ানের জন্য দরবার করেছেন পাসোয়ান। আগের মন্ত্রিসভায় ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রক এবং গণবণ্টনের দায়িত্বে ছিলেন হাজিপুরের দীর্ঘদিনের সাংসদ।
পরিসংখ্যান মন্ত্রী ছিলেন সদানন্দ গৌড়া। কর্ণাটকের ব্যাঙ্গালোর উত্তর কেন্দ্রের এই সাংসদ এবারও মন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন।
এনডিএ-র আর এক শরিক শিরোমণি অকালি দল। আগের মন্ত্রিসভায় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণমন্ত্রী এ বারও স্থান পাচ্ছেন মন্ত্রিসভায়। তবে হরসিমরতের বদলে তাঁর স্বামী সুখবীর বাদলকেও মন্ত্রী করা হতে পারে বলে একটি সূত্রে খবর।
আসানসোল থেকে ২০১৪ সালে প্রথম বার জিতে মন্ত্রী হয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। তবে আগের বার ছিলেন ভারী শিল্পমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী। এ বার পদোন্নতি পেয়ে পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পেতে পারেন গায়ক সাংসদ। তবে কোন দফতর পাবেন, তা নিয়ে জল্পনা চরমে।
গত বার গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিমল গোষ্ঠীর সমর্থন নিয়ে দার্জিলিং থেকে জিতেছিলেন সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। পেয়েছিলেন ইলেক্ট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব। এ বার দার্জিলিং থেকে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে দাঁড়ালেও তাঁর জয় আটকায়নি। ফলে তিনিও এবার পূর্ণমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন।
রাজ্য থেকে রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরীর মন্ত্রিত্ব কার্যত নিশ্চিত। বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব যে তাঁকে ফোন করে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শপথ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তা নিজেই জানিয়েছেন দেবশ্রী। বাম প্রার্থী মহম্মদ সেলিম, কংগ্রেসের দীপা দাশমুন্সি এবং তৃণমূলের কানাইয়ালাল আগরওয়ালের মতো তিন হেভিওয়েটকে হারানোর পুরস্কার পাচ্ছেন দেবশ্রী।
মনমোহন জমানায় তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন মুকুল রায়। রাজ্যে এ বার বিজেপির বিপুল জয়ের পুরস্কার পেতে পারেন মুকুল। তবে তাঁকে দায়িত্ব দিলে পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্বই দিতে হবে। সেক্ষেত্রে অবশ্য মুকুলকে রাজ্যসভার সাংসদ করে আনতে হবে।
বাংলায় বিজেপির জয়রথের আরেক কারিগর দিলীপ ঘোষেরও মন্ত্রিসভায় জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা জোরদার। খড়গপুর থেকে মানস ভুঁইঞার মতো হেভিওয়েট সাংসদকে হারিয়ে সাংসদ হয়েছেন দিলীপ। রাজ্য বিজেপি সভাপতি নিজে অবশ্য বলেছেন, সংগঠনের কাজই মন দিয়ে করতে চান।
হুগলির দোর্দণ্ডপ্রতাপ সাংসদ রত্না দে নাগকে হারিয়ে এ বার জিতেছেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। তাঁরও মন্ত্রিসভায় জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে প্রথমেই পূর্ণমন্ত্রক না দিয়ে তাঁকে রাষ্ট্রমন্ত্রী বা স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনও মন্ত্রকের ভার দেওয়া হতে পারে।
পাহাড়ের ভাবাবেগ এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে মন্ত্রিসভা গঠিত হলে ভাগ্য খুলে যেতে পারে রাজু বিস্তারও। উত্তরবঙ্গ থেকে নাম ভাসছে তৃণমূল ছেড়ে আসা নিশীথ প্রামাণিকের নামও।
এ ছাড়া বাঁকুড়া থেকে জয়ী সুভাষ সরকার এবং ঝাড়গ্রামের সাংসদ খড়গপুরের অধ্যাপক কুনার হেমব্রমের নামও জল্পনায় রয়েছে। বিশেষ করে জঙ্গলমহলের কথা মাথায় রেখে এই দু’জনের নাম বিবেচনায় রয়েছে বিজেপির।