দীর্ঘ দিন থেমে থাকার পর আবার গড়াতে শুরু করল ভারত-নেপাল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের চাকা। আজ নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির ভারত সফরের দ্বিতীয় দিনে দু’দেশের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের পর যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ, রেল ও সড়ক যোগাযোগ-সহ মোট ন’টি চুক্তি সই করেছে দু’টি দেশ। তবে দু’দেশের বাণিজ্য প্রতিনিধি, আমলা পর্যায়ের বৈঠকের পাশাপাশি আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ওলির বৈঠকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পেয়েছে নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি। বিদেশমন্ত্রক সূত্রের খবর, মোদী স্পষ্টভাষায় নেপালের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছেন, মদেশীয়দের দাবিদাওয়া আংশিক মেনে নিয়ে সে দেশের সংবিধান সংশোধন করার যে সিদ্ধান্ত ওলির সরকার নিয়েছেন, তা স্বাগত। কিন্তু স্থায়ী ভাবে সে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে গেলে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলতে হবে। মোদীর বক্তব্য, সীমান্ত রাষ্ট্রে ভারত-বিরোধী মনোভাব তৈরি হলে তা শুধু নয়াদিল্লির পক্ষেই নয়, গোটা অঞ্চলের শান্তি এবং অর্থনৈতিক বিকাশের জন্যই ক্ষতিকর।
আরও পড়ুন- দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ, জাঠ বিদ্রোহে জ্বলছে হরিয়ানা
ওলি অবশ্য আজ গোড়া থেকেই ভারতের সঙ্গে শান্তির পায়রা ওড়ানোর বার্তাই দিতে চেয়েছেন। দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠকের পর তিনি কোনও রাখঢাক না করেই সংবাদমাধ্যমের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন, ‘‘আমি ভারতে এসেছি যাবতীয় ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাতে। নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর ভারত এবং নেপালের সম্পর্ক যে উচ্চতায় ছিল ফের তাকে সেখানে নিয়ে যেতে চাই। এখনও ভারতের জন্য নেপালের মানুষের আবেগ রয়েছে।’’
ওলিকে পাশে দাঁড় করিয়ে মোদীও কাঠমান্ডুর রাজনৈতিক নেতৃত্বের উদ্দশে সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘নেপালে দীর্ঘ সংগ্রামের পর নতুন সংবিধান রচিত হয়েছে। আমি নেপালের মানুষ এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অভিনন্দন জানাই। কিন্তু সংবিধানের সাফল্য নির্ভর করে ঐকমত্য এবং পারস্পরিক আলোচনার উপর। আমি এটা বিশ্বাস করি যে আপনি (ওলি) সংবিধানের সমস্ত বিষয়ের সমাধান করতে পারবেন। নেপালকে সুস্থিতি এবং উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন।’’
পরে বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর বিষয়টির ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘মদেশীয় সমস্যার বিষয়টি নিঃসন্দেহে নেপালের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। কিন্তু সীমান্তবর্তী দেশ হওয়ায় এর প্রভাব ভারতের উপরেও পড়ছে। আজকের আলোচনায় এ ব্যাপারে আমাদের উদ্বেগের কথা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে নেপালকে। সংবিধান সংশোধন করে মদেশীয়দের দাবি, আংশিক ভাবে মেনে নেওয়া হলেও দু’টি বিষয় এখনও বাকি থেকে গিয়েছে। তাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার এবং প্রাদেশিক সীমান্ত তৈরির বিষয়। এই কাজগুলিকেও দ্রুত শেষ করতে হবে।’’
আজ যে চুক্তিগুলি দু’দেশ সই করেছে তার মধ্যে অন্যতম হল বিশাখাপত্তনমের বন্দরটি নেপালের ব্যবহার করার অধিকার পাওয়া (অন্য দেশে তাদের পণ্য পরিবহণের জন্য), নেপালের তরাই এলাকায় রাস্তার পরিকাঠামো উন্নয়ন, নেপাল এবং বাংলাদেশের মধ্যে কাকরবিট্টা-বাংলাবন্ধ করিডরের মধ্যে দিয়ে পণ্য যোগাযোগের মতো বিষয়গুলি। নেপালের ভূমিকম্পের পর যে অর্থ সাহায্য করেছিল ভারত, তা নেপালের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পুনর্গঠনে কী ভাবে কাজে লাগানো যায়, চুক্তি হয়েছে এই বিষয়টি নিয়েও।