প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে কাজের যোগ্য সম্মান দিতে বিজেপি জানে বলে দাবি করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ নিয়ে বিজেপির কোনও ছুৎমার্গ নেই বলেই তাঁর দাবি। উপলক্ষ ছিল দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্মদিন, নয়াদিল্লিতে আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় ঘুরেফিরে শোনা গেল দুই বাঙালির নাম। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং প্রণব মুখোপাধ্যায়। এঁদের সম্মান জানিয়ে বিজেপি সে কথাই প্রমাণ করেছে বলে বোঝাতে চাইলেন মোদী।
দীনদয়ালের সঙ্গে এই দু’জনের সম্পর্ক কী? নরেন্দ্র মোদী বললেন, বিজেপির নীতিপ্রদর্শক দীনদয়াল। আর তিনি শিখিয়েছেন যোগ্যকে সম্মান জানাতে। তাঁর আদর্শে চলেই নেতাজিকে সম্মান জানিয়েছে বিজেপি। কট্টর সমালোচক হওয়া সত্ত্বেও প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণবকে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান জ্ঞাপনে পিছপা হয়নি। মোদীর এই বক্তৃতা শুনে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ, বাংলার ভোটের মুখে বাঙালিদের মন ছুঁতে কোনও চেষ্টাই বাদ রাখছেন না মোদী।
মোদী এ দিন বলেন, ‘‘রাজনৈতিক ছুৎমার্গ বিজেপির সংস্কৃতি নয়। রাজনৈতিক ও আদর্শগত বিরোধ সত্ত্বেও যোগ্যদের সম্মান জানাতে দ্বিধা করে না বিজেপি।’’ প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে মোদীর সুসম্পর্কের কথা রাজনৈতিক মহলে অনেকেরই জানা। মোদী প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময় রাষ্ট্রপতি ছিলেন প্রণব। মোদীকে শপথ পাঠ করান তিনিই। মোদী এদিন বলেন, ‘‘বিজেপির কট্টর সমালোচক ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তবু তাঁকেও দেশের সর্বোচ্চ সম্মান জ্ঞাপন করেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। নেতজিকে সম্মান জানিয়েছে। কারণ কংগ্রেসের মতো পরিবারতন্ত্রে নয়, বিজেপি বিশ্বাস করে যোগ্যতায়। রাজনৈতিক মতাদর্শে বিরোধী অবস্থান বলে যোগ্য ব্যক্তিকে অসম্মান করতে পারি না আমরা। কারণ আমরা রাজনৈতিক ছুঁৎমার্গে বিশ্বাস করি না।’’
কিছুদিন আগেই নেতাজির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল থেকে নেতাজি স্মরণে ভাষণ দেন তিনি। সেই অনুষ্ঠানে কিছু দর্শকের ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি নিয়ে বিতর্ক হলেও তারপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিজেপি নেতারা বুঝিয়ে দিয়েছেন, মোদী যে ভাবে নেতাজিকে স্মরণ করেছেন, সে ভাবে আগে কখনও বাংলায় নেতাজি স্মরণ হয়নি। বৃহস্পতিবার মোদী নিজেও কতকটা সে সুরেই কথা বললেন। নেতাজী, অম্বেডকর, বল্লভভাই পটেলকে সম্মান জানিয়েছে তারা। আবার বিজেপির কট্টর সমালোচক প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, কংগ্রেস নেতা তরুণ গগৈ, এস সি জামিরকে দেশের সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করেছে।
সোমবারই কংগ্রেস নেতা ও রাজ্যসভা সাংসদ গুলাম নবি আজাদের বিদায়ী ভাষণে চোখের জল ফেলেছেন মোদী। আজাদকে ‘প্রকৃত বন্ধু’ সম্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘আপনাকে আমি অবসর নিতে দেব না।’’ বিরোধী দলের নেতার জন্য মোদীর চোখের জল আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছিল। বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক ছুৎমার্গের কথা বলে তিনি বোঝালেন কে কোন শিবিরের সেটা বড় কথা নয়, কী কাজ করেছেন সেটাই আসল। কাজে বিশ্বাসী বিজেপি। আর এই আদর্শের শিক্ষা তাঁরা পেয়েছেন দীনদয়ালের কাছেই।