জয়ের হাসি, বৃহস্পতিবার সংসদে। ছবি: পিটিআই
লোকসভায় নরেন্দ্র মোদীর দল সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু রাজ্যসভায় তারাই সংখ্যালঘু। এ বারে সেই রাজ্যসভাতেই বিরোধী জোটকে হারিয়ে অনায়াস জয় পেল মোদীর নেতৃত্বাধীন জোট। লোকসভায় অনাস্থা ভোটের পরে এটা তাদের দ্বিতীয় জয়। লোকসভা ভোটের আগে যা দিয়ে গেল নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত।
গত কাল রাতে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক সমর্থনের কথা ঘোষণার পরেই রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান পদে জেডিইউ প্রার্থী হরিবংশ নারায়ণ সিংহের জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়। আজ হলও তা-ই। যা নিয়ে কটাক্ষ করে নবীনের দল থেকে বহিষ্কৃত জয় পণ্ডা এ দিন বলেন, এনডিএর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জন্যই তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হল। অথচ খোদ নবীনই এখন মোদী-শরণে! নবীন এবং আরও কিছু নয়া সঙ্গীর দৌলতে ২৪৪ আসনের রাজ্যসভায় কংগ্রেসের বি কে হরিপ্রসাদকে হারিয়ে এ দিন জিতলেন এনডিএর হরিবংশ। তিনি পেলেন ১২৫ ভোট। আর হরিপ্রসাদ পেলেন ১০১টি ভোট।
সংখ্যাতত্ত্বের এই কচকচির বাইরে যেটা উঠে এল, তা হল, এনডিএর ৯০ জনের বাইরে বিজেডি, এডিএমকে, টিআরএস, আইএনএলডি-র মতো দলের প্রত্যক্ষ সমর্থন আদায় করেই হরি-লাভ হল মোদীর। পরোক্ষে জোটালেন জগনের দল ও সদ্য এনডিএ-ত্যাগী মেহবুবা মুফতির সমর্থন। ওই দুই দল ভোটই দেয়নি।
বিরোধী শিবিরে একমাত্র সংযোজন চন্দ্রবাবু নায়ডু। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অখিলেশের দল কংগ্রেস প্রার্থীকে ভোট দিলেও তাঁদের দলের সব সাংসদ আসেননি। রাহুল গাঁধী ফোন না করায় ভোট দিতে এল না অরবিন্দ কেজরীবালের দলও। কংগ্রেসেরও সকলে উপস্থিত থাকলেন না। ফলে বিরোধী শিবিরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, প্রতিটি ভোটে জেতার জন্য বিরোধীরা কি মোদী-অমিত শাহের মতোই মরিয়া থাকেন? বিরোধী জোটকে এক করার জন্য কি তৈরি কংগ্রেস? ডেপুটি চেয়ারম্যান নির্বাচনের মতোই মোদী-শাহ যদি আচমকাই লোকসভা ভোট এগিয়ে আনেন, ঘর গোছানোর সুযোগ কি পাবে ছত্রভঙ্গ বিরোধীরা?
সনিয়া গাঁধী অবশ্য বলছেন, ‘‘জয়-পরাজয় থাকেই।’’ কিন্তু এটি কি বিরোধী জোটের ব্যর্থতা? সনিয়ার জবাব, ‘‘না, কেন হতে যাবে?’’ ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেস নেতারা বলছেন, বিরোধী শিবিরের সব দলকে প্রার্থী দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু কেউ লড়তে না চাওয়ায় জোটের স্বার্থেই কংগ্রেস বড় দল হিসেবে দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিল। অন্য দিকে অমিত শাহরা ঘর গুছিয়ে তার পর ভোট ঘোষণা করেছেন। নিজেদের শক্তি নেই বলেই শরিক দল থেকে প্রার্থী ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছেন। বিজেপি পাল্টা বলছে, সেটিও তো কৌশল। রাজ্যসভায় বিজেপি সংখ্যালঘু বলেই তো শরিককে পদ দেওয়া হয়েছে। যাতে নবীনের মতো এনডিএর বাইরের দলকেও সঙ্গে পাওয়া যায়।