অমিত শাহ। ফাইল চিত্র।
সংবেদনশীল, কঠোর প্রশাসক, যথার্থ রাষ্ট্রনায়ক, নির্ভীক সেনাপতি— প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে লেখা একটি বই প্রকাশ করতে গিয়ে আজ এই ভাষাতেই তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নম্বর-টু অমিত শাহ। এমন একটা সময়ে মোদী সম্পর্কে অমিতের এই প্রশংসা উড়ে এল, যখন
দু’দিন আগে জেএনইউয়ে দুষ্কৃতী তাণ্ডব ঘিরে গোটা দেশ ক্ষোভে ফুটছে। সেই ক্ষোভ বেড়েছে বিষয়টি নিয়ে মোদী বা অমিত মুখ না খোলায় এবং অপরাধীরা ধরা না পড়ায়। অভিযোগ, সঙ্ঘের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র বিরুদ্ধে তাণ্ডবের অভিযোগ ওঠাতেই চুপ মোদী-শাহ।
এ দিন মোদীকে নিয়ে প্রকাশিত বইটির নাম, ‘কর্মযোদ্ধা’। বইয়ে অমিত শাহ, নিতিন গডকড়ী, স্মৃতি ইরানিদের লেখা আছে মোদীকে নিয়ে। এ দিনের অনুষ্ঠানেও জেএনইউ নিয়ে অমিত কোনও মন্তব্য করেননি। তবে সঙ্ঘের বাকি লোকেরা চুপ থাকেননি। যেমন রমেশ পতঙ্গে বললেন, ‘‘দেশে এখন বিচারধারার লড়াই চলছে। আসল ও নকল ভারতের। আমরা এখন রণক্ষেত্রে আছি। এর বিরুদ্ধেই লড়তে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহকে।’’ দিলীপ করঙ্গবেলকরের মতে, ‘‘ঘটনা যে ভাবে সাজানো হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে যেন ভারতে আগুন জ্বলছে। আসলে তা নয়। প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার নামে অরাজকতা চলছে। এর বিরুদ্ধে (মোদীর মতো) একজন কর্মযোদ্ধাই লড়তে পারেন।’’
সবই শুনলেন অমিত শাহ। তার পর আগাগোড়া মোদীর জয়গান গাইলেন। বললেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী একজন সংবেদনশীল ব্যক্তি, দক্ষ সংগঠক ও কঠোর প্রশাসক, যথার্থ রাষ্ট্রনায়ক, নির্ভীক সেনাপতি। ছোটবেলা থেকে দারিদ্র, অপমান, অভাব সহ্য করেও তিনি উদার। সমর্থ রামদাস এক সময় বলেছিলেন, তিনিই রাজা, যিনি ‘উপভোগশূন্য স্বামী’। আজকের দিনে মোদীই তার আদর্শ নজির। ক্ষমতায় থেকেও নিজের জন্য কিছু করেননি। চাণক্য নীতির সূত্র মেনে তিনি এমন রাজা, যিনি প্রথম সেবক।’’
দেশজোড়া তুমুল রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক বেহাল দশার মাঝে তাঁর এত মোদী-স্তুতি নিয়ে বিতর্ক হতে পারে আঁচ পেয়েই বোধহয় অমিত বলে রাখলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ না জানলে তাঁর জীবন বোঝা যাবে না। কটাক্ষ সহ্য সাহস আছে তাঁর মধ্যে। ২০০১-২০২০ পর্যন্ত তাঁর রাজনৈতিক জীবনে অনেক কঠিন সময় এসেছে, দাঙ্গার সামনে পড়েও সমান ভাবে উন্নয়ন করেছেন। তাঁর গুজরাত মডেলের জোরেই জননায়ক হয়েছেন। এখন কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসে সংবিধানের পরিধিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো শক্ত করেছেন, বিশ্বে দেশের নাম করেছেন।’’
অমিতের এ দিনের প্রতিটি শব্দ নিয়েই সরব বিরোধীরা। তাঁদের কটাক্ষ, মোদী এত সংবেদনশীল যে আলিগড়-জামিয়া-জেএনইউয়ে এমন তাণ্ডব দেখেও চুপ? এমন কঠোর প্রশাসক যে, কোনও ঘটনাতেই দোষীরা সাজা পাওয়া তো দূর, ধরাও পড়ে না? এই প্রসঙ্গে অমিত শাহকেও নিশানা করছেন তাঁরা।