মোদীর শুধুই বিজ্ঞাপন, তোপ অভিষেকের

বাদল অধিবেশন যতই এগোচ্ছে, ততই কেন্দ্রবিরোধী সুর চড়াচ্ছে তৃণমূল। কেন্দ্রের ‘বিমাতৃসুলভ’ মনোভাব নিয়ে গত সপ্তাহেই নরেন্দ্র মোদীর কাছে ক্ষোভ জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লি ছাড়ার আগে দলের সাংসদদের প্রতি তাঁর নির্দেশ, কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিষয়টি সংসদে অগ্রাধিকার দিয়ে তুলে ধরতে হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৬ ০৩:২৬
Share:

বাদল অধিবেশন যতই এগোচ্ছে, ততই কেন্দ্রবিরোধী সুর চড়াচ্ছে তৃণমূল।

Advertisement

কেন্দ্রের ‘বিমাতৃসুলভ’ মনোভাব নিয়ে গত সপ্তাহেই নরেন্দ্র মোদীর কাছে ক্ষোভ জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লি ছাড়ার আগে দলের সাংসদদের প্রতি তাঁর নির্দেশ, কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিষয়টি সংসদে অগ্রাধিকার দিয়ে তুলে ধরতে হবে। সেই পরামর্শ মেনেই আজ লোকসভায় অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ নিয়ে আলোচনায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

আক্রমণের শুরুতেই তিনি সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো বা কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের বিষয়টি বেছে নেন। তাঁর কথায়, সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার নামে সব ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে নিতে চাইছে মোদী সরকার। এই সরকারের আমলে ৩৯টি কেন্দ্রীয় প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, অর্থ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে ৫৮টি প্রকল্পে। প্রকল্প চালানোর দায় রাজ্যের ঘাড়ে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। সহযোগিতার স্লোগান দিয়ে রাজ্যগুলিকে দাবিয়ে রাখতে চাইছে কেন্দ্র।

Advertisement

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যত বারই এনডিএ সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, তত বারই পশ্চিমবঙ্গের ঋণের বোঝা কমানোর জন্য সরব হয়েছেন তিনি। আজ কেন্দ্রের দায়বদ্ধতার প্রশ্ন তুলে অভিষেক বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের উপরে প্রায় ৩ লক্ষ কোটি, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্যের মাথায় ২ লক্ষ কোটি টাকার বেশি ঋণ রয়েছে। রাজ্যগুলির এই সেই ঋণ মেটাতে কেন্দ্রকে আজ পর্যন্ত একটি পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এটাই কি সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার নমুনা?’’

তবে ঋণের বোঝা, কেন্দ্রীয় সাহায্যের অভাবের মধ্যেও আর্থিক ক্ষেত্রে রাজ্যের সার্বিক অগ্রগতি যে কেন্দ্রীয় গড়ের তুলনায় বেশি, তা-ও তুলে ধরেন অভিষেক। তৃণমূল সাংসদের যুক্তি, রাজ্যে মূল্যবৃদ্ধির হার জাতীয় গড়ের তুলনায় কম। আর গোটা দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার যখন ৭.৩ শতাংশ, পশ্চিমবঙ্গের বৃদ্ধি ১২.০২ শতাংশ। তাঁর দাবি, ‘‘একশো দিনের কাজের প্রকল্পে দেশে গড়ে ৩৪ দিন কাজ হয়েছে। অথচ পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ্য হল, বছরে অন্তত ১০০ দিনের কাজের ব্যবস্থা করা।’’ মোদী সরকারের ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ প্রকল্পে মাত্র ৭৫ কোটি টাকা খরচকে কটাক্ষ করে অভিষেকের মন্তব্য, ‘‘ওই একই রকমের প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গ সরকার হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করছে।’’ গীতাঞ্জলি, সবার ঘরে আলো বা সবুজ সাথীর মতো প্রকল্পগুলি কী ভাবে রাজ্যের মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনেছে, তা-ও সংসদে জানান তিনি। তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘কেন্দ্র ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার মতো কাজ করছে। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কেবল প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। স্লোগান উঠছে, হইচই হচ্ছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।’’

পরে অভিষেকের দাবি নিয়ে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানিয়ে দেন, কেন্দ্রের পক্ষে পশ্চিমবঙ্গের মকুব করা সম্ভব নয়। তাঁর কথায়, ‘‘আয়ের চেয়ে খরচ বেশি হলে পরবর্তী প্রজন্মকে তার দায় নিতে হয়। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এটাই হয়েছে।’’ জেটলির মন্তব্য, ‘‘যতটা শোধ দেওয়া সম্ভব ততটাই ধার করা উচিত। আগের ঋণ কাউকে তো মেটাতে হবে। কেন্দ্রের পক্ষে ঋণ মকুব সম্ভব নয়।’’ জেটলির বিরোধিতা করে সুগত বসু বলেন, ধারের বোঝা থাকলেও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যয় করতেই হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement