ধলা এবং শদিয়ার মধ্যে সংযোগকারী সেতুর নাম দেওয়া হল ভূপেন হাজরিকা সেতু— ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।
তিন নদী লোহিত, নোয়া ডিহিং আর কুন্ডিলের মিলনে তৈরি ধলা নদী, যা আরও ৪ কিলোমিটার দূরে দিবাং ও সিয়াং নদীর সঙ্গে মিলে নাম নেবে ব্রহ্মপুত্র। সেই ধলার উপরেই ভারতের ‘মহাসেতু’র উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেতুর নাম দেওয়া হল ‘ভূপেন হাজরিকা সেতু’— সে ঘোষণায় আরও খুশি অসমবাসী।
২,০৫৬ কোটি টাকা খরচ করে, ৩০ হাজার টন ইস্পাতে তৈরি হয়েছে ৯.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু। উজানি অসমের সঙ্গে অরুণাচলের দূরত্ব ১৬৫ কিলোমিটার কমিয়ে দিল এই ব্রিজ। অবশ্য মহাসেতুর উদ্বোধনের দিনই কেন্দ্রীয় পরিবহণমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী ঘোষণা করেছেন, ধলা-শদিয়া সেতুর ‘দীর্ঘতম’ তকমাটি একেবারে সাময়িক। কারণ, ৪০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ধুবুরি থেকে মেঘালয় পর্যন্ত ব্যয়ে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর কাজ হাতে নিচ্ছে কেন্দ্র।
ধলা এবং শদিয়ার মাঝে তৈরি হওয়া এই সেতু উজান অসমের সঙ্গে অরুণাচলের যোগাযোগ অনেক সহজ করে তুলল। ছবি: সংগৃহীত।
ধলা থেকে শদিয়া। দুটোই উজানি অসমের তিনসুকিয়ার মধ্যে পড়ে। কিন্তু ফেরির জন্য অপেক্ষা করে এপার থেকে ওপারে পৌঁছতে কমপক্ষে ঘণ্টা চারেক সময় লেগে যেত এত দিন। সেতু তৈরি হওয়ায় ধলা শদিয়ার মধ্যে দূরত্ব কিছু মিনিটে নেমে এল। শুধু অসমের মানুষের জন্য নয়, অরুণাচলবাসীর জন্যও খুব বড় সুখবর এই সেতুর উদ্বোধন। শদিয়া তো বটেই রোয়িং, মিপি, আনদ্রালা, আনিনির লোকজনকেও চিকিৎসা বা বিভিন্ন প্রয়োজনে ফেরি পার করেই যাতায়াত করতে হত। বর্ষায়, বন্যায় বন্ধ থাকত ফেরি। বিকেল সাড়ে চারটের পরে আর পারাপার করা যেত না। উজানি অসম থেকে অরুণাচল যাওয়ার জন্য এত দিন তেজপুর আর নগাঁও-এর মধ্যে সংযোগকারী কলিয়াভোমরা সেতু ছাড়া আর কোনও সেতু ছিল না। ফলে সেনাবাহিনীরও সমস্যা হচ্ছিল। ২০১১ সালে কাজ শুরু করে মাত্র ৬ বছরের শেষ হওয়া নতুন সেতুর সৌজন্যে সেনাবাহিনী এবার অনেক কম সময়ে এবং অনায়াসে কনভয় আর ৬০ টনের ব্যাটল ট্যাঙ্ক নিয়ে চিন সীমান্তে পৌঁছতে পারবে। ৩৬ ঘণ্টা সময় বাঁচবে। দু’পাশের অ্যাপ্রোচ রোডের দৈর্ঘ্য ধরলে প্রায় সাড়ে ২৮ কিলোমিটারের এই সেতুর সুবাদে অসমের রূপাই থেকে অরুণাচলের রোয়িং-এর দূরত্ব প্রায় পাঁচ ঘণ্টা কমল। সরকারি হিসেব বলছে, দিনে ১০ লক্ষ টাকার জ্বালানি তেল বাঁচবে।
আরও পড়ুন: অশান্ত মায়ানমার, ভারতে শরণার্থীরা
শুক্রবার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেতুর উপর থেকেই হাত নাড়েন বহু দূরে লোহিতপারে দাঁড়ানো গ্রামবাসীদের উদ্দেশে। ছিলেন কেন্দ্রীয় পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী, অসমের রাজ্যপাল বনোয়ারীলাল পুরোহিত, মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল।