অমিত শাহ ও নিত্যানন্দ রাই। ফাইল চিত্র।
গোটা দেশে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) হচ্ছে কি না তা লিখিত প্রশ্ন করে সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন তৃণমূলের প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ একাধিক সাংসদ। আজ সেই প্রশ্নের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রায় জানান, ‘‘গোটা দেশে ‘এখন পর্যন্ত’ এনআরসি করার প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার।’’
আজ সরকারের ওই উত্তরকে কেন্দ্র করে প্রবল জল্পনা শুরু হয় দিল্লির রাজনৈতিক অলিন্দে। গত অধিবেশনে নয়া নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) পাশ হওয়ার পরেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে দাবি করেছিলেন, সিএএ-র পর এ বার অসমের ধাঁচে এনআরসি হবে গোটা দেশে। সরকারের যুক্তি ছিল, দেশ জুড়ে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতেই এনআরসি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বস্তুত সিএএ পাশ হওয়া এবং অমিত শাহের দেশ জুড়ে এনআরসি করার সিদ্ধান্ত জানানোর পরেই বিরোধিতায় পথে নামেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। গত দেড় মাস ধরে যা চালু রয়েছে।
তাই আজ সরকারের ওই জবাব শুনে প্রশ্ন ওঠে তা হলে কি জনআন্দোলন দেখে সরকার পিছিয়ে গেল? প্রত্যাহার করে নিল নিজের সিদ্ধান্ত? অমিত শাহ না নিত্যানন্দ রায়— মন্ত্রকের বড় মন্ত্রী না ছোট মন্ত্রী কে সত্যি বলছেন, তা স্পষ্ট করার দাবি তোলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
এই পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্র ও শাসক শিবির অবশ্য ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছে। দুই শিবিরেরই বক্তব্য, দেশব্যাপী এনআরসি করার প্রশ্নে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ‘এখন পর্যন্ত’ তা নীতিগত পর্যায়ে রয়েছে। প্রশাসনিক ভাবে তা কার্যকর হয়নি। সে কথাই বোঝাতে চেয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘আজ সিদ্ধান্ত হয়নি বলে আগামিকাল ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না এমন তো বলা হয়নি। সরকার চাইলে যে কোনও দিন এ বিষয়ে প্রশাসনিক স্তরে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’’ আর তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘‘এটা কথার খেলা ছাড়া আর কিছু নয়।’’
পাশাপাশি, আজ লোকসভায় জাতীয় জনগণনা পঞ্জি (এনপিআর) সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে নিত্যানন্দ জানান, এনপিআরে তথ্য দেওয়ার সময়ে তার প্রমাণস্বরূপ কোনও কাগজ দেখাতে হবে না। আধার নম্বর দেওয়াও বাধ্যতামূলক নয়। এনপিআর গণনাকর্মীরা প্রতিটি বাড়ি গিয়ে সেই বাড়ির সদস্যদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করবেন। যার জন্য কোনও কাগজ জমা দিতে হবে না বা দেখাতে হবে না।
এনআরসির প্রথম ধাপ হল এনপিআর— এমনটাই মনে করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পিনারাই বিজয়নের মতো বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীরা। তাই পশ্চিমবঙ্গ, কেরল এবং একাধিক কংগ্রেস-শাসিত রাজ্য ইতিমধ্যেই এনপিআর করা হবে না বলে বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করেছে।
বিরোধীদের অভিযোগ, এনপিআরের মাধ্যমে প্রথমে সন্দেহজনক নাগরিকদের তালিকা তৈরি করে তার পর তাঁদের ডিটেনশন শিবিরে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে মোদী সরকারের। বিরোধীদের সেই অভিযোগ খারিজ করে আজ নিত্যানন্দ বলেন, ‘‘কোনও ব্যক্তির নাগরিকত্ব সন্দেহজনক কিনা সেই সংক্রান্ত কোনও পরীক্ষা এনপিআর-এর সময়ে করা হবে না। নিজের ও পরিবার সম্বন্ধে মৌখিক ভাবে তথ্য দিলেই হবে।’’
সরকারের দাবি, এনপিআরে তথ্য দেওয়া আবশ্যিক নয়। কেউ না-চাইলে তথ্য না-ও দিতে পারেন। অন্য দিকে নিয়ম বলছে, তথ্য দেওয়ার শেষে হলফনামা দিয়ে প্রত্যেক ব্যক্তিকে মেনে নিতে হবে যে, তিনি যে তথ্য দিলেন তা সঠিক। অমিত শাহ সম্প্রতি একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে বলেন, কারও কাছে আধার থাকলে তিনি সেই নম্বর দেবেন না কেন?
এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। হলফনামা দিয়ে তথ্য গোপন করা বা ভুল তথ্য দেওয়ার অপরাধে কি তখন সেই ব্যক্তির শাস্তি হবে? বিরোধীদের একাংশের ধারণা যাঁরা তথ্য গোপন করবেন বা ইচ্ছে করে আধার নম্বর বা অন্য তথ্য দেবেন না, তাঁদের সন্দেহজনক নাগরিকের তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পরবর্তী সময়ে তাঁদের নাগরিকত্ব খতিয়ে দেখতে তদন্তে নামবে কেন্দ্র।
এনপিআর প্রশ্নে মমতা-বিজয়নের আপত্তি প্রসঙ্গে নিত্যানন্দ আজ দাবি করেন, ‘‘রাজ্যগুলিকে বোঝানোর কাজ চালু রয়েছে।’’