রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যা এবং জেএনইউ-কাণ্ডের পরে উগ্র জাতীয়তাবাদকে মূলধন করে আক্রমণাত্মক লাইন নিয়েছিল বিজেপি। সেই লাইনে এ বার ধীরে ধীরে বদল আনতে তৎপর হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি অস্ত্র করতে চান অরুণ জেটলির ‘জনদরদী’ বাজেটকে।
এই অবস্থায় রাশ টানা হচ্ছে স্মৃতি ইরানির। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁকে বলেছেন, সংসদে আক্রমণাত্মক যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। তাকে আর দীর্ঘায়িত করার দরকার নেই। লোকসভায় মায়াবতীর সঙ্গেও চাপানউতোর হয়েছিল স্মৃতির। উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটে বিএসপি নেত্রীকে দরকার হতে পারে, এ কথা মাথায় রেখে তাঁকে আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্মৃতিকে। মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর দেখাদেখি বিভিন্ন রাজ্যে বহু নেতাই জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিলেন। তাঁদেরও সংযত হতে বলা হয়েছে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজই জেএনইউ প্রসঙ্গে যাদবপুরের আন্দোলনকে ‘ক্লোজড চ্যাপ্টার’ বলে উল্লেখ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। তাঁর কথায়, ‘‘যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। পড়ুয়াদের ভাল করে পড়াশোনা করতে দিন।’’ অথচ সম্প্রতি কলকাতায় এসে মোদী যাদবপুর নিয়ে সক্রিয় হওয়ার পরামর্শই দিয়েছিলেন রাজ্যপালকে। কেশরীর এ দিনের মন্তব্য কেন্দ্রের বদলে যাওয়া অবস্থানের প্রতিফলন বলেই অনেকের মত।
কিন্তু বিজেপি পথ পাল্টাচ্ছে কেন? দলের এক শীর্ষ নেতা বললেন, ‘‘প্রথমে মনে হয়েছিল জেএনইউ নিয়ে আক্রমণে গেলে ফায়দা হবে। কিন্তু ক্রমশ দেখা গেল এতে কংগ্রেস ও বামপন্থীরাই প্রচার পেতে শুরু করেছে।’’ আজও সংসদে জেএনইউ প্রসঙ্গ তুলে খোদ প্রধানমন্ত্রীকে এক হাত নিয়েছেন রাহুল গাঁধী। বলেছেন, ‘‘পারস্পরিক সম্পর্ক ধ্বংস করে প্রধানমন্ত্রী জাতীয়তাবাদের ধ্বজা তুলতে পারেন না।’’ বিজেপি নেতা অরুণ শৌরির মতে, সমালোচনার এই সুযোগটা দিয়ে কংগ্রেস ও কমিউনিস্টদের বাঁচিয়ে তোলা হচ্ছে।
আসলে গোড়ায় বিজেপির মনে হয়েছিল, জেএনইউ-কে ঘিরে সুর চড়ালে যে মেরুকরণ হবে, আগামী বিধানসভা ভোটগুলিতে, বিশেষত উত্তরপ্রদেশে, তার ফায়দা মিলবে। বাজপেয়ী আমলে দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না। ফলে উগ্র জাতীয়তাবাদ প্রচার করা যায়নি। কিন্তু এখন আরএসএসের ডিএনএ অনুসরণ করে আক্রমণাত্মক হওয়া যেতেই পারে। তাই অরুণ জেটলি, রবিশঙ্কররা ঘোষণা করেছিলেন, ‘‘আমরা সন্ত্রাসবাদ ও দেশাত্মবোধের প্রশ্নে সহিষ্ণু হতে পারছি না।’’
কিন্তু নাগরিক সমাজ ও সংবাদমাধ্যমের প্রচার, এমনকী ভিন্ দেশে প্রতিক্রিয়া দেখে বিজেপি নেতারা বুঝতে পারছেন, এ বার পিছু হটার সময় এসেছে। তবে তাঁরা যে পিছু হঠছেন সেই ধারণার জন্ম দেওয়াটাও রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তার কাজ হবে না। তাই ধীরে ধীরে বাজেটকে হাতিয়ার করে ‘মোদী সরকার গরিবের সরকার’ এই প্রচার তাঁরা তুলে ধরতে চান। ঠিক যেমনটা করেছিলেন ইন্দিরা গাঁধী।
বিজেপির রণকৌশলে এ এক নিঃশব্দ রূপান্তর পর্ব।