প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসে সংসদে সনিয়া গাঁধীকে কটাক্ষ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বলেছিলেন, ‘আপনাদের ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প আমি কোনও দিন বন্ধ করব না। কারণ, স্বাধীনতার ৬০ বছর পরেও আপনারা যে মানুষকে গর্ত খুঁড়তে পাঠিয়েছিলেন, ওটা তার প্রমাণ।’
ঠেকায় পড়ে সেই ১০০ দিনের কাজই এখন মোদীর প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠছে। গ্রামের মানুষের হাতে টাকার জোগান বাড়াতে এখন ওই প্রকল্প (এনআরইজিএ)-তেই রেকর্ড পরিমাণ বরাদ্দ করতে চলেছে তাঁর সরকার। এই প্রকল্পে এত বরাদ্দ মনমোহন সিংহের জমানাতেও কোনও দিন হয়নি।
এমনিতেই পরপর দু’বছর শুখা মরসুমের জেরে গ্রামের অর্থনীতিতে ভাটা পড়েছে। মানুষের হাতে খরচ করার মতো টাকা নেই। ভাল বর্ষা হওয়ায় এ বছর ফসলও ভাল হবে, এমনটাই আশা ছিল। কিন্তু নোট বাতিলের জেরে চাষিদের হাতে রবি ফসল বোনার জন্য বীজ-সারের টাকা নেই। যারা খারিফের ধান ঘরে তুলেছেন, তাঁদের বেচতে সমস্যা হচ্ছে। ক্রমেই অসন্তোষের পারদ চড়ছে। তাই ক্ষোভ কমাতে ও গ্রামের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বরাদ্দ বাড়তে চলেছে ১০০ দিনের কাজে।
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘চলতি অর্থ বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ১৫১ কোটি কর্মদিবস তৈরি হয়েছিল। কিন্তু নভেম্বর মাস থেকে হঠাৎ কাজের চাহিদাও বেড়েছে। সেটা নোট বাতিলের কারণে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে কাজের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক আরও ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে।’’
চলতি অর্থ বছরে বাজেট পেশ করার সময়ে এই খাতে ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। এর পরে প্রথম বাড়তি ব্যয় বরাদ্দের সময়ে দেন আরও ৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, জেটলি আগামিকাল লোকসভায় বাড়তি ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব পেশ করবেন। সেখানেই আরও ৪ হাজার কোটি টাকা ১০০ দিনের কাজে বরাদ্দ হতে পারে। যার অর্থ, সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছরে এই প্রকল্পে বরাদ্দের অঙ্কটা ৪৭ হাজার কোটি টাকা ছুঁতে চলেছে। ইউপিএ আমলেও কোনও বছর এত বরাদ্দ হয়নি।
শুধু বাড়তি অর্থ জোগানো নয়। এই প্রকল্পে মজুরি পেতে দেরি হওয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে ধমক খাওয়ার পরে এ দিকেও নজর দিচ্ছে সরকার। নিয়ম অনুযায়ী, মজুরি ১৫ দিনের মধ্যে মিটিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু হিসেব বলছে, নভেম্বরের আগে পর্যন্ত অর্ধেকের বেশি মজুরিই সময়ে মেটানো হয়নি। গ্রামের মানুষের মন জয় করতে অর্থ বছরের বাকি সময়টা ঠিক সময়ে মজুরি মেটানোর বন্দোবস্ত করতে চাইছে মোদী সরকার।