গোলি... প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতে রাইফেল হাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার লখনউয়ে। এপি
আমদানি নয়, রফতানি। প্রতিরক্ষা সামগ্রী তৈরিতে ভারতের পুরনো ছবি বদলে দেওয়ার কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার লখনউয়ে একাদশ প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীর উদ্বোধন করে জানিয়ে দিলেন, আগামী পাঁচ বছরে ভারত থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ হাজার কোটি টাকা করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে ভারত।
অস্ত্র নির্মাণ-সহ অন্যান্য প্রতিরক্ষা সামগ্রী তৈরির জন্য তামিলনাড়ু ও উত্তরপ্রদেশে দু’টি হাব তৈরি করছে সরকার। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্প’কে সামনে রেখে বিশ্বের অস্ত্র প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিকে এখানে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমেরিকা, রাশিয়া, ইজ়রায়েলের মতো দেশগুলি থেকে বিশ্বের যে ক’টি দেশ অস্ত্র আমদানি করে থাকে, তার মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে ভারত। বিনিয়োগকারীদের ভারতে প্রতিরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে মোদী বলেন, ‘‘বিনিয়োগ করলে আপনাদের মুনাফা মিলবে প্রচুর। পাশাপাশি অস্ত্রশস্ত্র তৈরিতে ভারতও স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে।’’ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও বিনিয়োগকারীদের সামনে তাঁর ব্যাখ্যা, ২০১৪ সালে ভারত থেকে ২০০০ কোটি টাকার প্রতিরক্ষা সামগ্রী রফতানি হত। গত দু’বছরে সেই অঙ্ক ১৭০০০ কেটি টাকায় পৌছেছে। আগামী পাঁচ বছরে ভারতের লক্ষ্য, ৩৫০০০ কোটি টাকা।
ভারতকে অস্ত্র রফতানিকারক দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য থাকলেও কোনও দেশকে নিশানা করে এ সব করা হচ্ছে না বলে দাবি করেন মোদী। তাঁর যুক্তি, ভারতের মতো এত বড় দেশ শুধু রফতানির উপর নির্ভর করে বসে থাকতে পারে না। ভারতে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে লাইসেন্সপ্রাপকদের সংখ্যাও কয়েক বছরে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে বলে তথ্য হাজির করেন মোদী। জানান, কামান, এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার, যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন, লাইট কমব্যাট এয়ারক্র্যাফ্ট, কমব্যাট হেলিকপ্টার এখন ভারতে তৈরি হচ্ছে।
মোদী বলেন, ‘‘প্রতিরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনে ভারতের সম্ভাবনা অসীম। কারণ, এ দেশে প্রতিভা ও প্রযুক্তি রয়েছে। পরিকাঠামোর পাশাপাশি রয়েছে উদ্ভাবনী ক্ষমতা। এ ছাড়া, সরকারের নীতি বিনিয়োগকারীদের লাভের পথ দেখাবে।’’ ভারতের ব্যাপক চাহিদা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার কথাও বিনিয়োগকারীদের সামনে তুলে ধরেন মোদী। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ জানান, উত্তরপ্রদেশ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ৩ লক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হতে চলেছে।
তবে প্রতিরক্ষা প্রদর্শনী ঘিরে বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। কারণ, প্রদর্শনীর পোস্টারে তুরস্কের তৈরি দুই আসন বিশিষ্ট একটি হেলিকপ্টারকে দেখা যাচ্ছে। সূত্রের মতে, কপ্টারটি অগুস্তা ওয়েস্টল্যান্ডের সঙ্গে যৌথ ভাবে পাক বায়ুসেনার জন্য তৈরি করেছে তুরস্কের এরোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ। এ ছাড়া, প্রদর্শনীতে আসা বিদেশি অভ্যাগতদের জন্য নির্ধারিত তাঁবুতেও চরম অব্যবস্থার অভিযোগ উঠেছে। ৩৫টি দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী, ৫৪টি দেশের সামরিক প্রধান ও প্রথম সারির অস্ত্র প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির প্রতিনিধিরা পৌঁছেছেন লখনউয়ে। এত হোটেলের ব্যবস্থা না থাকায় শহরের উপকণ্ঠে অস্থায়ী আবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে অনেক প্রতিনিধির জন্য। সেই তাঁবুগুলির কোথাও অস্থায়ী বাথরুমের মেঝে থেকে বেরিয়ে পড়েছে পেরেক, কোথাও আবার মিলছে না গরম জল।