মোদীর মন্তব্য গিললেন জেটলি, বিতর্কে হেগড়ে

কাল কুলভূষণ যাদব নিয়ে সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানকে বিঁধতে চায় কংগ্রেস। কিন্তু পাক-যোগসাজস নিয়ে গুজরাতের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী যে অভিযোগ করেছিলেন, তা প্রত্যাহারের শর্ত দেয় কংগ্রেস।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:০৩
Share:

নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন শিমলার রাস্তায় আয়েস করে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছেন, তখন সংসদে তাঁর মন্তব্য গিলতে হল সিনিয়র মন্ত্রী অরুণ জেটলিকে। গুজরাত প্রচারে পাকিস্তানের সঙ্গে যোগসাজস নিয়ে মনমোহন সিংহ ও হামিদ আনসারিকে দাগা প্রধানমন্ত্রীর তোপ কার্যত ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হল সরকার। সে বিবাদ মিটতে না মিটতেই বিরোধীদের হাতে নতুন অস্ত্র এল সংবিধান নিয়ে মোদীরই আর এক মন্ত্রী অনন্তকুমার হেগড়ের মন্তব্য।

Advertisement

কাল কুলভূষণ যাদব নিয়ে সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানকে বিঁধতে চায় কংগ্রেস। কিন্তু পাক-যোগসাজস নিয়ে গুজরাতের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী যে অভিযোগ করেছিলেন, তা প্রত্যাহারের শর্ত দেয় কংগ্রেস। চাপের মুখে আজ জেটলি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় দেশের প্রতি মনমোহন সিংহ কিংবা হামিদ আনসারির দায়বদ্ধতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন তুলতে চাননি। এমন ধারণা করাটাই ভুল। দেশের প্রতি এই নেতাদের দায়বদ্ধতায় অগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে আমাদের।’’ জেটলির কথা শুনে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদও জানিয়ে দেন, ভোটের সময় প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করে এমন কোনও মন্তব্য থেকেও তাঁরা দূরত্ব বজায় রাখছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর হয়ে জেটলির এমন ঢোক গেলাকেই নতুন অস্ত্র করলেন রাহুল গাঁধী। জেটলিকে কটাক্ষ করে টুইটে বললেন, ‘প্রিয় মিস্টার জেট-লাই, ভারতকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ যে প্রধানমন্ত্রী যা বলেন, কখনও তা সঠিক অর্থে বলেন না এবং যা সঠিক অর্থ করেন তা বলেন না।’

এই বিবাদ মিটলেও মন্ত্রী অনন্তকুমার হেগড়ের মন্তব্য নিয়ে তুলকালাম হল সংসদ। ক’দিন আগে কর্নাটকের এই বিজেপি নেতা সংবিধানের ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটিই মুছে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘যাঁরা নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ বলেন, তাঁদের বাবা মায়ের ঠিক নেই! সংবিধান বদলে দিতেই ক্ষমতায় এসেছি আমরা।’’ সংসদের দুই সভাতেই ক্ষিপ্ত কংগ্রেস করে বলে, সংবিধানের নামে শপথ নিয়েও যে মন্ত্রীর সংবিধানে ভরসা নেই, তাঁকে অবিলম্বে সরাতে হবে। অথবা তিনি ক্ষমা চান। হেগড়ের ক্ষমা না-চাওয়া পর্যন্ত লোকসভায় বিল নিয়ে আলোচনায় অংশ নেবেন না বলে জানান তৃণমূলের সৌগত রায়।

Advertisement

কর্নাটক ভোটের আগে হেগড়ের এমন মন্তব্যে যে বিজেপি নেতৃত্বের প্রচ্ছন্ন সায় রয়েছে, তা দলের নেতাদের কথাতেই স্পষ্ট। বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি মোর্চার প্রধান অমিত মালবীয় বলেন, ‘‘অতীতে একশো বারের বেশি সংবিধান সংশোধন হয়েছে। জরুরি অবস্থার ঐতিহ্যধারী কংগ্রেস সংবিধানের প্রতি কতটা আন্তরিক, তা স্পষ্ট। অম্বেডকরকে লোকসভা থেকে বাইরে রাখতে চেয়েছিলেন নেহরু। তাঁকে ‘ভারতরত্ন’ও দেয়নি কংগ্রেস।’’ হেগড়ের প্রতি বিজেপির এই নরম মনোভাবের কারণেই রাজ্যসভায় সংসদীয় প্রতিমন্ত্রী বিজয় গয়াল তাঁর মন্তব্য থেকে দূরত্ব বজায় রেখে হাত ধুয়েছেন। লোকসভায় সংসদীয় মন্ত্রী অনন্ত কুমার তো উল্টে কংগ্রেসকেই আক্রমণ করেছেন।

মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যে প্রজাতন্ত্র দিবসের সরকারি বিজ্ঞাপনে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ও ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দ দু’টি বাদ দেওয়া হয়েছিল। ভুল স্বীকারের বদলে সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে এই শব্দ বাদ দেওয়া নিয়ে বিতর্ক দাবি করেছিলেন আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন— আজ হেগড়ে যা বলেছেন, সে’টি বিজেপি নেতৃত্বেরই কথা। ফলে এ বিষয়ে তাদের রেয়াত করা হবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement