কোর গ্রুপের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার দিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
উগ্র জাতীয়তাবাদী মতাদর্শকে মদত দেওয়ার জন্য বিজেপি যখন সমালোচনার মুখে, তখন দলের ‘কোর গ্রুপ’ বৈঠকে জাতীয়তাবাদী বার্তাই দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর মতে, বিজেপির মতাদর্শের ভিত্তি জাতীয়তাবাদ। জাতীয়তাবাদী মতাদর্শেরই কথা বলেই বিপুল ভোটে জিতে ২০১৪-এ ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি। আর এই জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারার প্রচার ও প্রসার বিজেপিকে ফের ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করবে।
কেন্দ্রে মোদী সরকার অর্ধেক সময় পার করে ফেলেছে। এখন থেকেই লোকসভার প্রস্তুতি ধীরে ধীরে নিতে শুরু করে দিয়েছে দল। তার পাশাপাশি, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন তো রয়েইছে। এই পরিস্থিতিতে আজ সব রাজ্য থেকে আসা দলের শীর্ষ নেতাকে নিয়ে দিল্লিতে বৈঠক করেন মোদী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।
জাতীয়তাবাদের পাশাপাশি উন্নয়নকেও হাতিয়ার করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। ফের মসনদ দখল করার মন্ত্র হিসেবে আজকের বৈঠকে তিনটি পথ বাতলে দিয়েছেন তিনি। এক, দলের জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের ভিত্তিটি শক্তপোক্ত করে রাখা। দুই, তফসিলি জাতি, উপজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি-সহ দেশের পিছিয়ে পড়া মানুষদের কাছে পৌঁছনো। এবং তিন, কেন্দ্রীয় সরকার যে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প আনছে, সেগুলো প্রতিটি কোনায় প্রান্তে পৌঁছে দেওয়া। গত কয়েক মাস ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দলিত-নিগ্রহ নিয়ে বিজেপি সরকারকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। আর আজ মোদী বলেন, ‘‘আমাদের দলের ৮০ শতাংশ কর্মীই পিছিয়ে পড়া শ্রেণি থেকে আসেন। সেই কথাটা আমাদের সব সময়ে মনে রাখতে হবে।’’
লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের সময় তৎকালীন মনমোহন সিংহ সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি। এখন উল্টে বিরোধীরা কথায় কথায় উঠতে বসতে সরকারকে নাস্তানাবুদ করার চেষ্টা করে। পান থেকে চুন খসলে রে-রে করে ওঠে। এই পরিস্থিতিতে ফের ক্ষমতায় আসতে গেলে কাজের মূল্যায়নের ভিত্তিতেই যে মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে, সেই কথাটাই আজ জোর দিয়ে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
মোদীর কথায়, ‘‘দেশের মধ্যে সব থেকে বেশি সাংসদ, সব থেকে বেশি বিধায়ক আমাদের। দলের প্রত্যেকটি নেতা-কর্মীকে চেষ্টা করতে হবে, কী ভাবে সব শ্রেণির মানুষের কাছে পৌঁছনো যায়। কী ভাবে কেন্দ্রের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প দেশের শেষ পংক্তির মানুষটির কাছেও পৌঁছে দেওয়া যায়।’’ দলের সংগঠন কতটা মজবুত, মানুষের মধ্যে বিজেপির প্রচার ও সরকারের কাজ কতটা পৌঁছচ্ছে, তার উপরে ফের দিল্লি দখল অনেকটাই নির্ভর করছে, মন্তব্য করেন মোদী। বহু দশক আগে তৈরি কোর গ্রুপকে ফের চাঙ্গা করতে আজকের এই বৈঠকে মোদী, অমিত শাহ ছাড়াও ছিলেন দলের প্রায় ৩০০ নেতা।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে সভাপতি দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিংহ, শমীক ভট্টাচার্য, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়রা বৈঠকে ছিলেন। রাজ্যের আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়েও দলের নেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁদের। বৈঠকের পর দলের নেতা অনন্ত কুমার বলেন, ‘‘কোন পথে আমাদের এগোতে হবে, বলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মানুষের কাছে গিয়ে, তাঁদের সঙ্গে মিশে, তাঁদের আস্থা অর্জন করতে হবে।’’